জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরাইলের টানা সংঘাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান নিয়ে নিজ দলের মধ্যেই তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, নিজ দল ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনের মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগের কথা বলছেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বামপন্থি উদারনৈতিক সদস্যরা ক্রমেই বাইডেনের তীব্র সমালোচনায় সরব হচ্ছেন।
নির্বাচনের আগে সামাজিক অন্যায়-অবিচার ও বর্ণবাদ রুখে দাঁড়িয়ে জনগণকে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাইডেনের দল।
কিন্তু ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সরকারি বিবৃতিতে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে কথা বলার সেই পুরোনো ধরন ফিরে আসায় এবং মানবাধিকার উপেক্ষিত হওয়ায় দল এখন নিমজ্জিত হয়েছে কুৎসিত কোন্দলে।
পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার ঘটনায় দেশ জুড়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়।
সেই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে উদারনৈতিক ডেমোক্র্যাটরা এখন চান যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতেও ন্যায়বিচারের প্রতিফলন ঘটুক, যেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের বর্ণবাদী নিপীড়নই দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন টেলিফোনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছেন, তিনি ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রকেট হামলা ঠেকাতে নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে ইসরাইলের।
তিনি দুটি অংশেই মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং টাওয়ার-ব্লকে হামলার পরে তিনি সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে রকেট হামলা বন্ধ করতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে বলেন বাইডেন। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্ব জোরদারে নিজের প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম আব্বাসের সঙ্গে কথা হয়েছে বাইডেনের।
বাইডেনের এই ফোনে ফিলিস্তিনে হামলা উসকে দেওয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি ইসরাইলিদের অধিকারের প্রতি তার (বাইডেন) একনিষ্ঠ সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন। বাইডেনের ফোন পেয়ে গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, হামলা মধ্য পর্যায়ে আছে। আরও চলবে। যতদিন প্রয়োজন ততদিন গাজায় হামলা চলবে এবং যতটা সম্ভব বেসামরিক ব্যক্তিদের হতাহত এড়ানো হবে।
এদিকে মিশিগানের ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি রাশিদা তালিব গত শনিবারেই গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভবনে হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ইসরাইল গণমাধ্যমকে হামলার নিশানা করছে, যাতে বর্ণবাদের হোতা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরাইলের চলমান যুদ্ধাপরাধ বিশ্ব দেখতে না পায়।
মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট ক্রিস ভ্যান হোলেন বলেন, ইসরাইলের পরিকল্পিত ফিলিস্তিন উচ্ছেদ অভিযানে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হচ্ছে। তাছাড়া, সর্বোপরি বাইডেন প্রশাসনের মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে শুধুমাত্র রোববার ইসরাইলের হামলায় অন্তত ৪২ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ দিন ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় কমপক্ষে দুটি আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। এ হামলায় কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন।
এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান ও স্থল হামলায় ১৮৮ জনের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ জনই শিশু। আহত হয়েছেন এক হাজার ২শ’র বেশি মানুষ।
অপরপক্ষে পাল্টা জবাবে ইসরাইল অভিমুখে সহস্রাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হামাস। যা অধিকাংশই আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিহত করেছে ইসরাইল।
হামাসের এই হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরাইলে দুই শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছে। যেখানে এক ভারতীয় ও দুই আরব-মুসলিম রয়েছেন।
চলমান এই সংঘাতকে ২০১৪ সালের থেকেও বড় আকারের বলে বলছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।
আল আকসায় তারাবির নামাজে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১০ মে থেকে নতুন করে সংঘাত শুরু হয় গাজায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন