জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
উন্নত জীবনের আশায় ব্রিটেনে এসে স্থায়ী ভাবে থাকার জন্য অনেকেই এ্যাসাইলাম রেস করেছেন। কিন্তু এ্যাসাইলাম প্রার্থীদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা এবং কাজ সব মিলিয়ে এক অবর্ননীয় কস্ট যা ভাষায় বর্ননা করার মতো নয়। উন্নত জীবনের পরিবর্তে বেঁচে থাকাই যেখানে মূখ্য হয়ে উঠে। তাই এই কস্টের জীবন ছেড়ে হাজার হাজার এ্যাসাইলাম প্রার্থীরা ব্রিটেন ছেড়ে নিজ নিজ দেশে ফেরত যাচ্ছেন।
UNHCR এর স্টার্টিজ অনুযায়ী ২০১৯ সালে ১৩৩,০৯৪ জন এ্যাসাইলামের জন্য আবেদন করেছেন। ৬১,৯৬৮ জনের আবেদন যাছাই বাছাই করা হয়েছে। ৪৫,২০৩ জনের আবেদন গ্রহন করা হয়েছে। ১৬১ জন এ্যাসাইলাম আবেদন কারীর কোন দেশের পরিচয় নেই। এ পর্যন্ত ২৮৭,০০০ থেকে ৩০০,০০০ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হোম অফিস। তবে গত এক বছরে ২৯,৪৫৬ জনকে ব্রিটেন থাকার অনুমতি দিয়েছে হোম অফিস।
এ্যাসাইলামদের জন্য ব্রিটিশ সরকারের £১ বিলিয়ন পাউন্ডের বাজেট।এই বিশাল বাজেট থাকা স্বত্তেও এ্যাসাইলামদের সেবা দিতে ,থাকার জায়গার সংকট , খাবারের মান , মানবেতর জীবন সহ তাদের সুরক্ষা করতে ব্যার্থ হয়েছে হোম অফিস।
এ্যাসাইলাম আবেদনের ৬ মাসের মধ্যেই রেজাল্ট দেওয়ার কথা থাকলেও ১ বছর ২ বছর এমন কি বছরের পর বছর ও কোন সুরাহা না হওয়াতে তাদের জীবনে নেমে আসে অবর্ননীয় দূর্ভোগ। আর এ জন্যই হাজার হাজার এ্যাসাইলাম প্রার্থীরা ব্রিটেন ছাড়ছেন।
অন্যদিকে ব্রিটেনে যারা বৈধভাবে এসে আইনি জটিলতায়, সময়মত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দিতে পারায়, স্টুডেন হিসেবে এসে ঠিকমত লেখাপড়া না করা সহ বিভিন্ন কারনে আর বৈধকরন হতে পারেন নাই।দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিটেনে অসহায় ভাবে জীবনযাপন করছেন। অথচ তারা সবাই বৈধভাবে এসেছিলেন।আইনের প্যাচে ফেলে বৈধ করা হচ্ছে না।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি ডা. রোজেনা এলিন খান প্রশ্নোত্তর পর্বে অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চান। জবাবে অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী ভিক্টোরিয়া এটকিনস জানান, সরকার একটি অভিবাসন নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। এটি নিরাপদ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য দেশের মানুষদের ব্রিটেনে স্বাগত জানায়। একইসঙ্গে এটি অবৈধ অভিবাসনকে বাঁধা দেয়। সরকারের এমন আচরণে ব্যাপক সমালোচনা করে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা আদায়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন।
এমনই একটি সংগঠন ফোকাস অন লেবারি এক্সপ্লয়টেশন (ফ্লেক্স)। ওই সংগঠনে প্রধান নির্বাহী লুসিয়া গ্রান্ডাক বলেন, ব্রিটেনে বসবাস ও কাজের বৈধ অনুমোদনহীন মানুষকে সাধারণ ক্ষমা দিলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হতো। সরকারও লাভবান হবে।
সম্প্রতি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে অন্যান্য দেশের মতো ব্রিটিশ সরকার লকডাউনের ঘোষণা দেয়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে ওইসব অভিবাসী যাদের এদেশে বাস করার যথাযথ ডকুমেন্ট নাই।
এমপিদের অনুরোধের প্রেক্ষাপটে সরকারও মানবিক দিক বিবেচনা করে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে (এনএইচএস) নির্দেশ দিয়েছে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এদেশে বৈধভাবে আছে কিনা তা যাচাই না করতে।
ব্রিটেনে ডকুমেন্ট ছাড়া অভিবাসী, আশ্রয় প্রার্থী ও শরণার্থীদের অস্থায়ীভাবে দেশটিতে থাকার অনুমোতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে ২০টিরও বেশি চ্যারিটি ও চার্চের পুরোহিতরা।
সরকার সম্প্রতি তাদের জন্য ফ্রি চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে।এখন থেকে যে কোন জিপিতে গিয়ে নিজের নাম তালিকা ভুক্ত করে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিতে পারবেন।
এই আন ডকুমেন্ট অভিবাসীদের থাকার অনুমোতি দিলে শুধু তারাই উপকৃত হবে না, সরকারও উপকৃত হবে। কারন অভিবাসীদের অনেকে চিকিৎসা ও অন্যান্য কাজে অভিজ্ঞ। এছাড়া ওসব অভিবাসীরা দীর্ঘদিন এদেশে বাস করায় অন্যান্য কাজে পারদর্শী হয়ে উঠেছে ও এখানকার পরিবেশের সাথে মিশে গেছে। করোনাকালে ও পরবর্তী সময়ে সরকার তাদের কাজে লাগাতে পারে ।
এ বিষয়ে বরিস সরকারের এক মুখপাত্র গার্ডিয়ানকে জানান, আমরা স্পষ্ট করে বরতে চাই এদেশে বাস করছে এমন কারো করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে সরকার তাদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা সহায়তা দিবে। এবং যে কোন জিপিতে যেয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এক্ষেত্রে তাদের কোনো ধরনের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস পরীক্ষা করবে না। নাম রেজিস্ট্রির পর তারা ভ্যাকসিন দিতে পারবেন।
তবে কেউ যদি এদেশে স্থায়ীভাবে বাস করতে চায় তবে তাদের অবশ্যই আইনগতভাবে করতে হবে। কারো এদেশে আইনগতভাবে বাসের অধিকার না থাকলে তাদের জন্য সরকার পাবলিক ফান্ডের ব্যবস্থা করতে পারবে না। , ২০০০ সালে ‘ওভার স্টেয়ার রেগুলেশন ২০০০’ নামে আইন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীতিমালার মধ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ব্রিটেনে বসবাসের সুযোগ দিয়েছিল। তারপর জুলাই ২০০৬ সালে আটকে পড়া ৪ লাখ ৫০ হাজার ফাইলের ওপর ৫ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছিল, যা বহুলভাবে ‘লিগ্যাসি’ নামে পরিচিত।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন