জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
রাজশাহীর কাটাখালি কাপাশিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস ও সিএনজি অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১৭ জনের সবার বাড়িই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তারা পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাইক্রোবাসে পিকনিক করতে রাজশাহী যাচ্ছিলেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘রাজশাহীর কাটাখালিতে শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১৭ জন নিহত এবং দুই জন আহত হন।’
নিহতদের ১৬ জন হলেন- পীরগঞ্জ উপজেলার দারিকাপাড়া গ্রামের মোখলেছার রহমান, তার স্ত্রী পারভীন বেগম, ছেলে পাভেল। প্রজাপাড়া গ্রামের তাজুল ইসলাম ভুট্ট, তার স্ত্রী মুক্তা বেগম ও ছেলে ইয়ামিন। বড় মজিদপুর গ্রামের ফুল মিয়া, তার স্ত্রী নাজমা বেগম এবং দুই মেয়ে সুমাইয়া (৭) ও সাজিদ (৩)। রাজারামপুর গ্রামের সালাহ উদ্দিন, তার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেগম ও ছেলে সজিব মেয়ে সাবা ও শ্যালিকা কামরুন্নাহার বেগম। দরাকুঠি গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও মাইক্রোবাসের ড্রাইভার পচা।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে পীরগঞ্জের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ১৪ সিটের একটি হাইএক্স মাইক্রেবাস কিনে আনেন। শুক্রবার সকালে ৪টি পরিবারের সদস্যসহ ১৭ জন ওই মাইক্রোবাস ভাড়া করে রাজশাহীর পদ্মার পাড়ে পিকনিক করতে যাচ্ছিলেন। কাটাখালি কাপাশিয়া এলাকায় পৌঁছার পর তিনটি যানের সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১৭ জন।
পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ্র জানান, রাজশাহী থেকে তাকে ওয়ারলেস ম্যাসেজ করে দুর্ঘটনার খবর জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘নিহতদের স্বজনরা দুটি গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে গেছেন। মরদেহ নিয়ে রাতের মধ্যে তাদের ফেরার কথা রয়েছে। নিহতদের শনাক্তের জন্য ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। যাদের চেনা যাবে না তাদের ডিএনএ টেস্ট করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
এদিকে নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে পীরগঞ্জ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। কে কাকে স্বান্তনা দেবেন তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ।
মোর কিছু থাকিল নে, ও আল্লাহ তুই মোকে নিয়ে যা মোর ছৈলদেক ফিরি দিয়ে যা…। এসব কথা বলে আহাজারি করছিলেন বৃদ্ধা সাহিদা বেগম। তিনি শুক্রবার রাজশাহীর কাটাখালীতে মাইক্রোবাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ফুলু মিয়ার মা। সাহিদা বেগম শুধু ছেলে হারিয়েছেন তা নয়, হারিয়েছেন ছেলের বউ, এক নাতি ও দুই নাতনিকে।
তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে এরা আর নেই। তিনি বিলাপ করছেন আর বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন।
নিহত ফুলু মিয়ার ছোট ভাই সুজন মন্ডল বলেন, ‘আমার বড় ভাই ফুলু মিয়া পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে মোটর পার্টসের ব্যবসা করতেন। তার সঙ্গে ব্যবসা করতেন তাজুল করিম ভুট্র এবং মোখলেছার রহমান। তারা সবাই আজ সকাল ৬ টার দিকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে রাজশাহী যান। পদ্মার পাড়ে পিকনিক শেষে তাদের এক পীরের জিয়ারত করে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।’
নিহত তাজুল করিম ভুট্রর বড় ভাই জুয়েল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভাই আমাকে বলেছিলেন রাজশাহী যাব, একটু বাসাটা দেখিস। এরপর আজ সকালে আরো দুই ব্যবসায়ীসহ রাজশাহী যান। কিন্তু ভাই তো আর ফিরে এল না। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার স্ত্রী এবং একমাত্র আদরের ভাতিজাকেও আজ হারালাম।’
হায়দার আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘অনেক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে কিন্তু একসঙ্গে এলাকার এত মানুষের মৃত্যু আগে কখনো দেখিনি আমরা। একই পরিবারে সবাইর নিহত হওয়ার ঘটনা খুব কষ্টের।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন