জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
দোস্ত মোহাম্মদ সালাঙ্গি। বয়স ৫৫ বছর। হাতে বন্দুক। মুখে আবৃত্তি করে চলেছেন কবিতা। মুখে ঘন দাড়ি, রোদের উত্তাপ থেকে বাঁচতে মাথায় পড়েছেন ঐতিহ্যবাহী টুপি। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উত্তরের পারওয়ান প্রদেশের উঁচু পাহাড়ের ছোট্ট একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। দেশে তালেবানের উত্থান ঠেকাতে বদ্ধপরিকর এই আফগান দল। তাদের মতো দেশটির অনেক সাধারণ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর তালেবানকে ঠেকাতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়েছে তালেবান। দখলে নিচ্ছে নতুন নতুন ভূখণ্ড। এক বার্তায় ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দোস্ত মোহাম্মদ। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, তারা যদি আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, আমাদের ওপর নির্যাতন চালায়, নারীদের ওপর অনধিকার চর্চা করে এবং জনগণের সম্পত্তি দখলে নেয়, তাহলে এমনকি আমাদের সাত বছর শিশুরাও হাতে অস্ত্র তুলে নেবে এবং তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
সাবেক শত শত আফগান মুজাহিদীন যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের একজন হলেন এই সালাঙ্গি; যিনি তালেবানের ক্রমবর্ধমান পুনরুত্থান ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন।
দুই দশকের লড়াই শেষে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনী যখন কোনও পক্ষের পরিষ্কার বিজয় ছাড়াই আফগানিস্তান ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন নিজ দেশে তালেবানের উত্থান ঠেকাতে দোস্ত মোহাম্মদের মতো শত শত মানুষ অস্ত্র হাতে তুলছেন।
পারওয়ানের তালেবানবিরোধী আরেকটি দলে যোগ দিয়েছেন সেখানকার তরুণ শিক্ষার্থী ফরিদ মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আমাদের দেশকে নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে... বিদেশি সৈন্যরা যখন আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তখন এছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দেড় লাখ মোতায়েনকৃত সৈন্য আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক জার্মানির সৈন্যদের বহরটি সবকিছু গুছিয়ে চলে যাওয়ার পর এসব কথা বলেছেন ফরিদ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো গত এপ্রিলের মাঝের দিকে জানিয়েছিল, নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্যে কেন্দ্রে হামলার ২০তম বার্ষিকীর দিনে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর তারা আফগানিস্তান থেকে ১০ হাজার বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, দেশের মোট ৩৭০টি জেলার মধ্যে ৫০টিরও বেশির দখলে নিয়েছে তালেবান। এছাড়া বিদেশি সামরিক বাহিনীর সমর্থনের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে দেশটি ক্রমবর্ধমান হারে আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। তালেবান যোদ্ধারা অনেক প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য চারদিকে অবস্থান নিয়েছে।
তালেবানের হাতে চলে যাওয়া জেলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় সালাঙ্গি এবং মোহাম্মদের মতো সাধারণ দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা পুরোনো অ্যাসল্ট রাইফেল, পিস্তল, গ্রেনেড লাঞ্চার নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান বাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন।
আফগান প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মুখপাত্র আজমল ওমর শিনওয়ারি বলেছেন, তালেবানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে আগ্রহী আফগানদের আঞ্চলিক সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
তবে অনেক গ্রুপ হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ায় দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ফিরে আসার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সহিংসতা বৃদ্ধির মুখে চলতি মাসে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। আফগানিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করলেও নিজেদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে আফগানদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন।
আফগানিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টার আলোচনা বর্তমানে স্থবির হয়ে আছে। যদিও আফগান শান্তি পরিষদের প্রধান বলেছেন, তালেবানের হামলা বৃদ্ধি পেলেও তাদের সমাধান খোঁজার চেষ্টা পরিত্যাগ করা উচিত হবে না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন