জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
জরুরি সেবা-খাতে নিয়োজিত কর্মীদের যাতায়াতে মুভমেন্ট পাস লাগবে না জানানো হয়েছিলো, তবুও পেশাগত দায়িত্বে পালনের সময় গণমাধ্যম-কর্মীদের নামে মামলা ও জরিমানা করেছে পুলিশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ‘মুভমেন্ট পাস’ উদ্বোধনের সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের সড়কে চলাফেরার জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ প্রয়োজন হবে না। তবে অন্য পেশার যারা প্রয়োজনে বাইরে বের হতে চান তাদের এই পাস নিতে হবে।’
আইজিপি বলেন, ‘সরকারি প্রজ্ঞাপনে সাংবাদিকসহ জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চলাফেরায় বাধা দেওয়া হয়নি। তাই সাংবাদিকদের এই পাস সংগ্রহ করতে হবে না।’
তাহলে পুলিশ কেনো নিয়ম ভাঙার অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের মামলা বা জরিমানা করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিধি-নিষেধের প্রথম দিনের পর দ্বিতীয় দিনেও পেশাগত দায়িত্বে বের হওয়া গণমাধ্যম-কর্মীরা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
লকডাউনের প্রথম দিনেই হয়রানির শিকার হন দৈনিক মানবজমিনের ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ। পেশাগত কাজে বের হয়ে মামলা হওয়ার বিষয়টি তিনি তার ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেন।
জীবন আহমেদ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘বুঝলাম না ডাক্তার ও সাংবাদিকদের গাড়িতে কেনো পুলিশ মামলা দিচ্ছে, এগুলো তো জরুরি সেবা। আমাকেও চার হাজার টাকার মামলা দিল। আমি পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছবি তুলতে আগারগাঁওয়ে পুলিশের চেকপোস্টের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ক্যামেরা বের করার আগেই আমাকে চার হাজার টাকার মামলা ধরিয়ে দেওয়া হলো।’
জীবন আহমেদ জানান, ‘আগারগাঁওয়ের রেডিও মোড়ের ওখানে ১৫-২০টি গাড়ি জটলা পাকানো ছিল। এটা দেখে আমি ছবি তুলতে গেছি। তখন ট্রাফিক পুলিশের একজন বললেন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেন। কিন্তু আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারিনি। তারপর গাড়ির কাগজ চাইলে দিলাম। কাগজ দেয়ার পর আমাকে চার হাজার টাকার মামলা দেয়। আমি বললাম, আমাকে এতো টাকার মামলা না দিলেও পারতেন।’
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর এলাকার ওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে যান ও জনচলাচলের ভিডিওচিত্র ধারণ করছিলেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইদ রিপন। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করছিলেন আনুমানিক ১০ থেকে ১২ পুলিশ সদস্য। এ সংবাদকর্মীর ভাষ্য, ভিডিও করতে করতে পুলিশের কাছাকাছি চলে গেলে সেখানে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি (মিরপুর বিভাগ) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন আমাকে বলেন, ‘ভিডিও করছেন, আপনি কে?’
তখন অন্য পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘স্যার এ তো সাংবাদিক। তার গলায় কার্ড আছে।’ জবাবে ডিসি মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘কিসের সাংবাদিক! কিসের ঢাকা পোস্ট! প্রেস ক্লাবের নিবন্ধন আছে?’
রিপনের অভিযোগ, ‘এসব বলার পর আমার হাত থেকে ডিসি মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। তিনি উল্টো আমার ভিডিও করা শুরু করেন। তারপর আমার মোবাইল নিয়ে গাড়িতে করে চলে যান ডিসি। গাড়িতে উঠে বলেন, ‘প্রেস ক্লাবের নিবন্ধনের কাগজপত্র নিয়ে এসে আমার অফিস থেকে মোবাইল নিয়ে যাবেন।’
বেলা ১১টার দিকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর ১টার দিকে মিরপুর ডিসি কার্যালয় থেকে সেটি ফেরত আনেন এই সাংবাদিক। তখন তার সঙ্গে মিরপুর বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আরেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিং বিডি ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক হাসিবুল ইসলাম।
ঘটনাটির বিষয়ে জানতে চাইলে আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘সেটা জেনে আপনি কী করবেন? ওরে নিয়ে ডিসি মিরপুরের অফিসে আসেন। ওকে নিয়ে আসেন, তখন ঘটনা সামনা-সামনি বলবো।’
এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএমপির মিরপুর জোনের ডিসি একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তিনি এটা কেনো করলেন বুঝতে পারছি না। তাছাড়া সাংবাদিকদের আটকে রাখা বা মোবাইল নেওয়ার কোনো নির্দেশনা ডিএমপি বা সরকার দেয়নি।’
এদিকে গত দুই দিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শাহবাগ ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় আরও বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জরুরি সেবা ও সাংবাদিকদের যে মুভমেন্ট পাস লাগে না সে বিষয়টি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা অনেকেই জানেন না। তাই তারা এমন আচরণ করছেন।
বুধবার দৈনিক ঢাকা টাইমসের রিপোর্টার আলামিন রাজুকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তাকে দীর্ঘক্ষণ পুলিশের জেরার মুখে ফাঁড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন