মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী ||
আজ রমজান মাসের শেষ জুমার দিন। রহমত, মাগফিরাত ২০ রমজানের পরেই শুরু হয় নাজাতের দশ দিন। আর সেই দশদিনের শেষ জুমুআ'র দিনই হলো জুমুআ'তুল বিদা।
‘জুমুআ’ আরবি শব্দটির বাংলা অর্থ শুক্রবার আর 'বিদা' অর্থ শেষ। জুমাতুল বিদা অর্থ শেষ শুক্রবার। মাহে রমজানের শেষ জুমার দিনটি আমাদের সমাজে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। যদিও পরিভাষাটি কোরআন বা হাদিসের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ কোনো বর্ণনায় তেমন পাওয়া যায় না।
তারপরও মোবারক মাস রমজানের শেষ মাগফিরাতের দশদিনের সর্বশেষ জুমুআ'র দিন হিসেবে এর গুরুত্ব কম নয়। রমজান আর জুমা একত্রে মিলিত হয়ে দিনটিকে করে তুলে সীমাহীন মহিমান্বিততায় ।
উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে বছর ঘুরে আসা মাহে রমজান আর তার সঙ্গে যুক্ত সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন ইআওমুল জুমা। তাই জুমাতুল বিদায় প্রত্যেকটা মুমিন মুসলমানের বিশেষ তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় এবং এই দশদিনের ভিতরেই লাইলাতুলকদরের রজনী রয়েছে সব মিলিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ এই দিন প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্য।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আসা রমজান মাসের শুক্রবারগুলোর মর্যাদা অধিকতর। শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদার মধ্য দিয়ে পবিত্র মাহে রমজানকে এক বছরের জন্য বিদায় সম্ভাষণ জানানো হয়।
মসজিদে জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করা এবং বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও নিজের আত্মার আকুতি দয়াময় মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করাই যেন এ দিনে সব মুসলমানের পরম আগ্রহের বিষয়। মুসলিম নারীরাও এই দিনে ঘরে ঘরে বিশেষ জিকির আজকার ও দোয়া দুরুদ পাঠ করেন যা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক গুরুত্ববহ।
জুমাতুল বিদার মহত্ত্ব: দু’টি কারণে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত মহিমাময়।
(১) মাহে রমজানের কারণে: রমজান মাস সীমাহীন ফজিলতের মাস এবং এটি উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ উপহার স্বরূপ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেকটি নেক-আমলের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত দেওয়া হয় শুধু রোজা ছাড়া।
কেননা রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।
আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশ্ক আম্বারের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারো রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দদেবে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ৫৯২৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১, মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৮৮৯৪, মুসনাদে আহমাদ: ৯৭১৪) আর জুমার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূর্যদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন।
এই দিনে হজরত আদমকে (আ.)সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। আর এদিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া কবুল করা হয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪৯১) রমজান মাসে রোজা অবস্থায় জুমার দিনের নিশ্চিত দোয়া কবুলের শেষ সুযোগ হিসেবে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
করণীয়: জুমার দিনের কিছু সুন্নত আমল রয়েছে। যেমন (১) সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করতে হবে (২) নতুন বা উত্তম পোশারক পরতে হবে (৩) আতর তথা সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে (৪) হেঁটে মসজিদে যেতে হবে (৫) আগে আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে (৬) ইমামের কাছাকাছি জায়গায় বসার চেষ্টা করতে হবে ।
তবে এবারও করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে (৭) ইমামের খুৎবা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে (৮) বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে (৯) কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না, কোনো অনর্থক কাজ করা যাবে না। হজরত আওস ইবনে আওস আস-সাকাফি (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালো করে গোসল করবে এবং আগে আগে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসে খুৎবা মনোযোগ সহকারে শুনবে আর কোনো রকম অনর্থক কাজ করবে না তাকে তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে লাগাতার এক বছর নামাজ ও রোজার সওয়াব দান করবেন মহান আল্লাহ পাক।
সূত্র : (সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস: ১০৮৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৫, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদিস: ১৭০৩, সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১৩৮৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৬১৭৬, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ২৭৮১)।
উল্লেখ্য যে, ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে জানানো হয়েছে এবারও করোনা মহামারি থেকে মানবজাতির মুক্তির জন্য আজ জুমার নামাজের পর সারাদেশে মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মানুষের সুরক্ষা, অসুস্থদের দ্রুত আরোগ্য লাভ, মহামারি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি এবং দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হবে। এ জন্য দেশের সব মসজিদের খতিব, ইমাম, মুসল্লি ও মসজিদ কমিটিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিজ নিজ ধর্ম মতে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্নিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাকের দয়ায় এই বরকতময় দিন বারংবার ফিরে আসবে প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্য এবং মহান আল্লাহ পাক আমাদের ক্ষমা করে হেদায়েত দানের নাজাত দান করুন এই কামনা। আমিন
৭মে ২০২১ইং, জুমুআ'তুল বিদা
লেখক ---
মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী
গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী।
মৌলভীবাজার, সিলেট, বাংলাদেশ৷
ইমেইল -[email protected]

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন