শাটডাউনেও পোশাক কারখানা খোলা রাখতে চান মালিকেরা

  জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন বা শাটডাউনের মধ্যে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে উদ্ধৃত করে বলেন, তিনি নিশ্চিত করেছেন যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প কারাখানা চালু রাখা হবে। তবে, মানুষের চলাচল সংকুচিত করতে বলেছেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায় মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের একটা বৈঠক আছে। সেই বৈঠকে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা দেয়া হবে। সে অনুযায়ী আমরা কারখানা খোলা রাখবো।

 

মোহাম্মদ হাতেম আরো বলেন, ‘দুই-তিনটি কারণে বর্তমানে পোশাক কারখানা খোলা রাখা প্রয়োজন। প্রথমত, সামনের মাসেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ দেওয়ার চাপ রয়েছে। সময়মতো সরবরাহ না দিতে পারলে ঈদের আগে ক্রেতারা অর্থ পরিশোধ করবেন না। সেটি হলে শ্রমিকদের বেতন–ভাতা দেওয়া কঠিন হবে। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে পোশাকের ক্রয়াদেশ আসার মৌসুম। লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকলে ক্রেতাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তারা অন্য দেশে ক্রয়াদেশ সরিয়ে নিয়ে যাবে। তৃতীয়ত, কারখানায় থাকলেও শ্রমিকেরা অনেক বেশি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকবেন। তখন স্বাস্থ্যবিধি মানাও আমাদের জন্য সহজ হবে।’

মোহাম্মদ হাতেমের মতোই বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, আমরাও কেবিনেট সেক্রেটারিকে বলেছি এই মুহূর্তে কারাখানা বন্ধ করা হলে বিশৃংখলা বেড়ে যেতে পারে। শ্রমিকরা সবাই গ্রামের দিকে ছুটতে পারে।

 

পোশাক কারাখার শ্রমিকদের প্রায় ৯০ শতাংশই কারখানার আশাপাশের এলাকায় থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মো. শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, অর্থনীতিকে সচল রাখার স্বার্থে পন্যবাহী ভ্যান চলাচলের অনুমতি দিয়ে এছাড়া শিল্প কারখানা খোলা রাখার অনুরোধ করেছি। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, তবে, আমরা সরকারের আনুষ্ঠানিক নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

 

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা করছি। এখন পর্যন্ত যতটা আভাস পেয়েছি, আমাদের পোশাক কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দেবে সরকার। সন্ধ্যার বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ।

তিনি বলেন, ‘এখন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানাগুলো খোলা রেখে উৎপাদন হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই আমরা চালাতে চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি পোশাক কারখানা যদি বন্ধ করা হয়, তাহলে গার্মেন্টস কর্মীরা তখন গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করবে, বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এটা সবাই জানে, ছুটি পেলেই শ্রমিকরা গ্রামের দিকে রওনা দেন। এতে করোনার প্রকোপ আরও ছড়িয়ে পড়বে। গ্রাম-শহর একাকার হয়ে যাবে। কারখানা বন্ধ রাখা যতটা না উপকার, তার চেয়ে খোলা রাখাই বেশি উপকার। বন্ধ হলে অর্ডার বাতিল হবে, বায়াররা (বিদেশি ক্রেতা) চলে যাবে। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ কমে যাবে।’

 

ফারুক হাসান বলেন, ‘ঈদের আগে এক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। তাই সার্বিক বিবেচনায় কারখানা খোলা রাখাই উত্তম হবে বলে আমি মনে করি।’

সরকারের এক তথ্যবিবরণীতে শুক্রবার রাতে বলা হয়েছে, ২৮ জুন সোমবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে। এ সময় জরুরি কারণ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না। এ সময় সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের গাড়ি চলাচলও বন্ধ থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

 

সরকারের ওই তথ্যবিবরণীর পর থেকেই কঠোর লকডাউনে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু থাকবে কি না, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারাও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তারা সরকারকে কারখানা খোলা রাখতে অনুরোধ করেছেন। এখন সরকার কী নির্দেশনা দেয়, তার দিকে তাকিয়ে আছেন নেতারা। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করার কথা রয়েছে। গত এপ্রিলে শুরু হওয়া লকডাউনের মধ্যেও শিল্পকারখানা চালু ছিল।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন