জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
বুধবার (২৬ মে) মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। এই সংবাদ সম্মেলন ছিল অগোছালো এবং পূর্বপরিকল্পিত। সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রীতিমতো পালিয়ে গেছেন নুসরাত। আর এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনায় বিচার চাওয়া নুসরাতের মূল বিষয় নয়, মূল বিষয় হলো এখান থেকে ফায়দা লোটা। নুসরাতের পেছনে কিছু মদদদানকারী আছেন। যারা এই মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে উৎসাহ যুগিয়েছে, প্ররোচনা দিয়েছে এবং তাদের কারণেই এখনো নুসরাতকে এ মামলার ভার বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মামলার পরই নুসরাত আস্তে আস্তে নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তিনি মামলা থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন স্বার্থের কারণে এই মামলাটি তাদের জন্য লাভজনক হবে বিবেচনা করে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী এবং আশিয়ান সিটির মালিক নজরুল ইসলাম ভূইয়া এই মামলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মূলত তাদের চাপেই নুসরাত এখনো মামলাটিকে রেখেছেন এবং মামলা প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শারুন নানা কারণে গণমাধ্যমের ওপর ক্ষিপ্ত এবং সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের একজন ব্যাংক ম্যানেজারের আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানারকম দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ বিভিন্ন সময় উঠেছে। আর এই সমস্ত অভিযোগগুলো কয়েকটি গণমাধ্যমে বেশি করে প্রচার হওয়ার কারণে শারুন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আর মুনিয়ার মৃত্যুতে তাদেরকে একহাত দেখে নেয়ার চেষ্টায় আছেন শারুন। এ কারণেই তিনি এই মামলাটিকে এগিয়ে নিতে চান। শারুন মনে করেন, যতদিন মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা থাকবে ততদিন গণমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করবে না। আর এটি মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার অন্যতম উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন।
অন্যদিকে এই মামলা এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি হলেন আশিয়ান সিটির মালিক নজরুল ইসলাম ভূইয়া। তিনি একজন ঋণখেলাপি এবং তার বিরুদ্ধে জমি দখলসহ বিভিন্ন রকম অভিযোগ রয়েছে। আর এই সমস্ত অভিযোগগুলোকে আড়াল করার জন্যই তিনি এই মামলাটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
বুধবার যে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল সেই সংবাদ সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন এই দুইজন। আর এদের কারণেই এই মৃত্যুর মূল রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে না বরং বিভিন্ন স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে মামলাটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন, এই মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হওয়া প্রয়োজন। যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের নিজেদের স্বার্থে এটিকে ব্যবহার করার কারণে পুরো বিষয়টি আসলে এখন লেজেগোবরে হয়ে গেছে এবং পুরো তদন্ত প্রক্রিয়াই ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, তাদের যে স্বার্থ সেই স্বার্থই এখন এই মামলায় প্রধান বিষয় হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল মুনিয়ার বোন ও ভগ্নিপতির ভাড়া করা বাসা থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ। ওই রাতেই গুলশান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা হয়। ওই ঘটনার কয়েক দিন পর ২ মে মুনিয়ার বড় ভাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হত্যা মামলা করেন। দুটি মামলা মাথায় রেখে মুনিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।
তদন্তের বিষয়ে গুলশান থানার ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘অনেক তথ্যই সামনে আছে। সবগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন