সাজ্জাদ হোসাইন ওসমানীনগর প্রতিনিধিঃ
সিলেটের ওসমানীনগরে জনবহুল একটি রাস্তার সংস্কার কাজ শেষের ১৫ দিনের মধ্যে একাধিক স্থানে কার্পেটিং উঠে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার দয়ামীর-গহরপুর রাস্তার আড়াই কিলোমিটার অংশের পূর্নসংস্কার কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সরকারী দলীয় প্রভাব কাঠিয়ে উপজেলা এলজিইডি বিভাগের যোগসাজে নিন্মমানের মালামাল ব্যবহার করে রাস্তার কাজ করায় বিভিন্ন স্থানে গর্তসহ যত্রতত্র বৃষ্টির পানি জমে যাচ্ছে।
এতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাস্তার সংস্কারকৃত অংশটির অবস্থা খানাখন্দে ভরপুর হয়ে উঠবে। জানা যায়, দয়ামীর-গহরপুর রাস্তার আড়াই কিলোমিটার অংশের পূর্নসংস্কার কাজ জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে সম্পন্ন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসকে এন্টারপ্রাইজ।
প্রায় এক কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে সদ্য সংস্কারকৃত ওই রাস্তায় রবিবার স্থানীয়রা দেখতে পান, একাধিক স্থানে ছোট গর্তের সৃষ্টিসহ আস্তরন উঠে পাথর বের হয়ে আসছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে অল্প বৃষ্টিতের পানি জমে আছে। রাস্তার কাজের অনিয়ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মন্তব্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানান স্থানীয়রা।
অপরদিকে, একই ঠিকাদারীর প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাশর্^বর্তী দয়ামীর ঘোষগাঁও-রোকনপুরের রাস্তার সংস্কার কাজ শেষের চার মাসের মধ্যে কার্পেটিং উঠে কাদাঁ বালিতে একাকার হওয়ার অভিযোগ করে স্থানীয়রা জানান, সংস্কার কাজের ৫ মাসের মধ্যে রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় তাৎক্ষনিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসকে এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জুবায়ের আহমদ তপুর দারস্ত হলে দয়ামীর-গহরপুর রাস্তার সংস্কার কাজ শেষে পুনরায় দয়ামীর ঘোষগাঁও-রোকনপুর রাস্তার আবারও কার্পেটিং করে দিবেন বলে আশ^স্থ করেন। কিন্তু দয়ামীর-গহরপুর রাস্তায় একই কায়দায় অনিয়ম করে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে যায় সংস্কারে কাজে নিয়োজিতরা।
তবে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জুবায়ের আহমদ তপু এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন, ওই রাস্তাটি আমি দুই-তিন বছর আগে করেছি। এখন ভেঙ্গে গেলে কি করার আছে।
রোকনপুর এলাকার বাসিন্দা এমরুল হক, জাকির হোসেন, কাজি সামাদসহ অনেকে জানিয়েছেন,২০১৮-১৯ অর্থ বছরের কাজ নানা অনিয়মের মধ্যে ধিরগতিতে ২০২০ সালের শেষের দিকে সমাপ্তি করেছেন। একই ভাবে দয়ামীর-গহরপুর রাস্তায় অনিয়ম করে তরিগরি করে চলে গিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসকে এন্টারপ্রাইজ। এ বিষয়ে দয়ামীর-ঘোষগাঁও-রোকনপুর রাস্তা নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
দয়ামীর-গহরপুর রাস্তার পুনসংস্কার নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা জাহির আহমদ মোহন, মুক্তার হোসেন, আহমদ আলী ও রফিক আলীসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন,উপজেলা এলজিইডি অফিসের সহকারী প্রকৌশলীসহ কর্মরতদের যোগসাজে শুরু থেকেই নানা অনিয়ম করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। সংস্কারকৃত রাস্তায় ব্যবহৃত ইট ও পিচ তুলে সেগুলো নতুন নিম্মমানের ইটের খোয়ার সঙ্গে মিশিয়ে কাজ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় পাখরের বদলে ফেলা হয় বালু ছাড়া ইটের খোয়া। মাঠি খুড়ে পুরতান পাথর তুলে নিচে বালু দেয়াসহ সঠিকভাবে রোলার ব্যবহার না করায় একটু বৃষ্টিতে রাস্তার স্থানে স্থানে পানি জমে যাচ্ছে।
নিন্মমানের বিটুমিনসহ মালামাল ব্যবহার করায় কাজের দুই সপ্তাহের মধ্যে গর্তসহ আস্তরণ উঠে ইট ও পাথরের খোয়াগুলো উপওে উঠছে। অনিয়মের বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে অবহিত করলেও তারা কর্ণপাত করেননি। জনগুরুপূর্ন এই রাস্তাটির সংস্কার কাজের নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পুকুর চুরির ফলে সল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি আবারও পূর্বের আকার ধারণ করার আশংঙ্কায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টিসহ বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে। একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পার্শবর্তী দয়ামীর ঘোষগাঁও-রোকনপুর রাস্তার সংস্কার কাজে অনিয়ম করায় চার মাসের মধ্যে রাস্তাটি বেহাল আকার ধারন করছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জুবায়ের আহমদ তপু বলেন,প্রকল্পের যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী ও এলজিইডির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নির্দেশনা মোতাবেক রাস্তাটির কাজ শেষ করেছি। এখানে অনিয়ম হয়নি। নিজ স্বার্থ হাসিলে স্থানীয় অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিরা অত্যান্ত কৌশলে রাস্তার একাধিক স্থান খুঁড়ে গর্তের সৃষ্টি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোষ্টসহ নানা মন্তব্য করছেন। যা আমিসহ উপজেলা এলজিইডি বিভাগের তদন্তেও বেড়িয়ে এসেছে। ওই রাস্তাটির সংস্কার কাজের প্রথম থেকেই স্থানীয় একটি চক্র নানা ভাবে হয়রানী করে আসছিল বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী এসএম আবদ্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জনগুরুপূর্ন ওই রাস্তাটির সংস্কার কাজে অনিয়মগুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে। খোঁজ নিয়ে তদন্তপূর্বক সংশ্লিস্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন পূর্বক উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন