আল জাজিরার রিপোর্ট তাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে - তথ্যমন্ত্রী

জিবি নিউজ ডেস্ক ।।

‘আল জাজিরার সাম্প্রতিক রিপোর্ট তাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, বাংলাদেশে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচণ্ডভাবে লোপ পেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, বিশ্বব্যাপী তাদের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্‌মুদ।       

আজ সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আল জাজিরার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে যে, ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ রিপোর্টটি দেয়ার পর তারা বাংলাদেশে প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে, তাদের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচণ্ডভাবে লোপ পেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।’       

আল জাজিরায় যে রিপোর্টটি করা হয়েছে, সেটির শিরোনামের সাথে রিপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রিপোর্টের শিরোনাম দিয়েছে ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ আর ভেতরের প্রতিবেদনটি হচ্ছে সেনাপ্রধান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এবং প্রতিবেদনটা দেখেশুনে মনে হয়েছে এটি ব্যক্তিগত আক্রোশবশত, ‘এনিমোসিটি’বশত। আল জাজিরার মতো একটা টেলিভিশনে এই ব্যক্তিগত আক্রোশবশত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আল জাজিরার গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে কমেছে এবং বিশ্বব্যাপী আল জাজিরার নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা এবং তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্টিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’       

অবশ্য আল জাজিরা নিয়ে এই প্রশ্ন আজকে যে প্রথমবার উঠেছে তা নয়, এ প্রশ্ন বহুবার বহুদেশে উঠেছে, আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ আছে, এমনকি ভারতেও বন্ধ করা হয়েছিল, এখনও অনেক দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে, জানান ড. হাছান মাহ্‌মুদ।       দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়নি -এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন আমরা তো ব্যবস্থা নিতে পারতাম। অন্যদেশে যেভাবে বন্ধ করা হয় আমাদের দেশে চাইলেই সেভাবে বন্ধ করতে পারতাম, কিন্তু আমরা তা করিনি। কারণ আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু অবাধ স্বাধীনতার পাশাপাশি সমস্ত গণমাধ্যমেরও নিজস্ব দায়িত্ব থাকে। আল জাজিরা এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বশীলতা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একটি পক্ষ হয়ে কাজ করেছে এবং আমরা যতটুকু শুনেছি সম্ভবত এটির সাথে আরো বহুপক্ষ যুক্ত আছে। সেনাপ্রধানকে টার্গেট করে সরকারের সমালোচনা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে অথচ রিপোর্টের সাথে সরকারের বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’       আর সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি, কিন্তু কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি আদালতে যায় সেক্ষেত্রে আদালত থেকে যদি কোনো নির্দেশনা পাই তাহলে আদালতের নির্দেশনা অবশ্যই পালন করবো, জানান ড. হাছান।    -২-      প্রতিবেদন সহযোগীদের মধ্যে ডেভিড বার্গম্যান সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে বার্গম্যানের বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। পরে তিনি হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন এবং দেশত্যাগ করে চলে গেছেন। আল জাজিরার রিপোর্টে একসময় বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ‘ইসলামী ক্লার্জি’ বা ‘ইসলামী বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ডেভিড বার্গম্যান তাদের পক্ষ নিয়েছিল। আর সেখানে যে মূল বক্তা মিস্টার সামি, তার আরো অনেকগুলো নাম আছে। তার ফিরিস্তি আগে আমি জানতাম না, রিপোর্ট হওয়ার পরে সব ফিরিস্তি বেরিয়েছে- কখন তার পিতা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন, কখন তিনি চুরিতে ধরা পড়েছেন। এ ধরনের লোককে নিয়ে যখন রিপোর্ট তৈরি করা হয়, তখন গণমাধ্যমেরই ক্ষতি হয়।’       বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ‘আল জাজিরা রিপোর্টের পর দিল্লির সাথে সরকারের যোগাযোগ বেড়েছে’ এ মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রিজভী সাহেব মাঝে মধ্যে কিছু উদ্ভট কথাবার্তা বলেন, এটিও তার চিরাচরিত বিভিন্ন উদ্ভট কথার একটি। আমাদের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক বহুদিনের এবং ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। ভারতের সাথে আমাদের সবসময় সুসম্পর্ক এবং বর্তমান ভারত সরকারের সাথে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আল জাজিরার একটি রিপোর্টে যেভাবে তারা নাচানাচি করছে এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। এটি নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই।’      তথ্যমন্ত্রী এসময় তাঁর সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কলকাতায় তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘আ ডটার্স টেল’ দেখে মানুষের অশ্রু বিসর্জন, কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রায় ১৫ লাখ বাঙালির সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ স্মরণে একইস্থানে সমাবেশে যোগদান ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ভারতীয়দের সম্মাননা প্রদান, কিংবদন্তী সঙ্গীত প্রতিভা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সাথে সাক্ষাৎ, মুম্বাইয়ের ফিল্মসিটিতে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের স্যুটিং পরিদর্শন কার্যক্রম সংক্ষেপে তুলে ধরেন।       প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চিরন্তন গান ‘বঙ্গবন্ধু, ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি/ আজ ঘরে ঘরে এতো খুশি তাই/ কি ভালো তোমাকে বাসি আমরা/ বলো কি করে বোঝাই’ বাজিয়ে শোনালে সভাকক্ষে এক তন্ময় আবেশ তৈরি হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন