জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অন্যদিকে রোজিনার জব্দ করা মোবাইল দুটি ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে ডিবি।
শনিবার (২২ মে) ডিবির রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আজিমুল হক বলেন, ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলার তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা সঠিকভাবে তদন্ত শেষ করেই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু ফরেনসিক নয়, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে।’
তদন্ত প্রতিবেদন শেষ করতে কত দিন লাগবে? জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘মামলার তদন্তের ওপর নির্ভর করছে আমরা কতদিনে শেষ করতে পারবো।’
ডিবি জানায়, তদন্তের শুরুতেই মামলার সব নথিপত্র ও জব্দ হওয়া কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। তদন্তে অধিকতর তথ্যের জন্য রোজিনা ইসলামের জব্দ হওয়া ফোনগুলো পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যেই সেগুলো ফরেনসিকে পাঠানো হবে।
জানা যায়, এরই মধ্যে সচিবালয় থেকে ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে ডিবি। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে নথি চুরি ও ছবি তোলার যে অভিযোগ রয়েছে বিষয়টি সত্য কি-না তাও খতিয়ে দেখছে ডিবি। ডিবির তদন্তে সব কিছু যেন পরিষ্কার ও নির্ভুলভাবে উঠে আসে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এছাড়া প্রয়োজন হলে আসামি ছাড়া আরও লোকজনকে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি।
গত বৃহস্পতিবার তার জামিন আবেদনের শুনানি হলেও আদালত রোববার (২৩ মে) এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য রেখেছেন। রোজিনা এখন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। শুরুর দিকে মামলাটি শাহবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করলেও বর্তমানে ডিবির রমনা বিভাগ তদন্ত করছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানীর দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের খালি কক্ষে ঢুকে দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকান এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। ওই সময়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাধা দেন। পরে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে 'বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টেসের ছবি' সংবলিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, এসব কাগজপত্র গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে, যা পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদর্শন করা হবে। তবে পুলিশের তৈরি করা জব্দ তালিকায় বলা হয়, আলামত হিসেবে জেনেভার বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের অ্যাম্বাসেডরের পাঠানো দুই পাতার ডিও লেটার, কভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যবহূত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের লক্ষ্যে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর জন্য সিএমএসডির পরিচালকের পাঠানো ৫৬ পাতা, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য দুই পাতার সারসংক্ষেপ, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ কমিটি অনুমোদন সংক্রান্ত অনুমোদিত দুই পাতার সারসংক্ষেপ, একটি আইফোনসহ দুটি মোবাইল ফোনসেট ও দুটি পিআইডি কার্ড জব্দ করা হয়। জব্দ তালিকায় আরও বলা হয়, অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের উপস্থাপন মতে উপরোক্ত ডকুমেন্টস ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হলো।
এদিকে দাবি করা কাগজপত্র গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মামলার এজাহারে নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার কথা বলা হলেও জব্দ তালিকায় তা কীভাবে এলো, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া জব্দ তালিকা অনুযায়ী তা রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেনি।
এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহসভাপতি ওসমান গণি বাবুল বলেন, রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে কোনো নথি জব্দ করেনি পুলিশ, করেছে বাদীপক্ষ অতিরিক্ত সচিবের কাছ থেকে। জব্দের তালিকা থেকে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় কোনো তথ্য নেই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন