জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
যে গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হতে পারে বলে একসময় বড়রকম আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা অন্তত আগামী ১০০ বছর ঘটবে না। আর তাই পৃথিবী আপাতত ‘নিরাপদ’ বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। ফলে মানুষ এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, অ্যাপোফিস গ্রহাণুটি আবিষ্কার হয়েছিল ২০০৪ সালে। পরে এটিকে পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক গ্রহাণু বলে চিহ্ণিত করেছিল নাসা। তাদের পূর্বাভাস ছিল, এই গ্রহাণু ২০২৯ সালে পৃথিবীকে ধাক্কা দেওয়ার মতো খুব কাছাকাছি চলে আসবে। এরপর আবার বলা হয়- এটা ২০৩৬ সালে ঘটতে পারে। পরে দুটি সংঘর্ষের আশঙ্কাই নাকচ করে দেওয়া হয়।
নাসা বলছে অন্তত ১০০ বছরের মধ্যে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অ্যাপোফিস গ্রহাণুর পৃথিবীকে ধাক্কা মারার আশঙ্কা নেই।
এরপর জানা যায়, ২০৬৮ সালে এই গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু এই গ্রহাণুর গতিপথ নতুনভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে নাসা এখন বলছে, অন্তত ১০০ বছরের জন্য এই ঝুঁকি কেটে গেছে।
এক বিবৃতিতে নাসার বিজ্ঞানী ডেভিড ফার্নোচ্চিয়া বলেছেন, ‘২০৬৮ সালে এই গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সাথে ধাক্কা লাগার যে আশঙ্কা ছিল, সেই সম্ভাবনা এখন নেই এবং আমাদের হিসাব নিকাশ অনুযায়ী আগামী অন্তত একশ বছরে এই গ্রহাণু তার গতিপথে সেই ঝুঁকির জায়গায় আসবে না।’
এই গ্রহাণুর নামকরণ হয়েছিল মিশরের এক প্রাচীন দেবতা অ্যাপোফিস-এর নামে। গ্রহাণু অ্যাপোফিস প্রস্থে ৩৪০ মিটার (১,১০০ ফুট) চওড়া এবং এর দৈর্ঘ্য ব্রিটেনের প্রায় তিনটি ফুটবল পিচের সমান।
এই গ্রহাণু গত ৫ মার্চ পৃথিবীর ১৭ মিলিয়ন কিলোমিটার (এক কোটি মাইল) দূরত্বের মধ্যে এসে পড়েছিল। জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা তখন এই গ্রহাণুর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার গতিপথ ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পান এবং রাডার যন্ত্র দিয়ে ধরা তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা ২০৬৮ সালে বা তার পরে এটি কোথা দিয়ে যাবে তা পুঙ্খানুপুঙ্ক্ষভাবে হিসাব করেন। এর ভিত্তিতেই তারা তাদের নতুন তথ্য উপাত্ত নিয়ে আশ্বস্ত হন।
ডেভিড ফার্নোচ্চিয়া বলেন, ‘আমি যখন কলেজ ছাড়ার পর গ্রহাণু নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই আমরা জানতাম অ্যাপোফিস পৃথিবীর জন্য খুবই বিপজ্জনক একটা গ্রহাণু। এটাকে এখন ঝুঁকির তালিকা থেকে বাদ দিতে পেরে আমরা স্বস্তিবোধ করছি।’
তিনি বলেন, যখন প্রথম জানা যায় এই গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ২০২৯ সালে ধেয়ে আসবে, তখন থেকে নাসা সিদ্ধান্ত নেয় যে ওই বছরে গ্রহাণুটি পৃথিবীর খুব কাছে এসে গেলে এর গতিবিধি এবং বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
অ্যাপোফিসের পৃথিবীর কাছাকাছি আসার যে কথা ফার্নোচ্চিয়া বলছেন- সেটা ঘটবে ১৩ এপ্রিল ২০২৯ সালে। ওই তারিখে এই গ্রহাণু পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৩২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে এসে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই দূরত্ব হল পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যকার দূরত্বের দশ ভাগের এক ভাগ। ওই দিন পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধ থেকে অর্থাৎ এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের কয়েকটি জায়গা থেকে অ্যাপোফিস গ্রহাণুটি দেখা যাবে। এর জন্য কোনো টেলিস্কোপ বা বায়নোকুলার প্রয়োজন হবে না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন