জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
ধর্ষককে জেল এড়াতে ভুক্তভোগীকে বিয়ে করার পরামর্শ দেয়ার পর ভারতের প্রধান বিচারপতিঅরবিন্দ বোব্দের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে পাঁচ হাজারেও বেশি মানুষ এক পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে। খবর গার্ডিয়ানের।
সম্পর্কিত খবর
- অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের রায় বাংলায়: প্রধান বিচারপতি
- দেশে ধর্ম পালনে সবাই স্বাধীন: প্রধান বিচারপতি
- কারাগারে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা
খবরে বলা হয়, আদালতের শুনানিতে বিচারক অরবিন্দ বোব্দে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত এক সরকারি প্রযুক্তিবিদকে বলেন, ‘তুমি যদি তাকে (ভুক্তভোগী) বিবাহ করতে চাও তাহলে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারি। আর যদি বিয়ে না করতে চাও তাহলে তুমি চাকরি হারাবে এবং জেলে যাবে।’
তার এই মন্তব্য নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে অভিযোগকারী নারী, ২০১৪ থেকে ১৫ সালের মধ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনার যেসব ভয়ঙ্কর অভিযোগ এনেছেন, সেসময় তার বয়স ছিল ১৬। অভিযুক্ত ব্যক্তি তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। প্রধান বিচারপতি বোবড়েকে লেখা ওই চিঠির বর্ণনা অনুযায়ী, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মেয়েটির পিছু নিয়ে তাকে হয়রানি করে। তাকে বেঁধে রাখে। চিৎকার যাতে করতে না পারে এ জন্য তার মুখ কাপড় গুঁজে বন্ধ করে রাখে। এরপর অপ্রাপ্তবয়স্ক ওই স্কুলছাত্রীকে বারবার ধর্ষণ করে ও পেট্রল ঢেলে তার গায়ে আগুন দেবার ও তার ভাইকে খুন করার হুমকি দেয়‘।
এতে আরো বলা হয়, ‘ওই স্কুল শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ধর্ষণের ঘটনা প্রথম প্রকাশ পায়’।
মেয়েটির পরিবার আরো অভিযোগ করেছে যে তারা পুলিশে খবর না দেবার ব্যাপারে সম্মতি দেয়। কারণ অভিযুক্তের মা তাদের বলেছিল যে মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর ছেলেটির সাথে তারা মেয়েটির বিয়ে দেবে।
ভারতে ধর্ষণের ঘটনার জন্য প্রায়ই ধর্ষিতাকে দায়ী করা হয়ে থাকে এবং এ ধরনের যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে একটা মেয়ের জন্য সারা জীবনের কলঙ্ক হিসেবে দেখা হয়। ফলে মেয়েটির পরিবার ছেলেটির মায়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত পরে সেই প্রতিশ্রুতি মানতে অস্বীকার করে আরেকজনকে বিয়ে করার পর ধর্ষণের শিকার মেয়েটি পুলিশের কাছে যায়। অভিযুক্ত ব্যক্তি ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে সরকারি কর্মচারী। গ্রেফতার হলে তিনি চাকরি হারাবেন এই মর্মে নিম্ন আদালতে আবেদন জানালে তাকে জামিন দেয়া হয়। কিন্তু মুম্বাই হাইকোর্ট এই নির্দেশকে ‘ন্যক্কারজনক’ আখ্যা দিয়ে তার জামিন বাতিল করে।
এর পর ওই ব্যক্তি সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিমকোর্ট গত সোমবার তাকে চার সপ্তাহের জন্য গ্রেফতার না করার জন্য আদেশ দেয়। পাশাপাশি শুনানির সময় ওই ব্যক্তির আইনজীবী ও বিচারপতি বোবড়ের মধ্যে 'আলোড়ন সৃষ্টিকারী' কথোপকথন হয়।
খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ভারতের প্রথম সারির নারীবাদী ও বেসরকারি সংস্থাগুলো বিচারপতি বোবড়ের মন্তব্য বর্ণনা করার ক্ষেত্রে মুম্বাই হাইকোর্টে উচ্চারিত ‘ন্যক্কারজনক’ শব্দটি ব্যবহার করেছে।
খোলা চিঠিতে বলা হয়, অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়ের ধর্ষণের মামলা নিষ্পত্তিতে আপোষ হিসেবে আপনি বিয়ের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা ‘ন্যক্কারজনক’-এরও অধম এবং ধর্ষণের শিকার একজনের ন্যায় বিচারের অধিকার এতে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাকে বিয়ে করার এই প্রস্তাব দিয়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি- আপনি মেয়েটিকে একজন নির্যাতনকারী, যে তাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছিল, তার হাতে সারাজীবন ধর্ষণের জন্য তুলে দিচ্ছেন। ডিসেম্বর ২০১২ সালে দিল্লিতে একটি বাসে এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও পরে তার মৃত্যুর ঘটনায় ভারতে ধর্ষণ ও যৌন অপরাধের বিষয়টি বিশেষভাবে অলোচনার কেন্দ্রে আসে। এ নিয়ে ভারতজুড়ে প্রতিবাদ চলে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও ভারতে ধর্ষণের ঘটনা শিরোনাম হয়।
এর পর ধর্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিচারক ও সমাজের শীর্ষ ব্যক্তিদের মন্তব্য, বক্তব্য অনেক তীক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা শুরু হয়েছে দেশটিতে। সেই ধারাবাহিকতায় সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কারণ তার ওই মন্তব্যকে দেখা হচ্ছে মামলায় দু’পক্ষের মধ্যে ‘আপোষ মীমাংসা প্রচেষ্টা’ হিসেবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন