সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিংবদন্তী অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরী পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন।তিনি মারা যান। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ জানান, “কবরী লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। কিছুক্ষণ আগে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।”
৭১ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার ফুসফুসেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়।
গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ আসার পর থেকে কবরী হাসপাতালে ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভিনেত্রী, নির্মাতা ও সাবেক এমপির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
গত শতকের ষাটের দশকে সেলুলয়েডের পর্দায় আবির্ভূত হয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের মষ্টি মেয়ে হিসেবে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেওয়া কবরী পরের অর্ধশতকে দুই শতাধিক সিনেমায় আলো ছড়িয়েছেন। শীর্ষ পাঁচ ঢাকাই নায়কের অভিষেক ঘটেছে তার হাত ধরেই।
কিংবদন্তী এই অভিনেত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “কবরী ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মৃত্যু দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলা চলচ্চিত্রের বিকাশে তার অবদান মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।”
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেওয়া মিনা পালের (কবরীর পূর্ব নাম) শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে।
১৯৬৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে মিনা পাল থেকে কবরী হয়ে উঠেন তিনি।
দীর্ঘ তিন দশকের ক্যারিয়ারে 'নীল আকাশের নিচে', 'ময়নামতি', ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
অভিনেত্রী কবরী একাত্তরে কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সেখানে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। দেশে ফিরে পুরোপুরি চলচ্চিত্রে মনোনিবেশ করেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০৬ সালে ‘আয়না’ নামে চলচ্চিত্র পরিচালনার মধ্য দিয়ে নির্মাতা হিসেবে অভিষেক ঘটে কবরীর। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ হাত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা অসমাপ্ত রেখেই চলে গেলেন।
কবরী নিয়মিত লেখালেখি করতেন । তার লেখা স্মৃতিচারণমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ ২০১৭ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড (বিপিএল) থেকে প্রকাশিত হয় ।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন কবরী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন