বহুজাতিক কোম্পানির কর নিয়ে জি-৭-এর ঐতিহাসিক চুক্তি

   জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

বহুজাতিক কোম্পানির ওপর কর আরোপ নিয়ে ঐতিহাসিক একটি চুক্তি করেছে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর এই জোটের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর কর আরোপ নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। এ চুক্তির ফলে এখন থেকে বহুজাতিক কোম্পানিকে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হবে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

শনিবার (৫ জুন) লন্ডনে জি-৭ এর অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে এ চুক্তি হয়। এর ফলে আমাজন ও গুগলের মতো টেক জায়ান্টগুলোও নতুন এই করের আওতায় আসবে।

 

বিবিসি বলছে, এ চুক্তি কার্যকর হলে সরকারগুলোর হাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আসবে, যা দিয়ে তারা মহামারি মোকাবিলায় ব্যয় সংকুলানের নতুন পথ পাবে।

অন্যান্য দেশও যাতে এই পথ অবলম্বন করে, সেজন্য তাদের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করা হবে। আগামী মাসে জি-২০ এর বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে আসা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর কর আরোপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল শিল্পোন্নত দেশগুলো। আমাজন ও ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি করপোরেশনগুলোর ব্যাপক প্রসারে এই চ্যালেঞ্জে আরও বাড়ছিল।

এখন কোম্পানিগুলো যেসব দেশে তুলনামূলক কম করপোরেট ট্যাক্স রয়েছে, সেসব দেশে স্থানীয় শাখা খুলতে পারে এবং সেখানে মুনাফা ঘোষণা করতে পারে। অর্থাৎ সেখানে তাদের শুধু স্থানীয় হারে কর দিয়ে গেলেই চলে। এমনকি সেখানে উৎপাদিত পণ্য অন্য কোনো দেশে বিক্রি করে এই অর্থ এলেও তারা তা করতে পারে। বৈধভাবেই কোম্পানিগুলো এই সুবিধা নিচ্ছে।

চুক্তিতে দুভাবে এটা বন্ধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত, জি-৭ চাচ্ছে সারা বিশ্বে এসব কোম্পানির জন্য একটি ন্যূনতম করহার নির্ধারণ করা হোক। দ্বিতীয়ত, কোম্পানিগুলো যেসব দেশে তাদের পণ্য বা সেবা বিক্রি করবে, সেসব দেশেও তাদের কর দিতে হবে।

তবে, বাংলাদেশে সর্বনিম্ন করপোরেট করহার ১৫ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। এতদিন এ হার ছিল ২৫ শতাংশ।

ব্যবসায়ীদের দাবিতে সাড়া দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট করহারে ছাড় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয়- উভয় ধরনের কোম্পানির করহার কমানোর কথা বলেছেন তিনি। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরেও একই পরিমাণ করপোরেট কর কমানো হয়, তবে তা ছিল শুধু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির জন্য।

অর্থমন্ত্রীর নতুন প্রস্তাবের ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির জন্য করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশ হবে।

অন্যদিকে পুঁজিবাজরে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২৫ থেকে কমে সাড়ে ২২ শতাংশ হবে।

বর্তমানে কোম্পানির কর কাঠামোতে আটটি স্তর রয়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, মোবাইল ফোন কোম্পানি, সিগারেট কোম্পানিসহ বাকি ছয় স্তরের করপোরেট করে কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে এক ব্যক্তির করপোরেট করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

অন্যদিকে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল কোম্পানির (এমএফএস) করহার তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্ত নয় উভয়ের ক্ষেত্রে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ৩২ থেকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত না হলে সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে ব্যক্তি-সংঘের করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করপোরেট করহার কমিয়ে আনলে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত কমিয়ে আনা সহজ হতে পারে। বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তাই বাংলাদেশেও করহার পুর্ননির্ধারণ করা সময়ের দাবি।’

বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশে উচ্চ করহার দিতে হয় বলে তা কমানোর তাগিদ দিয়ে আসছেন।

ছয় স্তরের করকাঠামো অপরিবর্তিত থাকবে অর্থাৎ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংক (৩৭.৫%), তালিকাবহির্ভূত ব্যাংক (৪০%), মার্চেন্ট ব্যাংক (৩৭.৫০%), সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কম্পানি (৪৫%), তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি (৪০%) ও তালিকাবহির্ভূত মোবাইল ফোন কোম্পানির (৪৫%) কর একই থাকছে।

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন