নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে তোপের মুখে মোদি

 জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও অব্যাহত আছে দেশটির সংসদ ভবন সংস্কারসহ প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান নির্মাণের ব্যয়বহুল কাজ। একদিকে, হাসপাতালগুলোতে চলছে জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, প্রতিদিন হাজারো কোভিড আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুবরণ। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৮০ কোটি ডলার ব্যয়ে জারি রেখেছেন নতুন সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্মাণের কাজ।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রকল্পটি চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির সাধারণ মানুষসহ বিরোধী রাজনীতিকরা। দেশে চলমান সবথেকে ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটের মাঝে নির্মাণ প্রকল্পে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে সরব হয়েছেন তারা।

 

কেন্দ্রীয় ভিস্তা পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প নামে পরিচিত এই ব্যয়বহুল সংস্কার কাজকে 'জরুরি পরিষেবা'-র শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, অন্যান্য ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও জরুরি ভিত্তিতে এই কাজ চলবে।

দিল্লিতে লকডাউন চলার পরও জারি আছে এই নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বুধবার দেশটির দুই নাগরিক দিল্লি হাইকোর্টের কাছে আবেদন পেশ করেন। আবেদনকারীদের একজনের মা কোভিড আক্রান্ত বলেও জানা গেছে।

আইনজীবী নিতিন সালুজা এই পিটিশন দায়ের করেন। সংসদ ভবন আইনত জরুরি পরিষেবা নয় বলে দাবি করেছেন আবেদনকারীরা। আবেদনের নথি অনুযায়ী, শ্রমিক শিবির থেকে নির্মাণ শ্রমিকরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। নির্মাণস্থলে কাজ জারি রাখা হলে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্ট এই মাসের শেষে শুনানির দিন ধার্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, নিম্ন আদালত পরিস্থিতির 'গভীরতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ' হয়েছেন দাবি করে আবেদনকারীরা বিষয়টিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যান।

সুপ্রিম কোর্টের কাছে করা আবেদনে সালুজা লেখেন, বিষয়টি জরুরি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক হওয়ায়, যেকোন কারণে কালক্ষেপণের ফলে তা বৃহত্তর জনস্বার্থের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তবে, শুক্রবারের (৭ মে) শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্মাণ কাজ বন্ধের আবেদন খারিজ করে।

ভারতে টানা গত কয়েকদিন ধরে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা তিন হাজারের ওপর থাকছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সাপ্তাহিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে গত সপ্তাহে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা বৈশ্বিক কোভিড মৃত্যুহারের এক-চতুর্থাংশ।

দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে থেকেই সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প নিয়ে বহু বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের বিনিময়ে এই পুনঃউন্নয়ন অর্জিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন সমালোচকরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর বিরোধিতা তীব্র রূপ ধারণ করেছে। রাজনীতিবিদরা এই পরিকল্পনাকে 'অপ্রয়োজনীয়' বলে আখ্যা দিয়েছেন।

বর্তমানে ব্যবহৃত শতবর্ষ পুরনো ভবনগুলো যথোপযুক্ত নয় বলে ৮৬ একর বা ৩৫ হেক্টর জায়গার উপর নির্মাণাধীন নতুন প্রকল্পকে গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেন প্রণেতারা।

ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় গত ডিসেম্বরে মোদি বলেছিলেন, ভারতের নাগরিকদের ভারতীয়ত্ব বোধ সম্পন্ন সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা আমাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক।

তিনি আরো বলেন, ভারতের সকল জনগণ মিলিতভাবে আমরা নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ করবো।

এপ্রিলের শেষে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নির্মাণকাজ চলাকালে প্রায় ৪৬ হাজার ৭০০ মানুষের অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে অনুমান করা হয়।

সংসদ ভবনের সম্প্রসারণ এবং নতুন সংসদ ভবনের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। অন্যদিকে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্মাণ। ২০২৬ সাল নাগাদ সম্পূর্ণ প্রকল্প সমাপ্ত হবে।

এ বছরের শুরুতে দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ দল ১৮০ কোটি ডলারের প্রকল্পটিকে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের ঘোষণা দিলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সবুজ সংকেত মিলে।

কিন্তু এরপর করোনার সংক্রমণ সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় জনরোষের কবলে পড়ে মোদির প্রকল্প।

ভারতের সাবেক অর্থ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা টুইটে লেখেন, মানুষ কোভিডে মারা যাচ্ছে, অথচ (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে) প্রাধান্য পাচ্ছে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প। আমাদের কি এর পরিবর্তে হাসপাতাল নির্মাণ করা উচিত নয়? একজন ক্ষমতালিপ্সু মানুষকে নির্বাচনের জন্য জাতিকে আর কত মূল্য দিতে হবে?

এ সপ্তাহের শুরুতে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধী বলেন, মানুষের জীবনের চেয়েও অহংবোধ বড় (প্রধানমন্ত্রীর)।

এর আগে এক টুইটে গান্ধী লেখেন, কেন্দ্রীয় ভিস্তা- জরুরি নয়। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কেন্দ্র (সরকার)- জরুরি। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি নতুন প্রকল্পকে 'উদ্ভট' বলে মন্তব্য করেন।

তবে সমালোচনার বিষয়টি কেবল রাজনীতিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। টুইটারে অনেক মানুষ মোদির সাথে রোমান সম্রাট নিরোর তুলনা দিয়েছেন। রোম পুড়ে যাওয়ার সময় নিরো যেমন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন বলে কথিত আছে, মোদিও এখন একই আচরণ করছেন বলে মন্তব্য সমালোচকদের।

তবে, কোভিড ব্যবস্থাপনা নিয়ে মোদি আগে থেকেই তোপের মুখে আছেন। সেখানে সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে হিসেবে যুক্ত হয়েছে ভিস্তা প্রকল্প। এর আগে, সংক্রমণ সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিশাল পরিসরের রাজনৈতিক প্রচারণায় নেতৃত্ব দিয়ে সমালোচনার কেন্দ্রে আসেন মোদি।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন