মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ থেকে: সুনামগঞ্জে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পাগলা বড় মসজিদ। এই মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ফুট ও প্রস্থ্য ২৫ফুট। মসজিদটিতে রয়েছে ৩টি বিশাল গম্বুজ ও ৬টি বড় মিনারসহ আরো রয়েছে ১২টি ছোট মিনার। এছাড়াও রয়েছে ১টি বারান্দা ও বিশাল ঈদগাহ ময়দান। মসজিদের বাহিরের তুলনায় ভিতরের দৃশ্য খুবই নান্দনিক। ফ্লোর ও চারপাশের কারুকার্য দেখে অনেকেই আশ্চর্য হয়ে যায়। পুরো মসজিদের চারপাশে তিনফুট উচ্চতায় যে নান্দনিক টাইলস লাগানো হয়েছে তা আনা হয়েছে ইতালি ও ইংল্যান্ড থেকে। মসজিদে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে ১টি গেইট। দৃষ্টিনন্দন দুতলা বিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির বাহিরের দৃশ্য দূর থেকে এক নজর দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আর মসজিদের ভিতরের স্থাপত্যশৈলী দেখলে আনন্দে ভড়ে উঠে মনপ্রাণ। তাই সুবিশাল এই মসজিদটি এক নজরে দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলার রায়পুর নামকস্থানে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এই পাগলা ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদ। এই মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগে ছিল প্রায় ১০বছর। আর নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে প্রধান কারিগর ছিলেন ভারতীয়। তবে পাগলা মসজিদটির মূল স্থপতি হলেন মুমিন আস্তাগার। তার পূর্বপুরুষ নির্মাণ করেছেন ভারতের ঐতিহাসিক তাজমহল। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ৫ই আশি^ন শুক্রবার পাগলা মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্থ্যর স্থাপন করা হয়। ভূমিকম্প নিরোধক মজবুত পাতের উপর মসজিদটি নির্মাণ করার ফলে এখনও পর্যন্ত ফাঠল ধরেনি। তবে প্রায় ৩০বছর আগে মসজিদটির গম্বুজের কিছু পাথর পরিবর্তন করা হয়েছিল। মসজিদটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে ইট,শে^তপাথর,রেলের ¯িøপার,কালো পাথরসহ আরো অনেক দূর্লভ উপকরণ। যা তাজমহল তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। আর এসব উপকরণ আনা হয়েছিল ভারতের জয়পুর থেকে। তবে ঐতিহ্যবাহী এই পাগলা মসজিদের মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইয়াসিন মির্জা ও তার ভাই ইউসুফ মির্জা। তারা দুজন ছিলেন খুবই বিত্তবান ও ধর্মপরায়ণ। এব্যাপারে পর্যটক সুমন হায়দার,শামীম আহমেদ,রাসেল হোসেন ও সাংবাদিক আল- হেলাল বলেন- পাগলা মসজিদটির নান্দনিক কাঠামো দেখে আমরা খুবই আনন্দিত। এত সুন্দর মসজিদ খুবই কম দেখা যায়। প্রচীন দৃষ্টিনন্দন এই নিদর্শনটি পর্যটকদের জন্য টিকিয়ে রাখা জরুরী। তাই শীগ্রই এই নান্দনিক মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া উচিত। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মী বলেন- নান্দনিক পাগলা মসজিদটি আমি দেখেছি। ধর্ম মন্ত্রণালয় চাইলে এই মসজিদটি প্রতœতাত্বিক অধিদপ্তরের আওতায় আনা সম্ভব হবে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন- কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে পাগলা বড় মসজিদটি। এটি আমাদের ইতিহাসের অংশ। তাই চেষ্টা করছি ঐতিহাসিক মসজিদটি প্রতœতাত্বিক অধিদপ্তরের আওতায় রাখার জন্য। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী পাগলা বড় মসজিদটি অযতœ ও অবহেলার মধ্যে রয়েছে। মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি সরকারি কোন উদ্যোগ। তাই কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকা শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই পাগলা বড় মসজিদ শীগ্রই প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীনে নেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন