মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী ||
কেন এত গজব আপতিত করছেন মহান রব এসম্পর্কে প্রথমেই যে কথা আসে সেটাই বলা হয়েছে পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে পৃথিবীতে জলে-স্থলে যত বিপর্যয়, বালা-মুসিবত, আজাব-গজব আসে, এসবই আমরা মানবজাতির হাতের কামাই, কৃতকর্মের ফল।
আমরাই এই গজব আনয়ন করেছি আমাদের কর্মের মাধ্যমে। আর হতাশার কারনে বলতে হয় আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। সেদিকেই লক্ষ করে আজকের এই লেখা কেননা আমরা দুচোখের সামনে মহাপ্রলয় আজাব আর গজব দেখেও নিজেদেরকে সংশোধন করছি না।
বরং এই আজাব আর গজব দেখেও না দেখার আর না বুঝার বান করে যেমন খুশি তেমনি প্রতিনিয়ত পাপের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছি। কেন এই দাম্ভিকতা কেন এই উদাসিনতা আমরা কি পূর্বের জাতি সমূহের কথা একবার জানিনি। আমাদের রব কি পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে তাদের ধ্বংসের কথা উল্লেখ করেন নি?
যেই গ্রন্থে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। তারপরও কেন আল্লাহর গজব আসে, আযাব আসে, বিপদ মসিবত আসে সেদিকে যদি আমরা একটু লক্ষ করি তাহলে কোরআন ও হাদীসের তথ্য অনুসারে ৭টি উল্লেখযোগ্য কারনে ৩০টি বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়াও আরো অনেক কারন রয়েছে।
তাই কিছুসময় ব্যয় করে সেগুলো আলোকপাত করছি যাতে আমরা সতর্ক হতে পারি এবং বেঁচে যেতে পারি আল্লাহর গজব থেকে।
প্রথমেই উল্লেখযোগ্য কারন গুলো নিয়ে আলোচনা করছি,
১। পাপের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া
মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। যেমনটি পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে।’ (সুরা ত্বাহা : ২৪)
নমরুদকে আল্লাহ তাআলা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে। অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বনি ইসরাইলরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতকে অস্বীকার, উত্তম জিনিস তথা মান্না ও সালওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিস তথা ভূমির উৎপন্ন জিনিস চাওয়া, আমালেকা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করেও অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে চির লাঞ্ছনা ও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে। আগের নবীদের এসব কাহিনী পবিত্র কোরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তাআলা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে যদি উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)ও তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে এবং একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
২। নিষিদ্ধ কার্যকলাপের ফলে
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন (১)সরকারি মালকে নিজের মাল মনে করা হয়, (২)আমানতের মালকে নিজের মালের মতো ব্যবহার করা হয়, (৩)জাকাতকে জরিমানা মনে করা হয়, (৪)ইসলামী আকিদাবর্জিত বিদ্যা শিক্ষা করা হয়, (৫)পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়, (৬)মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, (৭)বন্ধুদের আপন মনে করা হয়, (৮)বাবাকে পর ভাবা হয়, (৯)মসজিদে শোরগোল করা হয়, (১০)পাপী লোক গোত্রের নেতা হয়, (১১)অসৎ ও নিকৃষ্ট লোক জাতির চালক হয়, (১২)ক্ষতির ভয়ে কোনো লোককে সম্মান করা হয়, (১৩)গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন অধিক হয়, (১৪)মদ্য পানের আধিক্য ঘটে, (১৫)পরবর্তী সময় লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের বদনাম করে—তখন যেন তারা অপেক্ষা করে লু হাওয়া (গরম বাতাস), ভূমিকম্প, ভূমিধস, মানব আকৃতি বিকৃতি, শিলাবৃষ্টি, রক্তবৃষ্টি ইত্যাদি কঠিন আজাবের, যা একটার পর আরেকটা আসতে থাকবে, যেমন হারের সুতা ছিঁড়ে গেলে মুক্তার দানাগুলো একটার পর একটা পড়তে থাকে। (তিরমিজি)
৩। ব্যভিচার, মাপে কম দেওয়া ইত্যাদি অপকর্মের ফলে
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মুহাজিরদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘পাঁচটি মন্দ কাজ এমন আছে, যদি তোমরা তাতে জড়িয়ে পড়ো বা তা তোমাদের মধ্যে বাসা বাঁধে, তবে খুবই খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি যেন এ পাঁচটি মন্দ কাজ তোমাদের মধ্যে জন্ম না নেয়।’
ক. ব্যভিচার যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের মধ্যে এমন এমন রোগ দেখা দেবে, যা আগে ছিল না।
খ. ‘মাপে কম দেওয়া।’ এ মন্দ কাজ যদি কোনো জাতির মধ্যে জন্ম নেয়, তবে তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং তারা অত্যাচারী শাসকের শিকারে পরিণত হয়।
গ. ‘জাকাত’ না দেওয়া। এ মন্দ কাজ যাদের মধ্যে দেখা দেয়, তাদের ওপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। যদি সে অঞ্চলে পশু বা পাখি না থাকত, তবে আদৌ বৃষ্টি হতো না।
ঘ. আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। এ মন্দ কাজ যখন সমাজে দেখা দেয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর অমুসলিমদের আধিপত্য চাপিয়ে দেন। আধিপত্যবাদীরা তখন মুসলমানদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়।
ঙ. ‘কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালানো।’ যদি মুসলমান শাসকরা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালায়, তবে আল্লাহ তাআলা মুসলিম সমাজে ভাঙন সৃষ্টি করে দেন। তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে এবং সমাজে সন্ত্রাস ও খুন-খারাবি শুরু হয়ে যায়।’ (বায়হাকি, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০১৯)
হজরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বীনের কার্যকলাপে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে সেই সম্প্রদায়ের লোকদের অন্তরে ভয়-ভীতি ঢেলে দেওয়া হয়, কোনো সম্প্রদায়ে জিনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পেলে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়, কোনো সম্প্রদায়ের লোক মাপে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করে দেওয়া হয়, কোনো সম্প্রদায়ে অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করা হলে সে গোত্রে রক্তপাত বৃদ্ধি পায়, কোনো সম্প্রদায়ের লোক অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তাদের মধ্যে শত্রুতা প্রবল করে দেওয়া হয়। (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত : পৃ. ৪৫৯)
৪। অন্যায় কাজে বাধা না দেওয়ার ফলে
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা দেওয়া ফরজ। মুমিন এ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না। হজরত হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ তাঁর শপথ! তোমরা অবশ্যই ন্যায় কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর আজাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমাদের পরিত্যাগ করা হবে এবং তোমাদের দোয়াও কবুল করা হবে না।’ (তিরমিজি)
৫। অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে
অন্যায়ভাবে হত্যা করা হারাম। কথিত আছে, হজরত আদম (আ.)-এর পুত্র কাবিল যেদিন হাবিলকে হত্যা করে, সেদিনই পৃথিবীতে প্রথম ভূমিকম্প হয়। কেননা অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ড আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হলো জাহান্নাম, সে সদা সেখানে অবস্থান করবে।’ (সুরা নিসা : ৯৩)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন—ইয়া রাসুলুল্লাহ! বিষয়গুলো কী কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন : ১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। ২. জাদুটোনা করা। ৩. যথাযথ কারণ বাদে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। ৪. সুদ খাওয়া। ৫. এতিমের সম্পদ গ্রাস করা। ৬. রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা। ৭. মুসলিম সরলা নির্দোষ মহিলাদের নামে ব্যভিচারের দুর্নাম রটনা করা। (মিশকাত, প্রথম খণ্ড, বাবুল কাবাইর ওয়া আলামাতুন নিফাক, সহীহ বুখারি, কিতাবুল ওয়াসায়া, হাদিস নম্বর : ২৭৬৬)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন—তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ কোনো অমুসলিমকে হত্যা করে, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৬৮৬, সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ২৫)
৬। দুনিয়াপ্রীতি বৃদ্ধি পেলে
মুমিন দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে অধিক ভালোবাসে। সাহাবায়ে কিরাম দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দিতেন এবং দ্বীনের জন্য মরণকে বেশি পছন্দ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—আমার উম্মতের ওপর এমন দুঃসময় আসবে, যখন অন্যান্য জাতি তোমাদের ওপর এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে যেন ক্ষুুধার্ত মানুষ খাদ্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—না, বরং তোমরা সংখ্যায় অনেক হয়েও বন্যার ফেনার মতো ভেসে যাবে। দুশমনদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়ভীতি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি উঠে যাবে। তোমাদের অন্তরে ওহান (কাপুরুষতা) সৃষ্টি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ওহান কী? রাসুল (সা.) বললেন, দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়। (আবু দাউদ) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চারটি বিষয় ক্ষতিকর : ক. চোখ নষ্ট হওয়া, খ. কলব শক্ত হওয়া, গ. দীর্ঘ আশা করা ও ঘ. পার্থিব লোভ।
৭। ধনীরা কৃপণ হলে
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে উত্তম লোকরা তোমাদের নেতা (রাষ্ট্রপ্রধান) হয়, ধনীরা দানশীল হয় এবং রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়, তখন তোমাদের জন্য জমিনের নিম্নভাগ থেকে জমিনের উপরিভাগ উত্তম। আর যখন তোমাদের মধ্যে ধনী লোকরা কৃপণ হয়, কার্যাবলি মহিলাদের নির্দেশমতো চলে, তখন তোমাদের জন্য জমিনের উপরিভাগ থেকে জমিনের নিম্নভাগ উত্তম।’ (তিরমিজি, পৃষ্ঠা : ৪৫৯)
এদ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝতে আমাদের বাকী নেই কেন আজ সারাবিশ্বে এখন সৃষ্টিকর্তা গজব আপতিত করেছেন তা কেবল আমাদের কৃতকর্মের জন্য।
বর্তমানে সারাবিশ্বে ২০১৯ইং সালে চীন থেকে সূত্রপাত হয়ে করোনা নামক অদৃশ্য ভাইরাস ছড়িয়ে প্রায় কোটির কাছাকাছি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। যাকে কোভিড ১৯ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়ে কোটি কোটি মানুষ আজাব পাচ্ছে। হাজারো চেষ্টা করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কেউই এই করোনা নামক অদৃশ্য ভাইরাসকে।
দিনকে দিন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস আমাদের দেশে ২০২০ইং সালের মার্চে প্রথম আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিপর্যস্ত বাংলাদেশ।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট এ রুপ নিয়ে প্রায় প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩হাজার মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ।
সর্বভারত এখন মৃত্যু পুরিতে পরিনত হয়েছে জাত বংশ পরিচয় কোন কিছুই নয় শুধুই মৃত্যু আর মৃত্যু চলছে। হিন্দু মুসলিম কোন ধর্ম নয় শুধু মানুষ পরিচয়ে আক্রান্ত হচ্ছে আর মৃত্যু বরণ করছে।
বর্তমানে লাশ চিতায় পুড়াতে আর কবর দিতে দিতে হিমশিম খাচ্ছে ভারত সরকার তথা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। একসময় শুধু মুসলিমদের উপর বিদ্বেষী আচরণ করা নির্যাতন করা ভারতের হিন্দু উগ্রবাদীরা এখন মসজিদে মসজিদে মুসলমানদের আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার জন্য আহবান করছে।
জাত বংশ ধর্ম পরিচয় ভুলে মুসলিমরাও সবাই এক হয়ে অদৃশ্য এই ভাইরাসের সাথে লড়াই করছে। চিকিৎসা থেকে শুরু করে মৃতদের শেষ কার্য সম্পাদন করছে সবাই মিলে।
ভারত বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট এ রুপ নিয়ে যদি বাংলাদেশে আক্রান্ত শুরু হয় তাহলে ভারতের চেয়ে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে আমাদের বাংলাদেশের।
তাই অনেক বিশেষজ্ঞ অগ্রীম প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলছেন। বাংলাদেশ সরকার দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে লকডাউন পরিবহন বন্ধ, গণজমায়েত নিষিদ্ধসহ স্বাস্থবিধি মানতে ও মানাতে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তদুপরি এসব ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বিগ্ন অনেকে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানতেও রয়েছে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা।
সব মিলিয়ে এক কঠিক সময় পার করছে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
★১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ যথা ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি বা খরা, ভূমিকম্প,দুর্ভিক্ষ,মহামারি, অগ্নিকাণ্ড,বন্যা, জলোচ্ছ্বাস,বরকত-শূন্যতা প্রভৃতি সবই মানুষেরই কর্মের ফল। ধর্মীয় ও নৈতিক অবক্ষয়ে পৃথিবী ভারাক্রান্ত।আল্লাহু তাআলা অযথা কাউকে শাস্তি দিতে চান না; বরং মানুষের ওপর যে বিপদ আসে, তা তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ।মোটকথা হল জলে-স্থলে যত বিপর্যয়,বালা-মুসিবত আসে, আজাব-গজব আপতিত হয়,এসবই মানুষের হাতের কামাই,কৃতকর্মের ফল।
(ক.) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন
‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’
[সুরা রুম,আয়াত নং ৪১]
*(খ.) পবিত্র কোরআনে আরও এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়,তা তোমাদেরই কর্মফল।তিনি অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।’
[সুরা আশ্-শূরা,আয়াত নং ৩০]
*(গ.) ‘আর যখন তোমাদের ওপর মুসিবত এল,যার দ্বিগুণ তোমরা ঘটিয়েছ,তখন তোমরা বললে,এটা কোত্থেকে এল! (হে নবী) আঁপনি বলে দিন,এ তো তোমাদের পাপ থেকেই; নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়েই সর্বশক্তিমান।’
[সুরা আল ইমরান: ১৬৫; মারেফুল কোরআন: ৬৭৫৩]
*(ঘ.) গুনাহ বেশি হলে সবকিছু থেকে বরকত উঠে যায়।ফ্যাসাদ শুরু হয়ে যায়। বিপদ ও বালা-মুসিবত একের পর এক আসতেই থাকে।যুগে যুগে মানুষকে আল্লাহু তাআলা বিভিন্ন আজাব-গজব দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন,সতর্ক করেছেন।
**আল্লাহ তাআলা বলেন,‘আর আঁমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়,ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফল-ফলারির স্বল্পতার মাধ্যমে।আর তুঁমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।যারা নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী”,তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ [সুরা বাকারা,আয়াত নং ১৫৫-১৫৭]
★২. যখন অন্যায়-অনাচার, ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়,অন্যের হক ভূলুণ্ঠিত হতে থাকে,মাপে কম দেওয়া ও চোরাচালানি প্রভৃতির প্রাচুর্য পরিলক্ষিত হয়, তখন দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আসমানি গজব একের পর এক নামতে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নামে।
[রুহুল মাআনি: ১১/৭৩; মারেফুল কোরআন: ৬/৭৫৩]
★৩. হাদিস শরিফে আছে,যে ব্যক্তি মাপে কম দেবে সে দুর্ভিক্ষ,মৃত্যু-যন্ত্রণা এবং শাসক কর্তৃক জুলুমের শিকার হবে। অন্য হাদিসে আছে, যে জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, সেখানে (ক্রমাগত) অনাবৃষ্টি দেখা দেবে।হজরত আবু সুফিয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, বনি ইসরাইল বংশ সাত বছর ধরে দুর্ভিক্ষে নিপতিত ছিল।তারা ক্ষুধার জ্বালায় মৃত প্রাণী ভক্ষণ করেছিল। এরপর তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারল এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিকল্পে পাহাড়ে চলে গেল। সেখানে ক্রমাগত কান্নাকাটি ও আহাজারি শুরু করল। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীর মাধ্যমে তাদের অবহিত করলেন, ‘যতক্ষণ না তোমরা অন্যের প্রাপ্য পরিশোধ করবে, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব না। তোমাদের প্রতি সদয়ও হব না।’ সুতরাং তারা যখন অন্যের হক আদায় করে দিল তখন আসমান থেকে বারিধারা বর্ষণ শুরু হলো।
[মাজালিসে আবরার: ৪৫/২৭৪]
★৪. আজকে আমরা আমাদের সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে এর প্রত্যেকটির জঘন্য চর্চা দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং আমাদের ওপর আল্লাহর আজাব অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এখনো যদি আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ইসলামের সুমহান বিধানকে প্রতিষ্ঠা না করি,আল্লাহর অবাধ্যাচারণে লিপ্ত থাকি,তাহলে এরচেয়েও বড় আজাব এসে আমাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের গুরুতর পাপাচারের জন্য লঘুতর শাস্তি দিচ্ছেন, যাতে আমরা ফিরে আসতে পারি আল্লাহর পথে। ফিরে আসার এখনই সময়।
★সাইয়িদুনা আলি ইবনু আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত।রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যখন আমার উম্মত ১৫টি অপকর্মে লিপ্ত হবে,তখন তাদের ওপর বিভিন্ন বালা-মুসিবত, আজাব-গজব আসতে শুরু করবে।কাজগুলো হলো :
*১. যখন গনিমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করবে।
*২. আমানতের সম্পদ পরিণত হবে ব্যক্তিগত সম্পদে।
*৩. জাকাত আদায় করাকে জরিমানা মনে করা হবে,
*৪. স্বামী স্ত্রীর বাধ্য হবে৷
*৫. সন্তান মায়ের অবাধ্য হবে।
*৬. মা-বাবার পরিবর্তে বন্ধুবান্ধবকে সম্মান করা হবে।
*৭. বাবার প্রতি জুলুম করা হবে।
*৮. নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের নেতা বানানো হবে।
*৯. কোনো ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য।
*১০. মসজিদে উচ্চস্বরে হট্টগোল করা হবে।
*১১. পুরুষ লোকেরা রেশমি (সিল্কি) কাপড় পরবে।
*১২. প্রকাশ্যে মদপান করা হবে।
*১৩. বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে অশ্লীলতায় ব্যবহৃত হবে।
*১৪. অশ্লীলতার স্রোতে গায়িকা তৈরি হবে।
*১৫. উম্মতের পূর্ববর্তী মহামনীষীদের প্রতি অভিসম্পাত করবে পরবর্তীরা।
এসব কাজ যখন জমিনে শুরু হবে,তখন তোমরা অগ্নিবর্ষী প্রবল ঝড়, ভূমিকম্প ও কদাকৃতিতে রূপান্তরিত হওয়ার অপেক্ষা করবে। [তিরমিজি,আস-সুনান : ২২১১]
আর এসমস্ত কিছুই আমাদের বর্তমান সমাজে বিরাজমান। আমরা যদি ফিরে না আসি তাহলে আমাদের পরিনতি হবে আল কোরআনে উল্লেখিত ছয় জাতি ধ্বংসের ন্যায়। যেমন করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে।’ (সুরা ত্বাহা : ২৪)।
আর যদি আমরা এসব থেকে উপলব্ধি করতে পারি এবং নিজেদের সংশোধন করি তাহলে আল্লাহ পরম করুণাময় অসীম দয়ালু। নিশ্চয়ই তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন।
নচেৎ পাপাচারে কারনে নিশ্চিত আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন