সিলেটে ৩ বছরে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির হার ৪৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ

আবুল কাশেম রুমন,সিলেট:  সিলেট জুড়ে অপরাধ প্রবনতা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন সিলেটে সিটি এলাকা সহ বিভিন্ন থানায় খুন,ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘নামবিও’র ক্রাইম ইনডেক্সে অপরাধের সকল সূচকে সিলেটে অপরাধ প্রবণতা উর্দ্ধমুখী। ক্রাইম ইনডেক্সে সিলেটের বর্তমান অপরাধের মাত্রা ৫৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ৩ বছরে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির হার ৪৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। তবে মহানগর পুলিশ বলছে, পুলিশি সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ থানামুখী হচ্ছে। তাই মামলার পরিমাণ বাড়ছে। সেই সাথে অভিযুক্ত আসামীও ধরা হচ্ছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি বছরের গত ৫ মাসে নগরে খুন হয়েছে ১৫টি, ২০২০ সালে সারা বছরে খুন হয়েছে ৩১টি এবং ২০১৯ সালে সারা বছরে খুন হয়েছে ৫টি, গত ৫ মাসে নগরে ডাকাতি-দুস্যতা হয়েছে ৪টি, ২০২০ সালে সারা বছরে ডাকাতি-দস্যুতা হয়েছে ১১টি। গত ৫ মাসে নগরে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণ হয়েছে ১২৪ টি, ২০২০ সালে সারা বছরে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণ হয়েছে ২৬৯টি।  ৫ মাসে নগরে ছিনতাই হয়েছে ৩০টি, ২০২০সালে ছিনতাই হয়েছে ৫১টি, গত ৫ মাসে নগরে অপহরণ হয়েছে ২টি, ২০২০ সালে অপহরণ হয়েছে ৪টি, গত ৫ মাসে নগরে পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে ৯টি, ২০২০ সালে পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে ১১টি। গত ৫ মাসে নগরে চুরি হয়েছে ৬৭টি, ২০২০ সালে চুরি হয়েছে ১৪২টি। গত ৫ মাসে নগরে মাদক মামলা হয়েছে ৩৭৬টি, ২০২০ সালে মাদক মামলা হয়েছে ৫৩৯টি, গত ৫ মাসে নগরে চোরা চালান মামলা হয়েছে ২৯টি, ২০২০ সালে  চোরা চালান মামলা হয়েছে ৫৫টি, গত ৫ মাসে নগরে জখম মামলা হয়েছে ৯৫টি, অস্ত্র মামলা হয়েছে ১০টি, ২০২০ সালে অস্ত্র মামলা হয়েছে ১৪টি, সড়ক দূর্ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২টি, অগ্নিসংযোগ মামলা হয়েছে ২টি। এছাড়া, গত ৫ মাসে অন্যান্য মামলা হয়েছে ৩৩৯টি, ২০২০ সালে সারা বছরে অন্যান্য মামলা হয়েছে ৮১৯টি। মামলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালের এই কয়েক মাসে অপরাধ বেড়েছে।
চলতি বছরের ২০২১ সালে গত ৫ মাসে এসএমপি’র ছয় থানার রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে কোতোয়ালী থানায়। কোতোয়ালি থানায় মোট মামলা হয়েছে ৪৯১টি যার মধ্যে খুনের মামলা হয়েছে ৪টি, ছিনতাই মামলা হয়েছে ১৭টি, ধর্ষণ মামলা হয়েছে ৮টি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ৩০টি, পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে ৭টি, চুরি মামলা হয়েছে ২৭টি, সড়ক দূর্ঘটনা ০৩টি, জখম ১৮টি, অন্যান্য ১২৯টি, অস্ত্র আইন ০১টি, মাদক দ্রব্য ১৬১টি, চোরা চালান ০৪টি মামলা। এসব মামলায় ৪২৬ জন অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এয়ারপোর্ট থানায় মোট মামলা হয়েছে ২০৫টি। যার মধ্যে খুনের মামলা হয়েছে ১টি, ছিনতাই মামলা হয়েছে ০৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ২৩টি, পুলিশ এসল্ট ১টি, চুরি মামলা হয়েছে ১১টি, সড়ক দূর্ঘটনা ০২টি, জখম ১৪টি, অন্যান্য ৭৮টি, অস্ত্র আইন ০৪টি, মাদক দ্রব্য ৫৭টি, চোরা চালান ০৩টি মামলা। এসব মামলায় ২৯০ জন অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জালালাবাদ থানায় মোট মামলা হয়েছে ১৬৪টি যার মধ্যে খুনের মামলা হয়েছে ৩টি, ছিনতাই ০১টি, ধর্ষণ ০৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ২৪টি, অপহরণ ০১, চুরি মামলা হয়েছে ০৮টি, অগ্নিসংযোগ ০১, সড়ক দূর্ঘটনা ০৪টি, জখম ৩৩টি, অন্যান্য ৫১টি, অস্ত্র আইন ০২টি, মাদক দ্রব্য ২৩টি, চোরা চালান ০৩টি মামলা। এসব মামলায় ১৪৯ জন অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শাহপরান থানায় মোট মামলা হয়েছে ১২৩টি। যার মধ্যে খুনের মামলা হয়েছে ৩টি, দস্যুতা ০১টি, ছিনতাই ০২টি, ধর্ষণ ০১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ০৯টি, চুরি ০৮টি, সড়ক দূর্ঘটনা ০২টি, জখম ০২টি, অন্যান্য ২৯টি, অস্ত্র আইন ০১টি, মাদক দ্রব্য ৫৪টি, চোরা চালান ১১টি মামলা। এসব মামলায় ১২৪ জন অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা থানায় মোট মামলা হয়েছে ১৫৫টি। যার মধ্যে খুনের মামলা হয়েছে ০১টি, দস্যুতা ০১টি, ছিনতাই ০৩টি, ধর্ষণ ০১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ১৪টি, চুরি ০৭টি, সড়ক দূর্ঘটনা ০৫টি, জখম ০৯টি, অন্যান্য ৩৬টি, অস্ত্র আইন ০১টি, মাদক দ্রব্য ৬৮টি, চোরা চালান ০৭টি মামলা। এসব মামলায় ২৩৫জন অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  মোগলা বাজার থানায় মোট মামলা হয়েছে ৮২টি। যার মধ্যে খুনের মামলা হয়েছে ০৩টি, দস্যুতা ০২টি, ধর্ষণ ০৪টি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ০৩টি, অপহরণ ০১টি, পুলিশ এসল্ট ০১টি, চুরি ০৮টি, অগ্নি সংযোগ ০১টি, সড়ক দূর্ঘটনা ০৬টি, জখম ১৯টি, অন্যান্য ১৬টি, অস্ত্র আইন ০১টি, মাদক দ্রব্য ১৩টি,  চোরা চালান ০১টি মামলা। এসব মামলায় ১০৭জন অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দেড় বছরে করোনা পরিস্থিতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে পারিবারিক কলহ ও দ্বন্ধ বেড়েছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং অনলাইন ক্লাসের জন্য অনেক শিশু যেমন আসক্ত হচ্ছে মোবাইল গেমে তেমনি কিশোরদের অনেকে যুক্ত হচ্ছে কিশোর গ্যাং চক্রের সাথে। বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে মাদক সেবনও বেড়েছে। আর বেশির ভাগ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হতাশা থেকে মাদক সেবন ও আত্মহত্যার মত আত্মঘাতী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এছাড়া, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, রাহাজানি, সড়কে প্রাণহানি গত আড়াই বছরে বেড়েছে কয়েক গুণ।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন