নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতন উষার ইউনিয়নে কোভিড-১৯ এর সরকারের বিশেষ প্রণোদনা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্বে ১৫ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ইউনিয়ন পরিষদের ১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুই ইউপি সদস্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
পতন উষার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রিপন ইসলাম ও সায়েক আহমদ অভিযোগ বলেছেন, কোভিড-‘১৯ এর ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারী প্রনোদনার অংশ হিসাবে ইউনিয়ন পরিষদে দেড় মাস আগে আড়াইলক্ষ টাকা বরাদ্ধ আসার পরও আমাদের জানানো হয়নি। ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে অনেক চাপাচাপির পর আমরা মেম্বারদের মধ্যে ৩শ’ লোকের মধ্যে ৫শ’ টাকা হারে বিতরণ করা হয়। অবশিষ্ট ২শ’ লোকের জন্য চেয়ারম্যান নিজে রক্ষিত রেখেছেন। ট্যাগ অফিসার ছাড়া এগুলো বিতরণ ও মাস্টাররুল কিভাবে হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পরবর্তীতে ২য় দফায় ষেষট্রি হাজার টাকা ও এক মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ আসলেও সেগুলো বিতরণের কোন উদ্যোগ নেই। আমরা জানতে চাইলে বলা হয় পরিবহন খাতের জন্য এগুলো রাখা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারের বিশেষ বরাদ্ধই নয়, গেল অর্থবছরে এলজিএসপি, এডিবি, টিআর, কাবিখা প্রকল্পসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম রয়েছে। আমরা ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের কোন তথ্য প্রদান করা হয়না এবং বিগত প্রায় ৪ মাস ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভাও আহ্বান করা হয়নি।
ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার উপজেলা পল্লী জীবিকায়ন কর্মকর্তা মোর্শেদা মেরিনা বলেন, আমার উপস্থিতিতে একজন ইউপি সদস্য ব্যতিত লোকদের মধ্যে ৫শ’ টাকা করে যেগুলো বিতরণ হয়েছে সেখানে মাস্টাররুলে স্বাক্ষর করেছি। তবে চেয়ারম্যান যে ২শ’ জনের জন্য বরাদ্ধ রেখেছেন বিতরণের কথা ছিল। এই তালিকার মাস্টাররুলে স্বাক্ষর হয়নি। অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান তৌওফিক আহমদ বাবু বলেন, ২শ’ লোকের মধ্যেও টাকা বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ষেষট্রি হাজার টাকা ও এক মেট্রিক টন চাল এম.পি সাহেবের উপস্থিতিতে বিতরণ করা হবে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, আড়াইলক্ষ টাকা দ্রুত বিতরণ করার কথা। যদি বিতরণ না হয়ে থাকে তাহলে চেয়ারম্যানকে দ্রুত বিতরণের জন্য বলে দেব। অবশিষ্ট ষেষট্রি হাজার টাকা ও চাল বিতরণ করতে হবে।
কমলগঞ্জের পতন ঊষার ইউনিয়নে সরকার প্রদত্ত সাহায্য বণ্টনে অনিয়ম নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা অবিশ্বাস্য কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর সামগ্রিক অর্জনকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগ করেন বা সরকারের দায়িত্বে আছেন নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু মানুষ উঠে পড়ে লেগেছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর কথা বলেছি কমলগঞ্জের সাংবাদিক জনাব মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যিনি "কালের কণ্ঠে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উল্লেখিত এই অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করেছেন ।
দায়বদ্ধতা থেকে এই ঘটনার পেছনের ঘটনা জানার জন্য আজ আমরা কথা বলেছি উক্ত ইউনিয়নের সচেতন নাগরিক সুশীল সমাজ ও ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের সাথে। এ ব্যাপারে আমরা কথা বলি সাবেক নির্বাচিত প্যানেল চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধি রিপন ইসলাম মইনুলের সাথে। কি হচ্ছে আপনাদের ইউনিয়নে? রিপন ইসলাম মইনুল বলেন, বিষয়টি অনভিপ্রেত, এতে আমাদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। এই পরিষদের সদস্য হিসাবে এমন অনিয়মের দায় আমরা এড়াতে পারি না। চেয়ারম্যান সাহেবের প্রতিটি ভালো কাজকে আমরা সমর্থন করি, তবে তিনির দ্বারা সম্পাদিত প্রতিটি অন্যায় কাজ আমরা বড় বাধা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব অনেক। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশ এগিয়ে চলছে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনরাত কষ্ট করে যাচ্ছেন। এই করোনাভাইরাস মহামারী কালীন সময়ে তিনির দান অনুদানকে অসহায় দরিদ্র মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমি সুষম বন্টনে বিশ্বাস করি। অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা অসহায় মানুষরাই পাবে। গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার একটি অংশ জনপ্রতিনিধিরা পাবে সেটা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল না। অন্যায় শুধু অন্যায় ,শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না, যা কিছু ঘটে কিছু না কিছু রটে- এর চেয়ে বেশি আমি বলতে চাই না।
জনপ্রতিনিধি রিপন ইসলাম মইনুল বলেন, স্থানীয় এমপি মহদোয় আমরা জনপ্রতিনিধিদের কড়া নির্দেশ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,গরিব মানুষের জন্য বরাদ্ধকৃত প্রধামন্ত্রীর ত্রাণ যথা সময়ে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। বলেছেন,এই সব কার্যক্রমে কোন অন্যায় অনিয়ম করে করে কেহ রেহাই পাবেন না। এখানে উল্যেখ্য, চেয়ারম্যান সাহেবের বিরোদ্ধে ইউ এন ও মহোদয়ের কাছে নালিশ করার পর মাননীয় ইউএনও মহোদয় বলেছেন, আড়াইলক্ষ টাকা দ্রুত বিতরণ করার কথা। যদি বিতরণ না হয়ে থাকে তাহলে চেয়ারম্যানকে দ্রুত বিতরণের জন্য বলে দেব। অবশিষ্ট ৬৬ হাজার টাকা ও চাল বিতরণ করতে হবে।
আপনার এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এডিবির অনুদান যথাসময়ে হস্তান্তর করা হয় নাই অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে আপনি কি কিছু জানেন? রিপন ইসলাম মইনুল বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চেয়ারম্যান সাহেবকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ অনুদান যথাসময়ে দিয়ে দেওয়া উত্তম, বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দেননি। তবে বিষয়টি বড়ই হাস্যকর, গত ১৫/০৭/২০২১ ইং তারিখে কমলগঞ্জ উপজেলা ইউএনও মহোদয়ের কাছে গরীব মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আর্থিক বরাদ্দ জনপ্রতি ৫০০ টাকার অনিয়ম নিয়ে নালিশ করার পর ওই দিন রাত্রে অন্ধকারে চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমদ বাবু গোপিনগর জামে মসজিদের সভাপতির বাড়িতে এসে এক বছর পরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত এক লক্ষ টাকার মধ্যে ৬০,০০০ টাকা দিয়ে যান। একই সময়ে বৃন্দাবনপুর গোপিনাথের আশ্রম ৬০,০০০ টাকা দিয়ে যান। দুই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আমার কাছে আবারো নালিশ নালিশ করেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন -ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত এক লক্ষ টাকার মধ্যে এক বছর পরে আমরা গোপিনগর নগর জামে মসজিদ ৬০০০০ টাকা ,গোপিনাথের আশ্রম ৬০,০০০ টাকা পেলাম। আমাদের বাকি টাকা গেল কোথায়? এখানে উল্লেখ্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই টাকা যথাসময়ে মসজিদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করার কথা ছিল। মসজিদ মন্দির গির্জা জন্য বরাদ্দকৃত টাকা যথা সময়ে পৌঁছে দেওয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্বের অংশও বটে। গরিবের জন্য বরাদ্ধকৃত ৫০০ টাকা মসজিদ মন্দির গির্জার দান-অনুদান আত্মসাৎ ও আমাদের চরিত্রহীনতা নিয়ে মানুষ হাটে ঘাটে মাঠে ময়দানে কথা বলবে তা বড় অপমানের।
এ ব্যাপারে অভিযোগ দাতা মেম্বার সায়েক আহমদ এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সাংবাদিক সাহেব আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা সমাজের দর্পণ। চেয়ারম্যান সাহেবের দ্বারা সম্পাদিত অন্যায় অনিয়ম নিয়ে কথা বললে অনেক লম্বা হবে। আমার চার নম্বর ওয়ার্ডে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি আশ্রম ভৈরব তলী
সেখানে অনুদানের আংশিক টাকা দেওয়া হয়েছে এক বছর পরে। কর্তৃপক্ষ আমাকে বারবার ধারণা দিয়েছেন টাকা গুলো নিয়ে আসায় দেওয়ার জন্য। চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করেননি। তবে তিনি বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পরে রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় গিয়ে টাকা দিয়ে আসছেন।
এই ইউনিয়ন পরিষদের কোন কোন গণতন্ত্র নেই। স্বজনপ্রীতি দলীয়করণ, আত্মীয়করন, অন্যায় অনিয়মের গন্ধে ইউনিয়ন পরিষদের ঢোকা যায় না, ঢুকলে বেশি সময় বসা যায় না। আপনি শুনলে আতঙ্কিত হবেন শুধু করোনাকালীন সরকারের বিশেষ বরাদ্ধই নয়, গেল অর্থবছরে এলজিএসপি, এডিবি, টিআর, কাবিখা প্রকল্পসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম রয়েছে। আমরা ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের কোন তথ্য প্রদান করা হয় না এবং বিগত প্রায় ৪ মাস ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভাও আহ্বান করা হয়নি।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অর্জনও কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল নির্বাচনী এলাকার মাননীয় সাংসদ আমাদের নেতা উপাধ্যক্ষ ডঃ আব্দুস শহীদ এমপি মহোদয়ের সুনামকে ম্লান করার জন্য এই ধরনের হাতেগোনা কয়েকজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান ই যথেষ্ট। অন্যায় অনিয়ম দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি নিয়ে সবাই কথা বলে না, তবে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিয়ে বলতে হয়। ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করছি।
এই করোনা কালীন সময়ে আমাদেরকে মানবিক হতে হবে। সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের নীতি নৈতিকতার মধ্যে যে জং ধরেছে তার মান উন্নয়নে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটাই আমরা আশা করছি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন