জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারের যোগাসাজশে এই সিন্ডিকেট তৎপর, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, এই সিন্ডিকেটের নাম নিতেও আমি ভয় পাচ্ছি।’
শনিবার (২৯ মে) সিলেট নগরীর নবাবরোড এলাকায় সাংসদ তার বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তৃতায় এই অভিযোগ করেন। এ সময় বালাগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদাল মিয়াসহ ওসমানীনগর উপজেলার সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতার শুরুতে সম্প্রতি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটক, হেনস্তা ও মামলার নিন্দা জানান এমপি মোকাব্বির খান। তিনি বলেন, ‘এই করোনা পরিস্থিতি আমাদের স্বাস্থ্য খাতের ভয়াবহ দুর্নীতি উন্মোচন করেছে। তাদের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে গিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় আপনাদেরই একজন সহকর্মী কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন, অপদস্থ হয়েছেন, জেল খেটেছেন। এটা নিন্দনীয়।’
এমপি বলেন, ‘বাংলাদেশের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আমলা ও অসৎ রাজনীতিবিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটগুলোর কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের ঘটনা উদঘাটন এবং দেশ ও জাতির শত্রু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আমি মহান জাতীয় সংসদে ক্রমাগতভাবে দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো তার নির্বাচনী এলাকায় (সিলেট-২, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রয়েছে।’
এমপি আরো বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সহযোগিতায় একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে আমার নির্বাচনী এলাকার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয় এবং আশপাশে বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। বিষয়টি আমার নজরে এলে আমি এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার পাঠাই। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহ না দেখালে আমি বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করি। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টনক নড়ে এবং কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা বন্ধ হয়।’
মোকাব্বির খান বলেন, ‘সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার সংসদীয় এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনা মূল্যে জমি দেওয়ার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ইউএনও তাহমিনার সহযোগিতায় একটি সিন্ডিকেট জমি অধিগ্রহণের নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সব ব্যবস্থা করেছিল বলে অভিযোগ আছে। বিষয়টি প্রমাণসহ আমার নজরে এলে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ডিও লেটার পাঠাই। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি উত্থাপন করি। একইভাবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ইউএনও সরকারি বিধিবিধান উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের স্বার্থে কাজ করে আর্থিক মুনাফা অর্জনে সচেষ্ট রয়েছেন। উপজেলার এসব কাজের ব্যাপারে সাংসদ হিসেবে আমার সঙ্গে পরামর্শ করার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ইউএনও তা অবজ্ঞা করছেন।’
এমপি বলেন, ‘আমি মনে করি, এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে যেমন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমনি জনগণকেও তাদের অধিকার রক্ষায় সচেতন ও সচেষ্ট হতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির শতভাগ সুফল পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থে প্রয়োজনে আমি এসব দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও তাঁদের দোসর সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ডের কথা প্রমাণাদিসহ সংসদ তুলে ধরব।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর সাংসদের কাছে সিন্ডিকেটে কারা আছেন, তারা স্থানীয় কি না, এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু দলিলাদি উপস্থাপন করেন। সাংসদ বলেন, এসব দলিলপত্রাদি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের সিন্ডিকেটের তৎপরতার প্রমাণ।
সংবাদ সম্মেলনে এমপির লিখিত বক্তব্যের সঙ্গে দেওয়া ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকার রেজিস্ট্রি হওয়া জমির একটি দলিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আফজালুর রহমান চৌধুরীর নাম পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে এমপির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলিলে যাদের নাম আছে, তারাই সিন্ডিকেট। আমি তাদের নাম নিতে চাই না। তারা এত বড় সিন্ডিকেট, এই সিন্ডিকেটের নাম নিতেও আমি ভয় পাচ্ছি। আমি শুধু বলবো, ইউএনও একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকে পুষছেন। তাই সবার আগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
এ ব্যাপারে জানতে আফজালুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এমপির অভিযোগ সম্পর্কে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ইউএনও তাহমিনা বলেন, ‘তিনি মাননীয় সংসদ সদস্য। আমাদের চেয়ে অনেক অনেক ওপরের মানুষ। আমি প্রজাতন্তের সামান্য একজন কর্মচারী। আমার বিরুদ্ধে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা দুঃখজনক।’
ওসমানীনগরে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইউএনও বলেন, ‘আমি সরকারি নীতিমালার বাইরে কাউকে ফেভার করি না। যা করছি, যথাযথভাবেই করছি।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন