লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হবে’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও -জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান

gbn

লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হবে’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও -জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু আমদের দেশ নয় ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড সহ সারাবিশ্বেই বন্ধ আছে। যেখানেই খুলেছে ৫-১০ দিন পর আবারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মূলত সংক্রামক বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তারা কতগুলো জায়গা চিহ্নিত করেন যে কোন কোন জায়গা থেকে সংক্রমণ বেশি হয়, বেশি ছড়ায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সাথে করোনা সংক্রমণের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। অতীতের যেসব মহামারী ছিল সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানেই খুলেছে সেখানেই সংক্রমণ বেড়ে গেছে। এটি একটি ঐতিহাসিক বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য। সংক্রমণ রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা একটি ঐতিহাসিক কৌশল।

করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের সময়সীমা বৃদ্ধির ফলে পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী ২৩ মে স্কুল-কলেজ এবং ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে না। নতুন করে খোলার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ২৯ মে। এর ফলে দেশের শিক্ষা খাতে কতটা ক্ষতি হচ্ছে এবং কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে সহ বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ড. মীজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

করোনায় আমাদের শিক্ষা খাতের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া যাবে কিনা এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমাদের প্রতিটি সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের শিল্প, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সহ সব সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বলতে এখন আর কিছু নেই। ঠিক তেমনিভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রভাবটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। শিল্প খাতে হয়তো কয়েক শিফটে কাজ করে উৎপাদন বাড়ানো যাবে, দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেখা যায় কৃষিতে উন্নয়ন হচ্ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে। এতকিছুর পরও আমাদের বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে, আমাদের ৪৫ বিলিয়ন ডলার এখন রিজার্ভ আছে। এক জায়গায় ক্ষতি হলেও আরেক জায়গায় পুষিয়ে নেয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা খাতে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পুষিয়ে নেয়ার আসলে কোন জায়গা নেই।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিভিন্ন বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করে অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছিলাম। কারণ আমরা জানিনা কতদিন এই পরিস্থিতিতে থাকতে হবে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা ছিল। অনলাইনে ক্লাসের ক্ষেত্রে ডিভাইস, ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক ইত্যাদি সমস্যা ছিল, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত ছিল না কিন্তু এখন সমস্যাগুলো ইতিমধ্যে অনেকটাই সমাধান হয়ে গেছে। এখন শহরাঞ্চলের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনাগুলোতে অনলাইনে পাঠদান চলছে। কিন্তু সমস্যা রয়ে গেছে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে নেটওয়ার্ক নেই, ডিভাইস নেই। এর ফলে শহর-গ্রামের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যদিও আগেও এই বৈষম্য ছিল কিন্তু এখন সেটা বেড়েছে।

অনলাইন ক্লাসের সমস্যা প্রসঙ্গে ড. মীজানুর রহমান বলেন, ইন্টারনেট এখন খুব বেশি ব্যয়বহুল নয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৫০-৬০ শতাংশ ইন্টারনেট খরচ দেয়া হচ্ছে। তবে নেটওয়ার্ক সমস্যা যেটি রয়েছে সেটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখান থেকে হয়তো এক-দুই কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই নেটওয়ার্কের সমস্যা আর থাকছে না। ক্লাস করার জন্য যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেত তেমনি নেটওয়ার্ক আছে এমন জায়গায় যেয়ে ক্লাস করলেই সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে। এজন্য আমাদের সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরী।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হবে জানিয়ে ড. মীজানুর রহমান বলেন, কবে করোনা শেষ হবে, কবে সব একসাথে খুলবে এর জন্য অপেক্ষা করার সময় নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনলাইনে দুই সেমিস্টারের ক্লাস হয়ে গেছে কিন্তু পরীক্ষাগুলো বন্ধ আছে। জুলাই মাস থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার জন্য ইউজিসি থেকে বলা হয়েছে এবং সেটা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই অনলাইন পরীক্ষার উদ্যোগ চলছে। এই জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার একটি বিকল্প সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, প্রত্যন্ত যেসব অঞ্চল রয়েছে যেখানে করোনার প্রকোপ নেই সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুল খুলে দেয়া যেতে পারে এবং ৫ দিন স্কুল খোলা রেখে ৫টি শ্রেণির ক্লাস নিতে পারে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ১দিন করে ক্লাস করবে পুরো স্কুলে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে এই পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এমন আরো কিছু কৌশল রয়েছে যার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন