মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে গ্যাস-পেট্রোল পাম্পে ধর্মঘটের ডাক- জরুরি এ্যাম্বুলেন্সকেও দেয়া হচ্ছে না গ্যাস

মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি ||

মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে সকল সিএনজি ও পেট্রোল পাম্পে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো গাড়িতেই গ্যাস-তেল দেওয়া হচ্ছেনা। এমনকি এ্যাম্বুলেন্সকেও দেয়া হচ্ছে না তেল গ্যাস। 

এতে রোগীবাহী পরিবহনের যাত্রী এবং জরুরি সেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চলাচলকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। পুরো জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। 

জানা যায়, মৌলভীবাজারের কুসুমবাগ গ্যাস-পেট্রোল ফিলিং স্টেশনে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করে। এ ঘটনায় জেলার সকল ফুয়েল ফিলিং স্টেশন ধর্মঘট ডেকে সকল কার্যকম বন্ধ রেখেছে।  ফলে জরুরি সেবাদানকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ রোগীরা তেল-গ্যাস নিতে পারছেন না।  

সরজমিনে রবিবার (২৫জুলাই)  রাত সাড়ে নয়টায় গিয়ে দেখা যায়, মৌ নামীয় এ্যাম্বুলেন্স শহরের কুসুমবাগ এলাকার মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি এন্ড ফুয়েল ফিলিং স্টেশনে সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু বেরিগেড দিয়ে রাখা হয়েছে দেয়া হয়নি গ্যাস। এ্যাম্বুলেন্স চালক নূর মিয়া জানান, অনেক অনুরোধ এবং এ্যাম্বুলেন্স রোগী দেখানোর পরেও আমাকে গ্যাস দেয়া হয়নি। 

স্থানীয়রা জানান, রোববার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল-সিলেট রোডস্থ মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি এন্ড ফুয়েল ফিলিং স্টেশনে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে গ্যাস দেয়ার অভিযোগে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু ফিলিং স্টেশন কর্মচারীরা বলছেন, সিএনজিতে অসুস্থ গর্ভবতী নারী থাকায় গ্যাস দেয়া হয়েছে।

আই নিউজ সূত্রে আরো জানা যায়, গ্যাস স্টেশন কর্মচারী সিকান্দার আলী বলেন, আমি যে সময় গ্যাস দিয়েছিলাম তখন মাত্র দুইটি সিএনজি ছিল। আমরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখে গ্যাস দিয়েছিলাম। একটি সিএনজিতে ক্যান্সার রোগী ছিল। অন্যটিতে গর্ভবতী নারী ছিলেন, যার অবস্থা খু্ব খারাপ ছিল। তাই তাদের গ্যাস দিয়েছিলাম।

হঠাৎ করে একজন ম্যাজিস্ট্রেট  এসে বলেন এগুলো জরুরি রোগী নয়, কেনো গ্যাস দিচ্ছি। এই বলে দুই হাজার টাকা জরিমানা করলেন। আমারাতো ডাক্তার নই যে বুঝব কোনটা জরুরি আর কোনটা জরুরি নয়। আমরা প্রেসক্রিপশনের তারিখ দেখে গ্যাস দিচ্ছি। তিনি গাড়িতে রোগী আছে কিনা সেটা দেখতে রাজি না। 

মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি এন্ড ফুয়েল ফিলিং স্টেশন ম্যানেজার জিতেন্দ্র রায় বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সাবরিনা রহমান আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়িতে গ্যাস-তেল দেয়ার জন্য। আমরা পুলিশ, সাংবাদিক, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি রোগীবাহী সিএনজিতে গ্যাস দিচ্ছি। রোববার (২৫ জুলাই) জরুরি রোগী দেখে গ্যাস দেয়ার জন্য ভেতরে ঢুকানো হয়েছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট এসে বলেন এটা জরুরি রোগী নয়। তাই আমাদের দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন। 

শ্রীমঙ্গলের কালাপুর মেরিগোল্ড ফিলিং স্টেশনের মালিক সৈয়দ সাইফুল আলী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রশাসনের একজন এসে বলেন রোগীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত পরিবহনে গ্যাস-পেট্রল দেওয়া যাবে। আরেকজন এসে জরিমানা করেন। অসুস্থ গর্ভবতী নারীকে বহনকারী  সিএনজিতে গ্যাস দেওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করে দিয়েছেন। এছাড়াও গ্যাস না দিলে সিএনজি চালকরা উৎপাত করে, কেউ কেউ ভাঙচুর করে। তারচেয়ে ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেয়া ভালো। আমরা পুরো জেলা জুড়েই সকল ফুয়েল ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছি।

জেলা শহরের কুসুমবাগ এলাকার মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি এন্ড ফুয়েল ফিলিং স্টেশনের মালিক মনোয়ার আহমেদ রহমান আইনিউজকে বলেন, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে বাকি ৬৩ জেলায় এরকম আইন নেই। শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলায় গ্যাস-পেট্রোল-ফুয়েল দিতে প্রশাসনের মানা। আমরা লিখিত নির্দেশনা চাইলেও সেটা দেয়া হয়নি। ধর্মঘটের বিষয়টি আমরা সিলেট বিভাগীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি। ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকেও জানাব।  

মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি এন্ড ফুয়েল ফিলিং স্টেশন ম্যানেজার জিতেন্দ্র রায় বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম আছে প্রায় ৭০ বছরের। এখানে ৭ জন কর্মচারী রাখলে হয় সেখানে ১৩-১৪ কাজ করছে। আমাদের অযথা জরিমানা করেছেন। তাই আমরা ধর্মঘটে গিয়ে গ্যাস দেওয়া বন্ধ রেখেছি। এখন কোনো গাড়িতেই গ্যাস-তেল দেওয়া হচ্ছে না।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন