মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধি ||
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল দল নিউইয়র্ক জেটস এর প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন লেবানিজ অভিবাসী রবার্ট সালেহ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মুসলিমকে ন্যাশনাল ফুটবল লীগে (এনএফএল)-এর কোচের দায়িত্ব পেলেন।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যে বেড়ে উঠা ছয় সন্তানের জনক সালেহর উক্ত দায়িত্ব লাভ যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটিতে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে বলে জানা গেছে। দেশটিতে বসবাসরত মুসলিমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। মিশিগানের ডিয়ারবর্ণ হলো সালেহর নিজের শহর। আর যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলমান ডিয়ারবর্ণেই বসবাস করেন। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসটা বেশি ওই শহরের মুসলমানদের।
এপি সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্বলাভের পর এক সংবাদ সম্মেলনে সালেহ বলেন, এই পর্যন্ত আমি আসলে একা আসিনি। এই পথে আমার সাথে অনেকেই হেঁটেছেন, যাদের ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।
কিন্তু অবাক হবার মতো বিষয় ফুটবল কোচ হিসেবে ইতিহাস গড়া সালেহ’র কিন্তু এ জগতে নাম লেখাবারই কথা ছিল না! নর্দার্ন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল টিমের স্টার্টার খেলোয়াড় সালেহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি এ জগতে আসেন মূলত সারা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়া ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর।
অবাক হচ্ছেন তো? অবাক হবারই বিষয়।নিশ্চয়ই ভাবছেন ওই ঘটনার সাথে সালেহ’র ফুটবলে আসার সম্পর্কটা কি!
নিউইয়র্ক এর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ওই বিল্ডিংয়ে ছিল দুটি টাওয়ার- উত্তর টাওয়ার এবং দক্ষিণ টাওয়ার। ওইদিন বিমান হামলার সময় দক্ষিণ টাওয়ারের ৬১ তলায় কর্মরত ছিলেন সালেহর বড় ভাই ডেভিড। সেখানকার হাজারো মানুষ হামলায় নিহত হলেও ডেভিড অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান। আর সেই ঘটনাই বদলে দেয় সালেহকে।
ইএসপিএন এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ওই ঘটনার সময় সালেহর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। তার বাবা স্যাম বলছিলেন- টিভিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে বসে যখন সালেহ হামলার প্রতিক্রিয়া দেখছিল তখন সে চুপ হয়ে গিয়েছিল। তার চোখেমুখে ছিল এই ভয় যে, সে তার ভাই ডেভিডকে হারাতে চলেছে।
সালেহ জানান, ওই ঘটনা তাকে নিজ অন্তরের ডাক শুনতে সাহায্য করেছিল। তিনি বুঝতে পারেন তিনি সত্যিকার অর্থে কি হতে চান, আর তা হলো- ফুটবল দলের কোচ। যেই ভাবা সেই কাজ। পরের বছরই (২০০২) সালেহ কলেজিয়েট পর্যায়ে কোচ হিসেবে কাজ করা শুরু করেন এবং ২০০৫ সালে এনএফএল এর টিম হিউস্টন টেক্সান তাকে নিয়োগ দেয়। আর নতুন দায়িত্ব পেয়ে সালেহ বলেছেন, কিছুটা সময় হয়তো লাগবে তবে যা কিছু করবো তা ভবিষ্যতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন