জিবি নিউজ ।।
পূর্বাচল-দ্য ইস্টার্ন স্কাই এর উদ্দোগে ২৭শে মার্চ বিকেল সাড়ে তিনটায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করা হয়। স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পূর্বাচলের ফেইসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। আন্তর্জালের মাধ্যমে সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বাংলা ভাষাভাষী বহু মানুষ উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানটি সফল্ভাবে সঞ্চালনা করেন পূর্বাচলের সাধারণ সম্পাদক ডক্টর আনোয়ারুল হক।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অকুতোভয়ে হাসতে হাসতে জীবন দিয়ে গেছেন দেশের জন্যে, যে সব মা বোনেরা নিগৃহীত হয়েছেন পাকিস্তানী হানাদার আর দেশীয় রাজাকার আল বদরদের দ্বারা, অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁদের স্মরণ ও তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। তাঁদের আত্মত্যাগের জন্যেই আজ আমরা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি নয়তো আজও আমরা পরাধীন থেকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতাম। এই স্বাধীনতা বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে সারা বিশ্ব যখন আমাদের অগ্রযাত্রার দিকে অবাক তাকিয়ে রয়, আমাদের গর্ব হয়। অনেক প্রতিকূলতা ছিল, আজও আছে। এসব মোকাবেলা করেই আমরা এগিয়ে চলছি। সামনে রয়েছে অসীম পথ, সব বাধা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাবো অবিচল, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই আমাদের প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পূর্বাচলের সভাপতি ডক্টর নাজিয়া খানম ওবিই ডিএল তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের সাফল্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অতুলনীয় অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ, অকুতোভয় নেতৃত্ব ও আহ্বানে জেগে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত মানুষ। তাঁর ৭ই মার্চের অসাধারণ ভাষণ ছিল একটি ভূখণ্ডের নরনারীকে বাংলাদেশী জাতিতে পরিনত করার ভাষণ, আজ যা জাতিসংঘ স্বীকৃত পৃথিবীর একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণের মর্যাদায় মহিমান্বিত। এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি নিজেকে অলংকৃত করেছেন শ্রেষ্ঠ বাঙালীর স্থানে। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী একটি দেশের মূল্যায়নের সুযোগ এনে দেয়। পাকিস্তান সমর্থক আমেরিকার হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হেয় করে নবজাতক বাংলাদেশকে আখ্যা দিয়েছিলেন "International basket case". অনেকে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এই বলে যে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দু’দিনের বেশী টিকবে না। আজ অর্ধ শতাব্দীর অস্তিত্বে বাংলাদেশ এসব ভবিষ্যৎবাণীর অসারতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির হার আজ শুধু এশিয়াতেই নয় – সারাবিশ্বের আলোচ্য বিষয়।
আজকের পৃথিবীতে কোন দেশই আর বিচ্ছিন্ন নয়। তাই তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতায় দুষিত জলবায়ু ও পরিবেশের ক্রমাগত অবনতি রোধ, নারী নির্যাতন ও অসাম্য দূরীকরন, নারী শিক্ষা ও নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ, ব্রিটেন ও পৃথিবীর অন্য সব দেশ শীঘ্রই করোনাভাইরাস মুক্ত হবে এবং শান্তি, মৈত্রী ও প্রগতি বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে। সবশেষে তিনি বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, বিশ্ব প্রগতি ও বিশ্ব শান্তির বিজয় কামনা করেন।
সাংস্কৃতিক পর্বে বিভিন্ন শিল্পীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই প্রাণবন্ত। যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানটি খুব সাবলীল গতিতে এগিয়ে গেছে শুরু থেকে শেষ অব্দি। নাচ, গান, আবৃত্তি, যন্ত্রসঙ্গীত ও কথিকা পাঠে নেসমিনা পারভিন নরিন, আব্দুল হাদি ফায়সাল, ডক্টর রুখসানা সাফা, মাজুবা খান, কিম্বারলী খান, জিনাত মান্নান, সাফিনাজ পেইন, মোয়াজ্জেম হুসেইন, ফারহানা চৌধুরী, যারাহ চৌধুরী, ঊর্মিলা আফরোজ ও তামিম আনাম অংশ নেন। সবার প্রানবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি সুধী দর্শক স্রোতার কাছে বিশেষভাবে গ্রহনযোগ্য হয়েছে।
বরাবরের মত কিম্বারলীর নাচের প্রসংসা তো করতেই হয়। ওদিকে ফ্যামিলী ডান্স গ্রুপ নৃত্তের তরঙ্গের মা-মেয়ে (ফারহানা চৌধুরী ও যারাহ চৌধুরী) প্রযোজনা দিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা বহুল জনপ্রিয় "ধন ধান্য পুষ্প ভরা, আমাদেরই বসুন্ধরা" গানের অপরূপ এক কোরিওগ্রাফী। তবে ছেলে ফারিদ চৌধুরীর নিপুণ হাতের ছোঁয়া এতে জুগিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। সে একটি সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরী ও গানের মিউজিকের সাথে ফারহানার উচ্চারণকে এডিটিং এর মাধ্যমে এক ভিন্নতর আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। পূর্বাচলের সম্মানিত সদস্য আমাদের প্রিয় শিল্পী ডক্টর রুখসানা সাফা ও নেসমিনা পারভিন নরিন স্ব স্ব জায়গা থেকে মনমাতানো দেশাত্ববোধক গানের প্রশংসনীয় উপস্থাপনা করেছেন। রুখসানা সাফার কন্ঠে শুনতে পাই আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তাঁর নিজ কন্ঠে গাওয়া কয়েকটি গান।
পূর্বাচলের নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য জনাব এম ফরিদ আহমেদ-এর সমাপনী বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
মেহেদি কবির
প্রচার ও প্রসার বিষয়ক সম্পাদক
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন