জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার পরিবার ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী শারমিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।
কী বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাকে ডাকা হয়েছিল, আসছি। কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তা দুদক কর্মকর্তারা বলবেন।’
সম্রাটের অবৈধ টাকায় তার নামে সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে কিনা এমন অভিযোগের বিষয়ে শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘সম্রাট ও আমিসহ পরিবারের সদস্যরা ষড়যন্ত্রের শিকার।’
তবে কারা ষড়যন্ত্র করছে, এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলায় দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত শারমিন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। । এর আগে সম্রাটের ভাই ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকেও একই অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এ জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বরে অবৈধভাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সংশিষ্টদের জিজ্ঞাবাদ করছেন। সম্রাটের আরো অবৈধ সম্পদ আছে কি না, তা খোঁজা হচ্ছে। সম্রাটকে যারা দুর্নীতি করতে সহায়তা করছে তাদেরও খোঁজা হবে।’
তবে সম্রাটের ভাই ও স্ত্রীর কাছে কী ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ৭ অগাস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে। ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে আরও দুটি মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে।
কারাগারে নেওয়ার দুদিন পর বুকে ব্যথা অনুভব করলে সম্রাটকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে চারদিন চিকিৎসা দিয়ে ১২ অক্টোবর আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয় সম্রাটকে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আফজালুর রহমান সে সময় জানিয়েছিলেন, ১৯৯৮ সালে সম্রাটের হৃদপিণ্ডের একটি ভাল্ভ ‘রিপ্লেস’ করা হয়েছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নতুন কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর ঢাকার জজ আদালত সম্রাটকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিল। সে অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর থেকে তাকে হেফাজতে পাওয়ার কথা ছিল দুদকের।
কিন্তু তার আগের দিন ‘বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট’ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সম্রাট। প্রথমে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
রমনা থানার অস্ত্র মামলায় গত বছরের ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। ক্যাসিনো চালানোর পাশাপাশি ‘চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মত অপকর্মের’ মাধ্যমে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়। এই মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সম্রাটের স্ত্রী ও ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো।
এ মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি পাওয়ার নয় মাস পর গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, আদালতের আদেশ নিয়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে, তাহলে পরে তাও করা হবে।
ঠিকাদার জিকে শামীমসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রায় ২০০ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়।
শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত ২১টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন- ঠিকাদার জি কে শামীম ও তার মা, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, কলাবাগান ক্লাবে সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার সুমা,কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, ব্যবসায়ী মো. সাহেদুল হক, এনআর গ্লোবালের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, গণপূর্তের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী জেসমীন পারভীন।
কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন। অপর সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন