জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
মেয়র হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালনকালে উন্নত ঢাকার ভিত্তি রচনা করতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেছেন, ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ও আধুনিক ঢাকা গড়ার যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম, আমার পাঁচ বছর মেয়াদের প্রথম বছরে করোনার কারণে কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও উন্নত ঢাকার সোপান পানে একটি মজবুত ভিত্তি রচনা করতে সক্ষম হয়েছি।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (১৯ মে) নগরভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল 'বিগত এক বছরের সার্বিক কার্যক্রম ও অগ্রগতি এবং আগামীদিনের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত উন্নত ঢাকার ভিত রচনা'। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এক বছরে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, উন্নয়ন পরিকল্পনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রভৃতি বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, কোনো কর না বাড়িয়ে গত এক বছরে ৫২৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছি যা রেকর্ড। করের আওতা বৃদ্ধি ও কার্যপরিধি বাড়িয়ে এটা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে চলছে। ভবিষ্যতে অন্য সেবাগুলোও অনলাইনে চালু করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, রাজধানীর খালগুলো ওয়াসার কাছ থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের পরপরই এ দিকে ডিএসসিসি মনোযোগ দিয়েছে। কয়েকটি খাল দখলমুক্ত করে পানিপ্রবাহ বাড়ানো হয়েছে। বক্সকালভার্ট থেকে ১০ লক্ষাধিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। চারটি খাল ও দুটি বক্সকালভাট হতে বর্জ্য ও পলি অপসারণ করা হয়েছে। একই সাথে সীমানা চিহ্নিত করা ও অবৈধ দখলদারও উচ্ছেদ করা হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সে জন্য কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারের জন্য সম্ভাব্যতা কার্যক্রম চলমান আছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ডিএসসিসির আওতাধীন প্রক্যেকটি খালকে আধুনিক সাজে সজ্জিত করা হবে। তাহলে সুন্দর ঢাকা গড়ার কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে। কারণ খালের সাথে শহরের সৌন্দর্য অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে মেয়র তাপস বলেন, ২৯টি মার্কেটে সাড়ে ৩ হাজার অবৈধ দোকান ছিল। তিনটি মার্কেট থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে মার্কেটগুলো সুন্দর করে দেওয়া হচ্ছে। এটা দখলদারদের জন্য একটি বার্তা। ভবিষ্যতেও এ অভিযান চলবে।
শেখ তাপস বলেন, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীর ঘেঁষে প্রশস্ত রাস্তা, বাইসাইকেল লেন, ফুটপাত-জগিং ট্রাক, সবুজায়নসহ বিনোদনের ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য প্রকল্প প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, নতুন ওয়ার্ডগুলোর এলাকায় পরিকল্পিত উপশহর গড়ে তোলা এবং ডিএসসিসি এলাকায় ৫০তলা বিশিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মশক নিয়ন্ত্রণে সফলতার কথা উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, 'শুরু থেকেই মশক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছি। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ডিএসসিসি এলাকায় একজনেরও প্রাণহানি ঘটেনি। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে কিউলেপ মশার উপদ্রব কিছুটা বাড়লেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। এবারও ঢাকাবাসীকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম হব।'
তিনি বলেন, 'দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র ছিল ২১টি। গত এক বছরে আরো ৬টি তৈরি করেছি। আরো ১৪টির কাজ চলমান আছে। এক বছরের মধ্যে প্রত্যকটি ওয়ার্ডে একটি করে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র করতে পারব। তাহলে উন্মুক্ত স্থানের বর্জ্য নির্মূল হবে। এছাড়া রাস্তাঘাট কোথাও খারাপ থাকার খবর পাওয়া গেলেই সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। কোথাও সড়কবাতি না থাকলে সাথে সাথে বাতি সংযুক্ত করা হচ্ছে।' এছাড়া প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একটি করে সামাজিক কেন্দ্র নির্মাণ, নতুন মার্কেট নির্মাণ, নর্দমা উন্নয়ন, ফুটওভারব্রিজ নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলেও জানান মেয়র।
এ সময় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, সচিব আকরামুজ্জামানসহ সকল বিভাগীয় প্রধান, বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন