করোনা মহামারিতে সংসদে উঠলো আরেকটি অনাড়ম্বর বাজেট

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

করোনা মহামারির মধ্যে গত অর্থ বছরের মত এবারও অনাড়ম্বরপূর্ণ বাজেট উপস্থাপিত হলো জাতীয় সংসদে। বিগত সময়ে বাজেট উপস্থাপনার দিনটিতে সংসদ ভবন জুড়ে জাকজমকপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও গত বছরের মতো বৃহস্পতিবারও (৩ জুন) সংসদের চিত্র ছিলো ভিন্ন।

মহামারির সংক্রমণ এড়াতে সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিলো কড়াকড়ি। অধিবেশনে চিরচেনা উৎসবের আমেজ ছিল অনুপস্থিত। কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদধারী সীমিত সংখ্যক সংসদ সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংসদে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কোন দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়নি।

 

বাজেট উপস্থাপনের সময় সচরাচর সংসদ অধিবেশন কক্ষ প্রায় সব সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকলেও বৃহস্পতিবার সংসদে ছিলেন ১৭০ জনের মত আইনপ্রণেতা। অবশ্য গত বছর বাজেট পেশের দিনে এই সংখ্যা ছিলো আরো কম। গত বছর বাজেট উত্থাপনের দিনে ৭৮ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ নির্ধারিত রোস্টার অনুযায়ী আজ বাজেট পেশের দিনে কভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া ১৩৬ জন সংসদ সদস্য বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা ছিলো। অবশ্য পরে এই সংখ্যা আরো কিছু বেড়েছে। সব মিলিয়ে ১৭০ এর উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না বিরোধী দলীয় রওশন এরশাদ। আগে থেকেই ‍জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিলো। তবে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য অধিবেশনে ছিলেন।

বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল গোলাপি পাড়ের অফ হোয়াইট জামদানি। মুখে ছিল গোলাপি রঙের মাস্ক। অর্থমন্ত্রীর মুখে ছিল সার্জিক্যাল মাস্ক।

আর অর্থমন্ত্রী ছিলেন সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবিতে মুজিব কোট পরিহিত। অর্থমন্ত্রীর হাতে ছিল বাদামী রঙের ব্রিফকেস; যাতে নতুন অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাব।

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এবার একঘণ্টারও বেশি সময় বাজেট উপস্থাপন করলেও নিজে পাঠ করেছেন সব মিলিয়ে ১৫ মিনিটের মতো। বাকি পুরোটাই তিনি পাওয়ার পয়েন্ট এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে বাজেট উপস্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রীর অনুরোধে তার ১৯২ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তব্য পঠিত বলে সংসদে গ্রহণ করা হয়।

সংসদ ভবনের প্রবেশ মুখে সবাইকেই করোনার নেগেটিভ সনদ প্রদর্শনের পাশাপাশি ‘জীবাণুমুক্তকরণ’ চেম্বারের ভেতর দিয়ে ঢুকতে হয়েছে। মাপা হয় সকলের তাপমাত্রা। অধিবেশন কক্ষে এক থেকে দু’টি আসন পর পর তারা বসেছিলেন। তাদের প্রায় সকলেরই মুখে মাস্ক ছিল। সংসদ পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একইভাবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

প্রতিবছরই বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত থাকলেও গতবারের মতো এবারও তাদের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অবশ্য গত বছর বাজেট পেশের দিনে সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ না দেওয়া হলেও এবার সীমিত সংখ্যক সাংবাদিককে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। করোনার নেগেটিভ সনদ সাপেক্ষে অর্ধশতকের মতো গণমাধ্যমকর্মী সংসদে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন। তবে তাদের সংসদ গ্যালারিতে প্রবেশাধিকার ছিল না। সংসদ ভবনে নির্ধারিত সাংবাদিক লাউঞ্জে বসে সংসদ টেলিভিশন এবং সংসদের সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়েছে।

অবশ্য সংসদ ভবনের প্রবেশ মুখে অনেক গণমাধ্যমকর্মীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তারা মূলত বাজেট পেশের পর সরকার, বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে বাজেটের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহের জন্য সেখানে অবস্থান করেন।

বরাবরের মতো রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন। তবে সংসদ ভবনে তার প্রবেশের সময় ছিল না কোনও আনুষ্ঠানিকতা। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী, তিনি অধিবেশন শুরুর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে সই করেন। তার আগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির সইয়ের সময় অনেকে উপস্থিত থাকলেও এবার নথিপত্রে সই করাতে যান অর্থ সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান।

সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, একই সতর্কতা মেনে আগামী রবিবার (৬ জুন) থেকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আলোচনা চলবে। সংসদ সদস্যরা কে, কবে অংশ নেবেন, তা ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে এবার অধিবেশনের মধ্যে বিরতি থাকবে। সব মিলিয়ে ১২ কার্যদিবস চলবে সংসদের অধিবেশন। গতবছর ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন ছিল ৯ কার্যদিবসের।

প্রতিবছর সংসদ ভবনের সাত তলায় গণসংযোগ শাখা থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বাজেট ডকুমেন্ট বিতরণ করা হয়। গতবছর সংক্রমণ রুখতে তা মূল ভবনের বাইরে মিডিয়া সেন্টার থেকে বিতরণ করা হয়। কিন্তু এবার বাজেট ডকুমেন্ট সরবরাহ করা হয়েছে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় নিচের টানেলে।

সংসদ সচিবালয়ের খসড়া কার্যসূচি অনুযায়ী, ৬ জুন কমিটির বিল সম্পর্কিত রিপোর্ট উত্থাপন, চারটি বিল উত্থাপন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা হবে। ৭ জুন সম্পূরক বাজেটের আলোচনা ও পাশ এবং নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল পাস হবে। এরপর সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়ে ১৪ জুন আবারও বসবে সংসদের বৈঠক। পরপর চার দিন অর্থাৎ ১৪ থেকে ১৭ জুন প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর ১১ দিন বিরতি দিয়ে ২৮ জুন অধিবেশন আবারও বসবে এবং ওই দিনও বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। সেদিনই পাস হবে অর্থবিল।

৩০ জুন মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক মঞ্জুরি দাবি নিষ্পত্তিসহ নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। ১ জুলাই শেষ হবে বাজেট অধিবেশন। ওইদিন প্রশ্ন-উত্তর-পর্ব, বেসরকারি বিল উত্থাপন, সরকারি বিল পাস এবং অধিবেশনের সমাপ্তি হবে। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। বিরোধীদলের শীর্ষ নেতারাও বক্তব্য দেবেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন