জিবি নিউজ || লন্ডন ||
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি,,
ভাষা সৈনিকদের প্রতি ভালবাসা জানাতে লন্ডনে বসবাসকারী সায়কা এবং জেসিকা বাসায় তৈরি করেছেন শহীদ মিনার।
প্রায় দুই মাস যাবত লন্ডন চলছে দ্বিতীয় লক-ডাউন। লক-ডাউনের বিধি-নিষেধ থাকার করনে কেউ বাহিরে গিয়ে কোন আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পারবে না।
এই কথা মাথায় রেখেই ১৪ বছর বয়সী সায়কা মোহাম্মেদ এবং ছয় বছর বয়সী জেসিকা মোহাম্মেদ সবার নজর কাড়লেন তাদের অসাধারণ বুদ্ধিমতার পরিচয় দিয়ে।
প্রবাসে বেড়ে উঠা এ সকল বাচ্চাদের দেশের প্রতি তাদের ভালবাসা দেখে আমরা সত্যিই অভিভূত!
জিবি নিউজ প্রতিনিধি তার মায়ের সাথে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে, তিনি আমাদের কে তাদের সন্তানদের এই যে, দেশের প্রতি যে ভালবাসা তা তুলে ধরেন।
তার মা মিফাতুল নূর আমাদের কে জানান, তিনি তার বাচ্চাদের কে নিয়ে প্রতি বছরই শহীদ মিনারে ফুল দিতে যান। এ বছর তা আর সম্ভব হচ্ছে না লক-ডাউন এবং করোনা মহামারীর জন্য। তারা প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতাই বাসায় পালন করছেন। তিনি বাচ্চাদের শহীদ মিনার বানানো বিষয়টি বলতে গিয়ে জানান।
তিনি বাংলা কৃষ্টি-কালচারের সাথে জড়িত।
যখনই বাংলাদেশের কোন কৃষ্টি-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় তিনি তার বাচ্চাদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তারই ধারাবাহিকতা এ বছর করোনা মহামারীতে বাসায় পালন করেছেন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ, পহেলা ফাল্গুন, ভালবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
আমাদের প্রতিনিধি সায়কা এবং জেসিকাকে শহীদ মিনার বানানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে, তারা আমাদের কে জানানঃ-প্রতি বছরের মত এবারও তাদের মন চেয়ে ছিলো শহীদ মিনারে গিয়ে তারা ফুল দিয়ে শহীদদের কে স্মরণ করবে কিন্তু লক-ডাউনে যাওয়া সম্ভব নয়।
তাই তারা প্লান করলো বাসায় তারা শহীদ মিনার তৈরি করবে। সায়কা আর্ট সমন্ধে বেশ দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন।
এর আগেও সায়কা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী হোন চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় এবং প্রতিযোগিতা গুলোতে তিনি শহীদ মিনারই বেশী আর্ট করেছিলেন। অতএব, শহীদ মিনার সমন্ধে তার কিছুটা ধারনাও ভালো আছে।
সায়কা, জেসিকা তারা মাকে ব্যাপারটি শেয়ার করলো যে,
তারা শহীদ মিনার বাসায় বানাতে চায়। তার মা শুনে বেশ খুশী হয়ে রাজি হয়ে গেলো এবং তার মাও তাদের কে কিছুটা আইডিয়া দিলো সাথে সাহায্যও করলো।
তার মা একটি কাগজে বক্স, সাথে রং এবং ব্যবহারের সব কিছু এনে দিলো। শুরু হলো তাদের মিনার তৈরির কাজ।
২০শে ফেব্রুয়ারি তাদের মিনার তৈরির কাজ শেষ হলো।
বাবা-মা সবাই অনেক খুশী যে তাদের বাচ্চারা প্রবাসে জন্ম থেকে বেড়ে উঠার পরেও দেশের প্রতি তাদের এই ভালবাসা সত্যি অবাক করার মত। সায়কা কে নিয়ে তার বাবা-মা, পরিবার-পরিজন সবাই বেশ আশাবাদী থাকেন।
ছোট বয়সে, সায়কার প্রাপ্তির সংখ্যাও বেশ ভালো।
সায়কা বিভিন্ন বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় দেশ নিয়ে বক্তব্য রাখায় সুবাধে, সে বাংলার ইতিহাস জানেন এবং সায়কা আমাদের কে জানান, সে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়েছেন এবং জানেন। তিনি দেশের ইতিহাসের বক্তৃতা এবং রচনা প্রতিযোগিতায়ও অনেক বার প্রথম বিজয়ী হয়েছেন। সেই জানা এবং ভালবাসা থেকেই তার এই শহীদ মিনার তৈরি করা।
তার মা আমাদের কে জানান,সায়কা এবং জেসিকা রাত ১২টা পর্যন্ত জেগে অপেক্ষা করতে থাকেন কখন রাত বারোটা বাজবে? যখনই রাত বারোটা বেজে ২১শে ফেব্রুয়ারি হলো, সাথে সাথে একুশের গান গেয়ে তাদের তৈরি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে স্মরণ করেলেন ভাষা সৈনিকসহ সকল শহীদের প্রতি।
তাদের প্রতিটি কাজে তার মা তাদের কে উৎসাহ এবং সাপোর্ট দিয়ে যান। তারা মা চান তার বাচ্চারা বাঙালি কালচারটা ধরে রাখুক এবং সে তাদের নিয়ে ছোট বেলা থেকেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং কালচারাল প্রোগ্রামে একটিভ ছিলেন এবং তারই ধারাবাহিকতা বাচ্চাদের মধ্যে দেশের প্রতি ভালবাসা গড়ে উঠে।
সায়কাও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান এবং সে এখন নিয়মিত বাংলা ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সে আমাদের কে আরও জানান সে তার মায়ের মত বড় হয়েও বাংলা কমিউনিটির সাথে কাজ করতে চান।
সে তার পড়াশোনায় স্কুলে সুনাম রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সুনাম কুড়িয়েছেন। বর্তমানে ১৪ বছর বয়সী সায়কা লন্ডনের IONTV এর একজন নিয়মিত ইংলিশ নিউজ বুলেটিন এর উপস্থাপিকা হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আমরা সবাই চাই সায়কা, জেসিকার মত আমাদের প্রতিটি প্রবাসী বাচ্চারা আমাদের কৃষ্টি-কালচার জানোক, শিখুক এবং তারা জেনো সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে।
তবে বাচ্চাদেরকে আগ্রহী করে তুলতে প্রতিটি বাবা-মা কে নিজের সন্তানের পাশে থেকে সাপোর্ট দিতে হবে,আগ্রহী করে তুলতে হবে।
প্রতিটি ঘর জেনো হয় এক একটা বাংলাদেশ। সেই প্রতাশা রাখছি সকল বাবা-মায়ের প্রতি।
আবারও সকল শহীদের প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন