জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি প্রায় তিন বছর ধরে ঝুলছে। সর্বশেষ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির ব্যয় নিয়ে আপত্তি তোলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ব্যয় নিয়ে আরেক দফা আপত্তি ওঠে।
দুই দফা আপত্তিতে প্রকল্প কমানো হয়েছে প্রায় ৪৭২ কোটি টাকা। সম্প্রতি প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
যদিও ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠায় তা খতিয়ে দেখছে এডিবি। এ নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি শেয়ার বিজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর আগেও প্রকল্পটির উচ্চ ব্যয় নিয়ে শেয়ার বিজে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রকল্পটির ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) পাঠানো হলে কয়েকটি খাতের ব্যয় নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। সেগুলো কাটছাঁট করার পর প্রকল্প ব্যয় কমে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ১৬১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এতে ব্যয় কমে ২২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায়ও ব্যয় নিয়ে আপত্তি উঠে। দ্বিতীয় দফা সেগুলো কাটছাঁট করা হয়েছে। এতে ব্যয় কমেছে ২৪৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ফলে দুই দফায় ব্যয় কমানো হয়েছে ৪৭১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
যদিও ২০১৮ সালে চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে এখনও প্রায় আড়াই কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জিটুজি ভিত্তিতে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণ করতে চেয়েছিল। এজন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সঙ্গে দরকষাকষিও চূড়ান্ত করা হয়। তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে ঘুষ সাধার অভিযোগে চায়না হারবারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর বিকল্প অর্থায়ন খোঁজা শুরু হলে ২০১৯ সালে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে এডিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
চীনের অর্থায়নের চেয়ে বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বেশি হওয়ার বেশকিছু কারণও ডিপিপিতে তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জিটুজি পদ্ধতিতে ২০১৭ সালে বাস্তবায়নের জন্য পূর্ত কাজের সব প্যাকেজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছয় বছরমেয়াদি পারফরম্যান্স বেইজড মেইনটেইন্যান্স ও প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ছয় বছরমেয়াদি পারফরম্যান্স বেইজড মেইনটেইন্যান্স ও প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টসহ প্রায় ১৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর কারণ হলোÑপ্রথমত, জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের পূর্ত কাজের ব্যয় প্রাক্কলন কর হয়েছিল সওজ রেট শিডিউল ২০১৫ অনুযায়ী। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পে সওজ রেট শিডিউল ২০১৯-এর ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য মূল মহাসড়কের উভয় পাশে তিন দশমিক ৬০ মিটারের সার্ভিস লেন রাখা হয়েছিল। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পে সাড়ে পাঁচ মিটারের সার্ভিস লেন রাখা হয়েছে। তৃতীয়ত, অবকাঠামোগত কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চতুর্থত, মহাসড়কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬০/৭০ গ্রেডের বিটুমিনের পরিবর্তে উন্নত মানের পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি প্রথাগত বেস টাইপ-১ এর পরিবর্তে ওয়েট মিক্সড ম্যাকাডাম অন্তর্ভুক্ত করে ডিজাইন করা হয়েছে।
যদিও ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণব্যয় সমজাতীয় অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে বেশি। প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ছাড়া ঢাকা-সিলেট চার লেন (সাসেক-৩) নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৫৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ৭৯ কোটি এক লাখ টাকা।
এদিকে এলেঙ্গা থেকে হাটিকামরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার (সাসেক-২) চার লেন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ৬৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর জয়দেবপুর থেকে চন্দ্রা, টাঙ্গাইল হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার (সাসেক-১) চার লেন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ৬২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা-সিলেট রুটে ২০৯ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত ছাড়াও উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া পুরো চার লেনের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সরলীকরণ করা হবে, যাতে ৮০ কিলোমিটার গতিতে যান চলাচল করতে পারে। এছাড়া প্রকল্পটির আওতায় ৩২১টি কালভার্ট, ৭০টি ছোট-মাঝারি সেতু, পাঁচটি রেল ওভারপাস, চারটি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস ও ৪২টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ১৩টি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। আর ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে এডিবি ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ২৪৪ কেটি ৬৯ লাখ টাকা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন