ওসমানীনগরে জোড়া লাশ উদ্ধার: গৃহকর্মীর ভাইয়ের অভিযোগ নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ

মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন ওসমানীনগর প্রতিনিধিঃ 
.
সিলেটের ওসমানীনগরে নিজ গৃহের মেঝে থেকে শিক্ষিকার গলা কাটা লাশ ও একই গৃহের কাঠের উপর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ সরকারের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় হত্যা ও অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের ৯ দিন পর কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গের ভাইয়ের আদালতে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখিত অভিযোগ অবাস্তব দাবি করে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে যাচ্ছেন নিহতের স্বজন,সহকর্মীসহ স্থানীয়রা।

রহস্যময় এই ঘটনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধু¤্রজাল। ৩০ জুন নিহত গৃহকর্মীর ভাই বিশ^নাথের দশঘর গ্রামের জহর লাল সরকারের পুত্র মরচান সরকার বাদি হয়ে শিক্ষিকা তাপতি দে‘র স্বামী ডা: বিজয় ভুষন দে ও পুত্র ডা: তন্ময় দে বিপ্লবকে অভিযুক্ত করে আদালতে দায়েরকৃত মামলার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর মামলায় উল্লেখিত অভিযোগ নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে গোটা ওসমানীনগর।

উপজেলার সর্বত্রই চলছে গ্রহকর্মীর ভাইয়ের মামলার অভিযোগর বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা। আদালতে দায়েরকৃত মামলায় একটি স¤্রান্ত পরিবারের একজন নিহত শিক্ষিকাকে জড়িয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজন,সহকর্মীসহ স্থানীয় এলকাবাসী। শিক্ষিকার পরিবারসহ স্থানীয়দের দাবি, ডা: বিজয় ও শিক্ষিকা তাপতি দম্পতির পরিবারটি এলাকায় খুবই স¤্রান্তশালী ভদ্র ও বিনয়ী হিসাবে বেশ পরিচিত।

ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর কোনো এক সময়ে গৌরাঙ্গ শিক্ষিকাকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করে মারা গেছে বলে পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের তদন্তে বিষয়টি প্রথমিক ভাবে প্রমানিত হওয়ার পর ঘটনার পরের দিন গৃহকর্মীর মৃত্যুর নিয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিল তার ভাই গোবিন্দ সরকার। গৃহকর্মীর ভাইয়েরা প্ররোচনায় পরে শিক্ষিকার পরিবারকে নাজেহালের হীন উদ্দেশ্যে এসব ভিত্তিহিন মানহানিকর তথ্য দিয়ে মামলাটি দায়ের করেছে।
সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে সার্বিক বিষয়ের রহস্য উদঘাটন পূর্বক সাজানো মামলা দেয়েরকৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহব্বান জানান স্থানীয় অনেকেই।

এ বিষয়ে আদালতে দায়েরকৃত ওই মামলাটি সাজানো দাবি করে বিবৃতি প্রদান করেছেন বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অজিত পাল। মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে সুনামধন্য একটি পরিবারের সদস্য নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার শিক্ষিকাকে জড়িয়ে এমন বাজে অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে আসল ঘটনাই আড়াল করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে গৃহকর্মীর পরিবার।

সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য দয়ামীর বাজারের ব্যবসায়ী সাইস্তা মিয়া ও দায়ামীর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাহির আহমদ মোহনসহ স্থানীয় বাসিন্দা অনেকেই বলেন, চিকিৎসক ও শিক্ষক ওই পরিবারটির সাথে স্থানীয় সকল শ্রেনী পেশার মানুষের দীর্ঘদিনের চেনা-জানাসহ সু-সম্পর্ক রয়েছে।

ঘটনার দিন খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষনিক শিক্ষিকার বাড়িতে গিয়ে প্রতিয়মান হয়েছি যে কাজের ছেলে গৌরাঙ্গ শিক্ষিকাকে খুন করে অনুশোচনায় ভোগে নিজে আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরন করেছে। কিন্তু ঘটনার প্রায় পনের দিন পর সংবাদ মাধ্যমে গৃহকর্মীর পরিবারের দায়েরকৃত মামলার ভিত্তিহীন অভিযোগ কোনো ভাবে বিশ^াসযোগ্য নয়। এই ঘটনার মূল রহস্য উধঘাটন পূর্বক সাজানো মামলা দায়েরকারীর দৃষ্টামূলক শাস্তির বাদি করেন তারা। নিহত শিক্ষিকার স্বামী ডা: বিজয় ভুষন দেব বলেন, গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ ও তার ভাই গবিন্দ আমাদের পরিবারে গৃহকর্মীর কাজ করতো।

আমরা তাদের সন্তানের মতো আদর ¯েœহ করতাম। এখন তারই আমার পরিবারটিকে ধংস করে দিয়ে নাজেহালের চেষ্টায় মেতে উঠেছে। গৌরাঙ্গ আমার স্ত্রীকে হত্যার পর নিজে আতœহত্যা করে মৃত্যুবরন করেছে যা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ফুটে উঠেছে। ঘটনার দিন আমার স্ত্রী নিজ কর্মস্থলে থাকার পরও আদালতে দায়েরকৃত সাজানো মামলায় দাবি করা হয়েছে তিনি নাকি ওইদিন দশঘরস্থ গৌরাঙ্গের বাড়িতে গিয়েছিলেন। যাহা ডাহা মিথ্যা।

ঘাতক গৌরাঙ্গের হাতে নির্মমভাবে খুনের স্বীকার হয়ে আমার স্ত্রীর মৃত্যুর শোক কাঠিয়ে উঠার আগেই অবাস্তব কাল্পনিক মনগড়া কাহিনী সাজিয়ে আমিসহ আমার সহজ সরল চিকিৎসক পুত্রকে অভিযুক্ত করে আদালতে সাজানো মামলা দায়ের করে পারিবারিক মানমর্যাদা ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি আমার পরিবারটিকে নাজেহাল করার পায়তারা করছে গৌরাঙ্গের ভাই মরচান। আমার মৃত স্ত্রীকে জড়িয়ে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগের খবরে পরিবারের সদস্যদের ব্যাথিত করার পাশাপাশি ক্ষুদ্ধ হয়েছেন স্থানীয়রাও। 

মূল ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিজ স্বার্থ হাছিলের হীন উদ্দেশ্যে নানা ইন্দনে গৌরাঙ্গের পরিবার এমন কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে আমার পরিবারের সামাজিক মান-মর্যদা ক্ষুন্ন করেছে।
এবিষয়ে নিহত গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ সরকারের বড় ভাই মরচান সরকার বলেন, অন্ধ বাবাসহ আমরা হতদ্ররিদ্র পরিবারের সদস্যদের আহার যোগাতে আমার দুই ভাই শিক্ষিকাসহ শিক্ষিকার মেয়ের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো। আমার ভাই গোবিন্দ ইচ্ছাকৃতভাবে থানায় কোনো অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেনি। ময়না তদন্তের কথা বলে স্বাক্ষর নিয়ে পরবর্তীতে থানা পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে জানতে পেরে প্রাথমিক তথ্য প্রমান নিয়েই ভাই হত্যার বিচার চেয়ে আদালতের সরনাপূর্ণ হয়েছি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়েছে। মাতৃহারা দ্ররিদ্র পরিবারের সন্তানের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ট তদন্তপূর্বক জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের উধ্ধর্তন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

প্রসঙ্গত: গত ১৯ জুন শনিবার দিবাগত রাত ১২টায় উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের শোয়ার গাঁও গ্রামের ডা: বিজয় ভুষন দে‘র বাড়ির বসত ঘরের মেঝে থেকে তারই স্ত্রীসেয়ারগাঁর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী স্কুল শিক্ষিকা তাপতী রানী দে বিবস্ত্র গলাকাটা লাশ এবং একই ঘরের কাঠের উপর থেকে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ সরকারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ এ ঘটনায় ২০ জুন গৃহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করার পর ২১ জুন নিহত গৃহকর্মীকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের করেন শিক্ষিকার পুত্র ডা: তন্ময় দে বিপ্লব।
পরবর্তীতে ৩০ জুন গৌরাঙ্গকে হত্যার অভিযোগ এনে শিক্ষিকার স্বামী ও একমাত্র পুত্রকে অভিযোক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করেন নিহত গৃহকর্মীর ভাই মরচান সরকার। শিক্ষিকা তপতী ও চিকিৎসক বিজয় ভুষন দম্পত্তির ছেলে-মেয়ে ও মেয়ের স্বামী পেশায় চিকিৎসক। নিহত গৌরাঙ্গ বাড়িতে ও তার ভাই গোবিন্দ সিলেট শহরস্থ শিক্ষিকার মেয়ের বাসায় গৃহকর্মীও কাজ করতো।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন