গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনআরবি'র বাজেট পর্যালোচনা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের কল্যাণে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে অর্থমন্ত্রী তথা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ একটি কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত গত ৫ জুন 'বাজেট ২০২১-২২: প্রবাসী রেমিটেন্স ও বিনিয়োগ খাত' বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন এবং উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেন সেন্টার ফর এনআরবি'র চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সদস্য সুয়েব চৌধুরী, মাহাবুব আনাম, এবিএম মুস্তাক হোসেন, রিসার্চ টিমের সদস্য আয়েশা সিদ্দিকা ও সাদাত আহমদ শাওন। সংবাদ সম্মেলনে বিনামূল্যে প্রবাসীর লাশ দেশে ফেরত নিশ্চিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার জোর দাবি জানানো হয়। তাছাড়া করোনা বা স্বাস্থ্যগত অন্য জটিলতায় কিংবা বয়সজনিত কারণে স্থায়ীভাবে দেশে ফেরত আসা রেমিটেন্স যোদ্ধা, যারা তাদের যৌবন তথা শক্তি-সামর্থের পুরোটাই দেশের তরফে বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য আমৃত্যু বিশেষ পেনশন স্কিম চালু করার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রেরণে উতসাহ প্রদানে ২ শতাংশ প্রণোদনার সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল প্রাপ্তির বিষয়টি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উত্থাপন করে এনআরবি সেন্টারের চেয়ারপারসন বলেন, ২ শতাংশ প্রণোদনার ফলে ২০২০ সালে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বাড়তি এসেছে। ওই রেমিটেন্স এবং কৃষির ওপর ভর করে আজ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। তিনি বলেন, প্রণোদনার সুফল ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় প্রবাসীদের পুরস্কার হিসাবে প্রস্তাবিত বাজেট আরো ১ শতাংশ প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। প্রবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমা চালু এবং তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধও জানানো হয়।
একই সঙ্গে বাজেটে আপৎকালীন সহায়তার হিসাবে প্রবাসীদের জন্য ১০০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানানো হয়। সেন্টার ফর এনআরবি'র তরফে প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের সূযোগ অবারিত করার দাবি জানিয়ে বলা হয়, প্রবাসীবান্ধব একটি বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ গঠন করা সময়ে দাবি। বিনিয়োগ নীতিমালা সহজীকরণ এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনায় প্রবাসীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদ সম্মেলনে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলোর কার্যক্রমের প্রশংসা যেমন করা হয়, একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে কতিপয় কর্মকর্তা-কূটনীতিকের হীন কাজের সমালোচনাও করা হয়। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা এবং প্রবাসীদের হয়রানীর বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ আশা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিমান মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রবাসীদের সহায়তায় একটি বিশেষ 'সমন্বয় সেল' গঠনের প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি শ্রমবাজার সন্ধানে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানানো হয়। বিদেশে পাসপোর্ট নবায়ন এবং আইডি কার্ড প্রদান কার্যক্রম সহজীকরণের দাবি জানানো হয় জনস্বার্থে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে। বলা হয়- সরকারের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে প্রবাসীরা ভোটাধিকার অর্জন করেছেন, যা সেন্টার ফর এনআরবি এবং প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এবারে ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা নেয়া এবং বাজেটে এ সংক্রান্ত বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানায় এনআরবি সেন্টার। সেখানে বলা হয়- এনআইডি কার্ড গ্রহণ ও পরিচালনা করা ইতিমধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ টি দেশের একটি অগ্রাধিকার তালিকা করা হয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবাসী রয়েছেন। বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানো এবং অ্যাকাউন্ট মেন্টেইনের জন্য প্রত্যেক প্রবাসীর এনআইডি কার্ড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন জরুরি। সেন্টার ফর এনআরবি মনে করে প্রবাসীদের মধ্যে যাদের ব্যবসা করার মানসিকতা রয়েছে বা ইতোমধ্যে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছেন, তাদের দেশে ও প্রবাসে (যেসব দেশে বাংলাদেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে) ঋণ প্রদান করা যেতে পারে। তারা বাজেটে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও চেয়েছেন। এনআরবি সেন্টারের মতে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি। কারণ করোনাকালে অনেকে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এসেছেন। প্রত্যাগত প্রবাসী এবং প্রত্যাবাসন-চেষ্টায় থাকা প্রবাসীদের আর্থিক ও আনুষঙ্গিক সহায়তা প্রদানের জন্য এনআরবি সেন্টার সরকারের প্রতি দাবি জানায়। সে ক্ষেত্রে প্রবাসীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং বাস্তবভিত্তিক ঋণ প্রদানেরও তাগিদ দেয় সংস্থাটি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনী জটিলতায় আটকা প্রবাসী কর্মীদের জন্য আইনি সহায়তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- এ ক্ষেত্রে মিশনগুলোর ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মিশনে যে কোন পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ভুমিকা রাখার রেকর্ড রয়েছে এমন মেধাবী কর্মকর্তাদের পাঠানোর পরামর্শ আসে। একই সঙ্গে মিশনগুলোতে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, লাইব্রেরী পরিচালনা ও নিয়মিতভাবে জরুরি তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। মিশনে মিশনে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা চর্চাকেন্দ্র গড়ে তোলার আহ্বানও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হয়। বলা হয়- ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। আর আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাজেট উপস্থাপিত হচ্ছে ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬ শ ৮১ কোটি টাকার, যা বাংলাদেশের অগ্রগতির এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক বা অর্জন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পৃথিবীর ১৬৮ দেশে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ বাংলাদেশীর বাস। ওই নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিরা এ পর্যন্ত ২৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। ওই প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। সেন্টার ফর এনআরবি দুনিয়াজুড়ে থাকা প্রবাসীদের সুখ দুঃখের খবর নিতে চেষ্টা করে জানিয়ে চেয়ারপারসন মিস্টার চৌধুরী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেন্টার ফর এনআরবি ৫৪টি সম্মেলন করেছে। সেই সব সম্মেলনে প্রবাসীদের সমস্যা, সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশের নানান কর্মসূচি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। প্রবাসীদের কষ্ট এবং সমস্যার কথাগুলো উঠে এসেছে। এনআরবি সেন্টার তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেছে। স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা হিসেবে সেন্টার ফর এনআরবি আগামী দিনেও এমন প্রয়াস অব্যাহত রাখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন