মৌলভীবাজার বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। পর্যটন শিল্পে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতিকে করছে সমৃদ্ধ। রাজস্ব খ্যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বনজ-খনিজ, চা ও আগর শিল্প। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেকটা অবহেলিত জেলা। বিশেষ করে শিক্ষাখাতে সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলায় থাকলে মৌলভীবাজারে নেই কোন মেডিকেল কলেজ। এবং দীর্ঘ দিনের দাবি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ল কলেজ প্রতিষ্ঠার।
শিক্ষা ও চিকিসাখাত কে সমৃদ্ধ করতে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ২রা জুলাই ২০১৭ সালে গঠন করা হয় সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ, মৌলভীবাজার। ড. মোহাম্মদ আবু তাহেরকে আহবায়ক আমি এম মুহিবুর রহমান মুহিব কে সদস্য সচিব করে এই আন্দোলনের সূচনা করা হয়।
২০১৭ সালে ৫ই আগষ্ট মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব চত্বরে জেলার ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ মানববন্ধন এই আন্দোলনের মূল সংগঠন সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের তৎকালীন সভাপতি ড. আবু তাহের এর সভাপতিত্বে আয়োজন করা হয়। এবং এই মানববন্ধন আয়োজনে পূর্বে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিষয়ক মতবিনিময় ২১ জুলাই ২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম এর সাথে সার্কেট হাউসে মতবিনিময় করা হয়। ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল এর সাথে মতবিনিময় করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করে জেলার সর্বস্তরের মানুষকে এই দাবি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০শে আগষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের ৪ঠা অক্টোবর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
২০১৭ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন চিপ হুইপ আ. ছ. ম ফিরুজের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালে প্রায় লক্ষাধিক গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠানো হয়।
সমাজসেবক ডা. ছাদিক আহমেদের বাড়িতে ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জেলার সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে এক ঈদ পূর্ণমিলনী ও সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদদের সাধারণ সভায় প্রবাসী সমন্বয়কের দায়িত্ব বিশিষ্ট কমিউনিটি লিডার মকিস মনসুর আহমেদকে দেওয়া হয়। তিনি তার নেতৃত্বে প্রবাসীদের সুসংগঠিত করে প্রতিষ্ঠা করেন মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ চাই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। ২০১৮ সালের ১০ই এপ্রিল সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের সমন্বয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বসবাসরত মৌলভীবাজারবাসীদের মাধ্যমে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেন। এবং রাজধানী ঢাকা ও সিলেট ও বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে মৌলভীবাজারবাসী। ২০ অক্টোবর ২০১৭ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. কাজী খালেকুজ্জামান কে প্রধান অতিথি করে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সেমিনার মৌলভীবাজার পৌরসভার কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।
মৌলভীবাজারে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী গোলটেবিল বৈঠকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা ড. ওয়ালি তছর উদ্দিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেই গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীন, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি, আব্দুল মতিন এমপি, শাহাবুদ্দিন এমপি তৎকালীন হুইপ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় উপস্থিত হতে পারেননি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, মেয়র ফজলুর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রায় ৩শতাধিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচি : ২৯ আগষ্ট ২০১৮ মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করে প্রায় লক্ষাধিক গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়।
সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীন যেদিন মহান জাতীয় সংসদে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ দাবি উত্থাপন করেন সেদিন আমরা সংসদে উপস্থিত ছিলাম। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিলেট নির্বাচনী জনসভায় আসলে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান সদর আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ তার বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। পরবর্তীতে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মহান জাতীয় সংসদে বারবার এই দাবী উত্থাপন করেন। সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আজিজুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে এই বিষয়ে কথা বলেন। এ জেলার উন্নয়নের রুপকার সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান চেষ্টা করেছিলেন একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার। বর্তমানে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল উন্নতিকরণ ও হয়েছে তার হাত ধরে। এবং সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মৌলভীবাজারে এসেই তার বাসভবনে আগতদের উদ্যেশ্যে তার প্রথম বক্তব্যে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার তার স্বপ্নের কথা বলেন।
এই দীর্ঘ সময় ধরে মৌলভীবাজার জেলার ২৫ লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবি মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং এই দাবির ব্যাপারে সকল দল-মতের উর্ধ্বে থেকে সবাই ঐক্যমত পোষণ করেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত সমৃদ্ধ করার জন্য বর্তমান সরকার উচ্চ শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের সে দাবি আজও আদায় করতে পারিনি। তাই মৌলভীবাজারে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত মেধার বিকাশ ঘটাতে হলে। এবং চিকিৎসা সেবাকে মানুষের জন সহজলভ্য করতে হলে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ সেখানে আমরা আশা করেছিলাম এবং বিভিন্ন সময় আমর দাবি ও করেছি। আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যদের কাছে তারা ৪জন সংসদ সদস্য মিলে একসাথে আমাদের দাবি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন। এবং সেই দাবী আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত দু-দিন পূর্বে কমলগঞ্জ - শ্রীমঙ্গল আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক চীপ হুইপ উপাধক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি জাতীয় সংসদে বাজেটের উপর আলোচনা করতে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের বিভাজন ফুটে উঠেছে। আমরা যারা ২০১৭ সাল থেকে মাঠে আন্দোলন করছি আমরা হয়েছি হতাশ। সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আমার মনে করি, জেলা সদরে ২৫০ শয্যা যে হাসপাতাল আছে সেখানে ৮একর জায়গা আছে সেখানেই মেডিকেল কলেজ করার পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা আছে বা জেলা সদরেই মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হওয়া যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। তিনি আমাদের জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার কমলগঞ্জের সাথে জেলা শহরের মূল সড়ক সংস্কার করতে ১৫ বছর সময় অতিক্রম করেছেন। যেটা সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সময় আমারা আন্দোলন করেছি। যেখানে জেলা শহরে দীর্ঘদিনের দাবী অপেক্ষিত সেখানে উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি হাস্যকর। মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি বাস্তবায়ন না করে হঠাৎ তার এই বক্তব্য মৌলভীবাজারবাসী গ্রহণ করেনি।
আমাদের দাবি একটাই মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ চাই। এবিষয়ে আমরা কাদা ছোড়াছুড়ি না করে সকলে মিলে মৌলভীবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। একজনের বক্তব্যের কারণে পুরো উপজেলাকে দায়ী করে যারা লেখালেখি করছেন তা থেকে বিরত থাকার জন্য আমি অনুরোধ করছি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন