গ্রিন লাইফের চিকিৎসক ডা. সাবিরার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ লা জুন) দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষ হয়।

 

ময়নাতদন্ত বিষয়ে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রদীপ বিশ্বাস কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরেনসিকের একটি সূত্র জানায়, তার গলায় ও শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে, যা দেখে মনে হয়েছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার। তবে ধর্ষণের আলামত আছে কি না সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু বোঝা যায়নি বলে জানায় ওই সূত্র। ধর্ষণ হয়েছে কি না জানার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার আলামত সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।

ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ মামাত ভাই রেজাউল হাসানের কাছে বিকেল সাড়ে ৩টায় হস্তান্তর করা হয়। আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

সোমবার (৩১ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভাড়া বাসা থেকে ডা. সাবিরার রক্তাক্ত মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কলাবাগান থানা পুলিশ। এর আগে কলাবাগানের বাসা থেকে ডা. সাবিরার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) ছিলেন।

ওইদিন প্রথমে আগুনের খবরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসায় আগুনের ধোঁয়া দেখতে পান। নিহত চিকিৎসকের শরীরের কিছু অংশ দগ্ধ ছিলো বলে জানান তারা। মরদেহ উদ্ধারের পর পিঠে দুটি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ।

খবর পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা মরদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করেন।

ক্রাইম সিন ইউনিট জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিলড) করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর শেখ রাসেল কবির বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়ার ক্ষত আছে। আমরা আপাতত নিশ্চিত হয়েছি- এটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে, মধ্যরাতে কোনো এক সময় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে।

জানতে চাইলে মঙ্গলবার (১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রমনা বিভাগের কলাবাগান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, মামলার সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলার বাদী হিসেবে থানায় আসেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ এলে মামলা নথিভুক্ত করা হবে।

রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চিকিৎসক সাবিরা নিহতের ঘটনায় গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার জনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তারা হলেন- সাবলেট থাকা শিক্ষার্থী, তার এক বন্ধু, গৃহপরিচারিকা ও বাড়ির দারোয়ান রমজান। পরে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো ৬-৭ জনকে হেফাজতে নেয় ডিবি পুলিশ।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রমনা গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ডাক্তার সাবিরা নিহতের ঘটনায় যাদেরই জিজ্ঞাসাদের প্রয়োজন মনে হয়েছে, তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত পর্যায়ে এখনই বেশিকিছু বলা যাচ্ছে না।

এর আগে সোমবার তিনি জানিয়েছিলেন, ডা. সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি ফ্ল্যাটের দুটি রুম এক তরুণীকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন। সকালে সাবলেটে থাকা তরুণী হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হেঁটে এসে তিনি বাসায় ফিরে দেখেন চিকিৎসক সাবিরার রুম বন্ধ। রুমের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে তিনি দারোয়ানকে ডেকে চাবি এনে রুমের তালা খুলে দেখতে পান চিকিৎসক সাবিরা ফ্লোরে পড়ে আছেন। সবাই ভেবেছিলেন চিকিৎসক আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি এসে তার গলায় একটি আঘাতের চিহ্ন ও পিঠে দুটি আঘাতের চিহ্ন পায়। আমরা তদন্ত করছি। আশা করছি দ্রুত রহস্য উদঘাটন করব।

নিহত চিকিৎসক সাবিরার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে আছেন। ২ ভাই ও ১ বোনের মাঝে সাবিরা ছিলেন সবার বড়। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার ভরসার বাজার এলাকায়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন