মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া- সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে সোর্স পরিচয়ধারীদের চোরাচালান বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠেছে। সোর্সরা লকডাউনের আইন অমান্য করে দাপটের সাথে লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারতে থেকে প্রতিদিন কয়লা ও চুনাপাথরসহ মদ, গাঁজা, ইয়াবা, বিড়ি, কাঠ, বাঁশ, চাল, গরু ও অস্ত্র পাচাঁর করছে। বিজিবি অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবৈধ মালামাল উদ্ধার করে কিন্তু চোরাচালানের মূল নায়ক সোর্সদের কখনোই গ্রেফতার করেনা। অথচ এই সীমান্তে র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভারতীয় বিড়ি, মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও অস্ত্রসহ অনেককে গ্রেফতার করেছে। তাই চোরাচালান প্রতিরোধ করতে সোর্সদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা জরুরী বলে জানিয়েছেন সীমান্তবাসী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের রঙ্গাছড়া ও জংগলবাড়ি এলাকা দিয়ে সোর্স লেংড়া জামাল ও মস্তো মিয়া গংদের নেতৃত্বে ভারত থেকে চুনাপাথর, কয়লা, মদ, গাঁজা ও ইয়াবা পাচাঁর শুরু হয়। বিকেলে বিজিবি অভিযান চালিয়ে ৩শ ঘনফুট অবৈধ চুনাপাথরসহ ১টি স্টিলবড়ি ইঞ্জিনের নৌকা আটক করে। যার মূল্য অনুমান ৪লক্ষ ৮৮হাজার টাকা। অপরদিকে লাউড়গড় সীমান্তে যাদুকাটা নদী, শাহ আরেফিন ওলির আস্তানা ও পুরান লাউড় দিয়ে সোর্স আমিনুল ইসলাম, নুরু মিয়া, জজ মিয়া, শহিদ মিয়া, রফিক মিয়া, জসিম মিয়াগং পৃথক ভাবে ভারতে থেকে কয়লা, পাথর, কাঠ, মদ, গাঁজা, বিড়ি ও ইয়াবা পাচাঁর করে। এখবর পেয়ে বিজিবি মোকশেদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১হাজার ৯শত টাকা মূল্যের ৭হাজার পিস ভারতীয় বিড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। পাশর্^বর্তী চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা, রাজাই, নয়াছড়া ও গারোছড়া এলাকা দিয়ে সোর্স রফিকুল ইসলাম, আবু বক্কর ও আলমগীরগং ভারত থেকে কয়লা, বিড়ি ও মদ পাঁচার করে। বিজিবি অভিযান চালিয়ে বারেকটিলা পর্যটনস্পট থেকে ১বোতল মদ ও ৬হাজার ৫শ পিস বিড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। এছাড়া চারাগাঁও সীমান্তের এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা তেতুলগাছ ও ১১৯৬পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সোর্স শফিকুল ইসলাম ভৈরব, রমজান মিয়া, বাবুল মিয়া, খোকন মিয়া, জসিম মিয়া ও শহিদুল্লাহগং সহ বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট ও লাকমা এলাকা দিয়ে সোর্স ইয়াবা কালাম, লেংড়া বাবুল, জিয়াউর রহমান জিয়া ও পাশর্^বর্তী টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনি প্রকল্প, বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে সোর্স ইসাক মিয়া ও কামাল মিয়ার নেতৃত্বে ভারত থেকে অবাধে কয়লা, পাথর, মদ, গাঁজা, বাঁশ ও ইয়াবা পাচাঁর করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে লালাঘাট গ্রামের চোরাই কয়লা ব্যবসায়ী খোকন মিয়া ও শহিদুল্লাহ বলেন- ভারত থেকে পাচাঁরকৃত ৬মেঃটন চোরাই কয়লার জন্য সোর্স শফিকুল ইসলাম ভৈরব, রমজান মিয়া ও ইয়াবা কালামকে ৫হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে সোর্সরা বিজিবি দিয়ে মাল আটক করে। সোর্স শফিকুল ইসলাম ভৈরব বলেন- বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই আমরা এসব কাজ করছি। সোর্স ইয়াবা কালাম বলেন- আমার বিরুদ্ধে এই পর্যন্ত ১০টা মামলা হয়েছে কিন্তু কিছুই হয়নি। পত্রিকায় লেখলে কি হবে, আমারও সাংবাদিক আছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহাসন সাংবাদিকদের বলেন- জব্দকৃত অবৈধ মালামাল ও নৌকা শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন