তোরাব মিয়া, একজন মুক্তিযোদ্ধা

কাওসার পারভিন ll
কাজ করে খেতে পারোনা, ভিক্ষা করো কেন? মাগো, আত বাঙ্গা, মুক্তিয়ে বাঙ্গিলাইছইন, (বা হাত খানা তুলে দেখান) কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, মুক্তি না পাঞ্জাবী ভাঙছে? মুক্তিবাহিনী। কেন? তালিম দেওয়ার সময় " অনেক প্রশ্নোত্তরের পর মর্মার্থ  অনুধাবন করলাম যে, মুক্তিবাহিনির প্রশিক্ষণের সময় বন্দুক চালানো শিখতে গিয়ে বন্দুকের বাটের ধাক্কায় উনার বাঁ হাতের কনুই ছুটে যায়।

জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি যুদ্ধে গিয়েছিলেন? উত্তর, অয়। এবার আগ্রহ নিয়ে তাঁকে কাছে ডাকলাম এবং বসতে দিয়ে তাঁর জীবনের গল্প শুনলাম নাম- তোরাব মিয়া। পিতা - ছাতির আহমদ, গ্রাম - ইসলাম পুর, কামার চাক, রাজনগর উপজেলা। জানতে চাইলাম, যুদ্ধের সময় বয়স কত ছিল। মুছ, দাড়ি উঠছে এবং এক ছেলের বাবা। আন্দাজ করলাম বয়স ১৮/২০ হবে।আবার জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাবে যুদ্ধে গেলেন? দলে দলে লোকজন যুদ্ধে যাচ্ছে তখন তাকেও সাথে নিয়ে গেলো। মা বাবা অনেক কান্নকাটি করেছেন কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

যুদ্ধের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এখটা আকাশ বাতি জ্বালাইছে আর পুরা উইনিয়ন ফর অই গেছে। এখানে কি কোন বোমার কথা বলা হয়েছে, তা আমি বুঝতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, ক্ষেতো গরু লইয়া হালের নমুনা ধরিয়া পাঞ্জাবীদের গুলি করা হয়। সহজ সরল তোরাব মিয়া গুছিয়ে কথা বলতে পারেন  না। বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণে হাত ভেঙে যাওয়ায় তিনি আর বন্দুক হাতে নেননি ঠিক কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থেকে তাদের রান্না করে খাইয়েছেন এবং তাঁদের ফুটফরমাস খেটেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাথে শমসের নগর, মুন্সিবাজার সহ সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। করাইয়া হাওরের বীর কটুমিয়া তাদের দলে ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। ভাঙ্গা হাত নিয়ে তেমন কোন কাজ কাম করতে পারতেন না। মানুষের সাহায্য সহায়তা নিয়ে চলতে থাকে জীবন। এক সময় জায়গাজমি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমান। ১৩০০ দিরহাম বেতনে মেষ চড়ানোর কাজ নেন কুয়েতে। ৬/৭ বছর পর সেখান থেকেও দেশে ফিরতে হয় তাঁকে। ইতিমধ্যে স্ত্রীর ক্যন্সার ধরা পরায় বিদেশের কষ্টার্জিত সব শেষ হয়ে যায় স্ত্রীর চিকৎসায়। বর্তমানে তিনি চার ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলে মেয়েরা যার যার সংসার নিয়ে আলাদা থাকছে। তিনি এই ভাঙ্গা হাত নিয়ে দ্বারেদ্বারে ঘুরে যা পান দিন শেষে তা নিয়ে নিজের পেট চালান।

 জিজ্ঞেস করলাম কোনও ভাতা পান কি না? জানালেন , ৩ মাসে ১৫০০ টাকা পান বয়স্ক ভাতা হিসেবে। তোরাব মিয়া অস্ত্র ধরেননি সত্য কিন্তু দেশের জন্য তাঁর অবদান আমরা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারিনা। তাই তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এমনি কত-শত মুক্তিযোদ্ধা যে দেশের আনাচে কানাচে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরছে তার হিসাব আমরা রাখি ক'জন।

কাওসার পারভিন 
পি টি আই ইন্সট্রাক্টর,
মৌলভীবাজার

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন