জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের আত্মহত্যার বিষয়ে তদন্তে নেমে ভয়ংকর মাদক এলএসডিসহ (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। রাজধানীর ধানমণ্ডি ও লালমাটিয়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ‘এ মাদকের ভয়াবহতা এত বেশি যে, একে লাস্ট স্টেট অব ড্রাগ বলা হয়।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের আত্মহত্যার তদন্তে নামে ডিবির রমনা বিভাগ। তদন্তে নেমে পুলিশ হাফিজুরের কয়েকজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভয়ংকর মাদক এলএসডির সন্ধান পায়। তাদের কাছে মোট ২০০ ব্লট মাদক পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলএসডি মাদক ব্লট আকারে পাওয়া যায়, যা খুব ছোট একটি কাগজের টুকরো সদৃশ মাদক মিশ্রিত বস্তু।’
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সাদমান সাকিব ওরফে রূপল, আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তুর্য ও আদিব আশরাফ। এরা তিনজনই হাফিজুর রহমানের পরিচিত। তদন্তকারী সংস্থা বলছে, হাফিজুর রহমান আত্মহত্যা করার আগে এসএসডি গ্রহণ করেছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত তিনজন তাকে এই মাদক গ্রহণ করান।
গ্রেপ্তারকৃত সাদমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী। তিনি বর্তমানে নর্থ সাউর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সাদমান মেইল ও চিঠির মাধ্যমে ডাক টিকিটের মতো দেখতে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় নেদারল্যান্ড থেকে এই মাদকের একটি ব্লট ক্রয় করতেন। টিম নামের নেদারল্যান্ডের এক নাগরিকের কাছ থেকে সংগ্রহ করতেন। মাদকটি টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ‘পেপাল’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এ মাদক দেশে আসতো।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সাদমানের ‘আপনার আব্বা’ নামের একটি ফেসবুক আইডি রয়েছে। এ ছাড়া ‘better brawry and beyound’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপে এক হাজার সদস্য রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজন এই ফেসবুক আইডি ও গ্রুপের মাধ্যমে মাদক বিক্রি করতো। প্রথমে সাদমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য মতে, তুর্য ও আদিব আশরাফকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা শুনেছি এমন আরও কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে, যারা পরিচিতদের মাধ্যমে ও অনলাইনে মাদক বিক্রি করে। আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
হাফিজ আক্তার আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম এলএসডির সন্ধান পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা তিনজনের কাছ থেকে গাঁজার কেক তৈরি ও বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই কেক এখনো উদ্ধার করা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এই কেক বিক্রি হয়। গাঁজার নির্যাস থেকে এই কেক তৈরি করা হয়।’
নতুন ভয়ংকর এলএসডি যাতে বিস্তার লাভ করতে না পারে সে জন্য ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সর্ব সাধারণের এ মাদকের বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের আত্মহত্যার তদন্তে থাকা ডিবির একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নিহত হাফিজুর রহমানের রক্তে নেশাদ্রব্য লাইসারজিক অ্যাসিড ডাইইথাইলামাইড বা এলএসডির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তাতে দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার আগে হাফিজুর এলএসডি গ্রহণ করেছিলেন। মাদক গ্রহণ শেষে হাফিজ একটি হাফপ্যান্ট জাতীয় পোশাক পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় যান। এবং সেখানে দা দিয়ে নিজের গলায় কোপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। হাফিজুরের যে বন্ধুদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা এই এলএসডি মাদক বিক্রি করত। প্রতি ব্লট তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করত তারা।’
এসব ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন-অর-রশীদ বলেন, হাফিজুর রাস্তার পাশে ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজেই নিজের গলায় আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এরপর থানার টহলরত পুলিশ তাকে ঢামেক হাসপাতাল হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন পুলিশ হাফিজুরের পরিচয় জানতে পারেনি। ঘটনা গত ১৫ মে। পরিচয় জানতে না পারায় লাশটি নয়দিন মর্গে রাখা ছিল। গত ২৩ মে হাফিজুরের লাশটি তার পরিবার শনাক্ত করে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানা পুলিশ অপমৃত্যুর একটি মামলা করে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন