দূষণ কমানোর মূল দায়িত্ব ধনী দেশগুলোর: প্রধানমন্ত্রী

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নের বিকল্প নেই, আর সেজন্য ধনী দেশগুলোকেই মুখ্য ভূমিকা নিতে হবে।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) রাতে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন আয়োজিত ভার্চুয়াল ক্লাইমেট সামিটে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। যদি একটি দেশ কার্বন নিঃসরণ করে তবে এতে প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং, প্রতিটি দেশকে এর বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করতে হবে। ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর উচিত বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ বন্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করা।

শেখ হাসিনা বলেন, নিচের দিকে ১০০টি দেশ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৈশ্বিক গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী, যেখানে জি-২০ দেশগুলো ৮০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।

বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে একটি কঠিন সময় পার করছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা গেছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবল থেকে আমাদের সবারর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ সময়ে কোভিড-১৯ মহামারির পরে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিটি দেশের জন্য এখন অনেক বড় হুমকি, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য।

ক্রমাগত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ানোর কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিই সব অনিষ্টের মূল। ক্রমাগত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানবজাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বন্ধে বাস্তব কিছু হয়নি। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাতসহ ঘন ঘন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এসব দুর্যোগের ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের উপর দিয়ে তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, গেল বছর বন্যায় বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ পানির নিচে নিমজ্জিত হয়। সুপার স্লাইকোন আম্পানসহ বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত করে। আর এসব কিছু হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গ্রিন হাউজ নিঃসরণকারী নয়, যদিও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সদস্য দেশগুলো উল্লেখযোগ্য নিঃসরণকারী নয়। তারপরও আমরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। প্রতিবছর চরম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগে বাংলাদেশ জিডিপির ২ শতাংশ হারাচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১ দশমিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষে সারা দেশে ৩০ মিলিয়ন গাছ লাগানোর কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণে বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করছে। যা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।

বাংলাদেশ ১২ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র এবং উপকূলে ২ লাখ হেক্টর উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়দুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সরকার ঘূর্ণিঝড় সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন