সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর করার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কমিশনার ইরফান সেলিম। জেল থেকে মুক্তি পেয়েই মায়ের কবর জিয়ারত করলেন ইরফান সেলিম।
আজ বুধবার (২৮ এপ্রিল) দীর্ঘ ছয় মাস কারাবাসের পর বিকেল সাড়ে ৫টার সময় তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ) থেকে মুক্তি দেয়া হয়। জেল থেকে মুক্তি পেয়েই ইরফান সেলিম প্রথমেই আজিমপুর কবরস্থানে মা গুলশান আরা সেলিমের কবর জিয়ারত করেন।
এ সময় তার পিতা ঢাকা ৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ, ডিএসসিসি'র ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী কামাল উদ্দিন কাবুল, ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোঃ আলমগীর, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মজনু মিয়াসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও স্থানিয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ । এরপর ইরফান সেলিম সেখান থেকে পুরান ঢাকার দেবীদাস ঘাট লেনের দাদার বাড়িতে চলে যান।
উল্লেখ্য, ইরফান সেলিম কারাগারে থাকা অবস্থায় তার মা গুলশান আরা সেলিম ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি'র ল্যাবএইড হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। মা গুলশান আরা সেলিমও ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর করার মামলায় গত ২৫ এপ্রিল ইরফান সেলিমকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে ইরফান সেলিমকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল থাকে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খানকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় হাইকোর্ট গত ১৮ মার্চ ইরফান সেলিমের জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৮ মার্চ ইরফান সেলিমের জামিন চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আবেনের ওপর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়। এ ছাড়া চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য ইরফান সেলিম আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন।
গতবছর ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার পর ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রসিংয়ে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়েছিল 'সংসদ সদস্য' স্টিকার লাগানো হাজী সেলিমের গাড়ি। ঘটনার সময় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম গাড়িতে ছিলেন না। তার ছেলে ইরফান ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। এরপর নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা মোটরসাইকেল থামান এবং নিজের পরিচয় দেন। এ সময় হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে দুজন ব্যক্তি নেমে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফকে মারধর করে।
একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। এ সময় ওয়াসিফের স্ত্রীকেও লাঞ্ছিত করা হয়। ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হয়ে গেলে সংসদ সদস্যের গাড়ি ফেলে মারধরকারীরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে গাড়ি ও মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ঘটনায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে গত বছর ২৬ অক্টোবর ধানমণ্ডি থানায় 'মারধর ও হত্যাচেষ্টা' মামলা করেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ।
ওই দিনই ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় ইরফান সেলিম ঢাকার আদালতে জামিনের আবেদন করলে ওই আদালত গত বছর ২৭ ডিসেম্বর তা খারিজ করে দেন। এরপর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন ইরফান সেলিম। হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন