জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
এগারো দিনের টানা হামলা পাল্টা হামলার পর অবশেষে যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও দখলদার ইসরাইল। যুদ্ধ বিরতি কার্যকরের পর জানা গেছে যে, হামাস যে শর্ত দিয়েছিল সেই শর্ত মেনেই যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল।
দেড় সপ্তাহের যুদ্ধে হামাস তিন হাজারের বেশি রকেট ছুঁড়েছে ইসরায়েলে। জবাবে ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে গাজায়। এতে ২৪৩ ফিলিস্তিনি ও ১২ ইসরায়েলির মৃত্যু হয়েছে।
তবে গাজায় অনেকগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি সত্বেও এই যুদ্ধকে ইসরাইলের পরাজয় ও পিছু হটা হিসেবে দেখছে ফিলিস্তিনিরা। পরমাণুসহ প্রতিরক্ষা খাতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ইসরাইল মাথা নত করেছে বছর বছর ধরে কারাগারের মতো অবরুদ্ধ গাজার যোদ্ধাদের কাছে।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা হিসেবে আয়রণ ডোমের নাম জাহির করে ইসরাইল। হামাসের মাত্র ৩০০ থেকে ৮০০ ডলার মূল্যের রকেটের কাছে নাকানিচুবানি খেয়েছে তাদের কোটি কোটি ডলারের এই আয়রন ডোম।
আনাদুলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, হামাসের ছোঁড়া স্বল্পপাল্লার প্রতিটি রকেট ধ্বংস করতে পাল্টা মিসাইল ব্যবস্থায় আড়াইশো গুণ বেশি খরচ করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের ৮শ’ ডলার দামের একটি রকেট নিশ্চিতভাবে ঠেকাতে আয়রন ডোমকে এক লাখ ডলারের দুটি মিসাইল ছুঁড়তে হয়েছে।
ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ দলগুলোর ছোঁড়া স্বল্পপাল্লার রকেট আকাশেই ধ্বংস করতে তামির ইন্টারসেপ্টেড মিসাইল ব্যবহার করেছে ইসরাইল। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ থেকে ছোঁড়া এসব মিসাইলের একেকটির দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ মার্কিন ডলার।
ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্সের তথ্য বলছে, গেল সপ্তাহে এমন অন্তত ১ হাজারের বেশি তামির মিসাইল ছুঁড়েছে আয়রন ডোম। শুধু তাতেই খরচ হয়েছে ১০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮৬০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে হামাসের ছোঁড়া স্বল্পপাল্লার কাসাম রকেটগুলোতে নেই গাইডেন্স সিস্টেম। সাধারণ ধাতব পাইপ ফ্রেমে তৈরি এসব রকেট তৈরিতে খরচ পড়েছে মাত্র ৩০০ থেকে ৮০০ ডলার। চলমান সংঘাতে ৩১শ’র বেশি রকেট ছোঁড়া হয়েছে গাজা থেকে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার খরচ ২১ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
হামাসের এমন সস্তা ও স্বল্পপাল্লার রকেট আকাশেই ধ্বংস করতে কখনো কখনো দুটি মিসাইলও ছুঁড়েছে ইসরাইল। এতে হামাসের ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা দামের একটি স্বল্পপাল্লার রকেট নিশ্চিতভাবে আটকাতে ইসরাইলকে ব্যয় করতে হয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
‘হামাস যোদ্ধাদের আঙুল এখনো ট্রিগারে’
যুদ্ধ বিরতি হলেও যোদ্ধাদের আঙুল এখনো ট্রিগারে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য ইজ্জাত আর রিশ্ক।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই এক মন্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এখনও ট্রিগারেই হাত রেখেছি। দখলদার ইসরাইলকে অবশ্যই অধিকৃত বায়তুল মুকাদ্দাসে সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান শর্ত হচ্ছে মসজিদুল আকসা রক্ষা এবং বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে ফিলিস্তিনি উচ্ছেদ বন্ধ করা। এটা আমাদের রেড লাইন।
ইজ্জাত আর রিশ্ক বলেন, এটা ঠিক যে আজ থেকে যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু দখলদার ইসরাইলের নেতানিয়াহু ও গোটা বিশ্বের জেনে রাখা উচিত আমাদের আঙুল এখনও ট্রিগারেই আছে, আমরা আমাদের প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি অব্যাহত রাখব।
প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি ফিলিস্তিনিদের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে বলে তিনি জানান। ১১ দিনের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের মুখে দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের শর্ত মেনে শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এটাকে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামের জন্য বড় বিজয় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
যে শর্তে যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে হামাস
হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর প্রধানের গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা তাহের আল-নুনু গাজায় সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ইসরাইল দিয়েছে, তা যতক্ষণ পর্যন্ত তেল আবিব মেনে চলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করবে।
এই শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে হামাস মূলত বোঝাতে চেয়েছে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে ইসরাইলকে পরিণতি ভোগ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি মেনে নিতে বাধ্য হয়। ওই মন্ত্রিসভা বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ‘মিশরীয় প্রস্তাব’ মেনে নিয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তা ঘোষণা করা হয়।
হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা ওসামা হামদান লেবাননের আল-মায়াদিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে গাজার ওপর আগ্রাসন বন্ধ করার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। এছাড়া জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ থেকে ইসরাইল সেনা সরিয়ে নেবে, সে নিশ্চয়তাও আমরা পেয়েছি।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনতে যাচ্ছে ফিলিস্তিন
গাজায় ইসরাইল যে বর্বরতা চালিয়েছে তার বিচার চেয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিন্যাল কোর্টে (আইসিসি) যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিন। সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইহুদিবাদী দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে।
ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতেয়াহ এ কথা জানান। শুক্রবার এ তথ্য জানায় ইসরাইলের গণমাধ্যম হারেৎজ।
খবরে বলা হয়, ইসরাইল গাজায় বিমান হামলার মাধ্যমে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তার বিচার চেয়ে অভিযোগ নিয়ে আইসিসিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি গাজায় যে নৃসংশতা চালিয়েছে ইসরাইল তা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় গাজায় ২০টি ফিলিস্তিনি পরিবার প্রায় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়াও পুরো উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলি হামলার ক্ষত দৃশ্যমান।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন