জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, জো বাইডেন সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিষেধাজ্ঞা নীতিতে পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সৃষ্ট চাপ কমিয়ে আনা, অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়ানো এবং একতরফা চিন্তা বাদ দিয়ে মিত্রদের সঙ্গে যৌথ পদক্ষেপ নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নীতিতে পরিবর্তন আনার বিষয়ে কাজ প্রায় শেষের দিকে এবং আশা করা হচ্ছে চলতি গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করা হবে’।
যদিও নিষেধাজ্ঞা নীতিতে কি ধরনের পরিবর্তন আনা হবে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ‘বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াসহ এ বিষয়ে নতুন কিছু সংস্কার সাধন করা হবে’।
বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন সরকার সবসময়ই নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। বিভিন্ন বানোয়াট অজুহাতে তারা এসব নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতেও যখন বিশ্বের বহু দেশ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যখাতে বিপর্যয়ের সম্মুখীন তখনও তারা নিষেধাজ্ঞা নীতি থেকে তো সরে আসেনি বরং আরো জোরদার করেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এমনকি তিনি চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা, কিউবা ও সিরিয়ার মতো দেশগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে ছাড়েনি। বিশ্বব্যাপী একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বাসনা থেকে ট্রাম্প এসব দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে ইরানকে বাগে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেও যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়নি। মার্কিন ডেমোক্রেট দলের সিনেটর ক্রিস মরফি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েও যুক্তরাষ্ট্র কিছুই আদায় করতে পারেনি’।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতো ব্যর্থতার পরও মার্কিন সরকার এখনো নিষেধাজ্ঞাকে বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন সরকার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ব্যাংক ও কোম্পানির ওপর তাদের প্রভাবকে কাজে লাগাচ্ছে। তবে ওয়াশিংটনের এ স্বেচ্ছাচারী আচরণের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ডলারকে তারা বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করায় খোদ মার্কিন মিত্ররাও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে এবং বিশ্বজনমত ক্রমেই মার্কিন বিরোধী হয়ে উঠছে।
অর্থনৈতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলাসদায়ের ম্যাকলোয়েড বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। কেননা তারা জানে আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থায় ডলারের বিকল্প তেমন নেই আর এ সুযোগকে ওয়াশিংটন অপব্যবহার করছে’।
প্রকৃতপক্ষে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নীতি বড় ধরনের ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন একতরফা ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে। ইরান, সিরিয়া, ইরাক, চীন, রাশিয়াসহ ২৬টি দেশ গত বছর অক্টোবরে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তাই যতদ্রুত সম্ভব নিষেধাজ্ঞা যেন তুলে নেয়া হয়’।
নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি থেকে মার্কিন মিত্ররাও মুক্ত নয়। রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রস্তাবিত গ্যাস পাইপ লাইনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে জার্মানি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে বর্তমান বাইডেন প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা নীতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন