জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকার দুই সাংবাদিকের বইয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিলাশি জীবনযাপনের চিত্র উঠে এসেছে।
বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায়। ‘ব্লাড অ্যান্ড ওয়েল: মোহাম্মদ বিন সালমান’স রুথলেস কোয়েস্ট ফর গ্লোবাল পাওয়ার’ শীর্ষক বইটিতে বলা হয়, ব্রাজিল, রাশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ওই ১৫০ জন মডেলকে ভাড়া করা হয়েছিল। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোজা মালদ্বীপে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য থেকে নেয়া হয়েছিল কয়েক ডজন পুরুষকেও। জাহাজে করে তারা যখন ওই বিশেষ দ্বীপে নামে, তখন তাদের যৌনবাহী রোগ আছে কিনা, সেই পরীক্ষাও করা হয়েছিল।
মালদ্বীপের ভিলা নামে একটি ব্যক্তিগত দ্বীপে ১ মাস ধরে চলার কথা ছিলো এই বিশাল উদ্যাম পার্টির।
২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাশবহুল ও ব্যায়বহুল গন্তব্যস্থল হিসেবে নাম এসেছিলো ভিলা নামে ওই দ্বীপের। দ্বিপটিতে ১ মাস থাকার কথা থাকলেও, স্থানীয় একটি পত্রিকা ওই পার্টির বিষয়ে জানতে পারে। এরপরই মডেল সহ লাপাত্তা হয়ে যান সৌদি ক্রাউন প্রিন্স।
বইয়ে দাবি করা হয়, পুরো দ্বিপে ৩০০ কর্মী, ৪৮টি প্রাইভেট প্রাসাদ রয়েছে। প্রাসাদের প্রত্যেকটিতে রয়েছে নিজস্ব বাটলার। পার্টি চলাকালে ফোন নিয়ে ঢুকতে পারেননি কেউ। শুধু কথা বলার জন্য ছিলো পুরোনো নোকিয়া ফোন।
বইয়ে লেখা হয়, ওই মডেলদের যৌনবাহিত রোগ আছে কিনা সেই পরীক্ষা হওয়ার পর, তারা ভিলায় প্রবশের পরই ছোট বিমানে করে দ্বীপে অবতরণ করেন মোহাম্মদ বিন সালমান ও তার বন্ধুরা।
শুধু মডেলই নয়, বিখ্যাত ডিজে আফ্রোজ্যাক ও পিটবুলও ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। ডিজে আফ্রোজ্যাকের পারফরম্যান্স চলাকালে মোহাম্মদ বিন সালমান মঞ্চে উঠেও নাচানাচি করেছিলেন। সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত রাতভর পার্টি চলেছে। দিনে ঘুমাতে যেত অতিথিরা।
বইয়ে আরো দাবি করা হয়, প্রায় ৫০ কোটি ডলার খরচ করে দ্য সিরিন নামে একটি বিলাশবহুল ইয়ট ক্রয় করেন। এই সুপার ইয়টে রয়েছে দুইটি হেলিপ্যাড, একটি সাবমেরিন ডক, সমুদ্রতল দেখার কক্ষ, মুভি থিয়েটার। এই বিশাল ইয়টও রাতের বেলায় পরিণত হতো পার্টির আসর হিসেবে।
এছাড়া ফ্রান্সের ভার্সাইয়ের কাছে ২২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে একটি ফরাসি শ্যাতুও কিনেন তিনি।
বইয়ে মোহাম্মদ বিন সালমানের লোকদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, সমালোচকদের কথা ভুলে যান। তিনি ইতিমধ্যেই নিজের ভিশন প্রমাণ করেছেন। আর তিনি এখনো বাদশাহই হননি। তার লিগ্যাসি হয়তো, ১০-২০ বা ৩০ বছর পর বোঝা যাবে।
খবরে বলা হয়, এই বিলাশিতায় মগ্ন এমন এক ক্রাউন প্রিন্স যার দেশে কিনা কঠোর ইসলামি আইন কার্যকর রয়েছে। যেখানে কিনা যৌনতার কারণে পাথর নিক্ষেপ, ফাঁসি বা শিরশ্ছেদ করার ঘটনাও ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের যুবরাজ ও উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি আল সৌদ রাজদরবারের প্রধান এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। তার পিতা বাদশাহ সালমানের পরেই তার ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়, ২০১৭ সালের ২১ জুন মুহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজের পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং তার স্থলে মুহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ মনোনীত করা হয়। একই সাথে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে নায়েফকে তার সব পদ থেকে অপসারণ করে তার সকল ক্ষমতা মুহাম্মদ বিন সালমানকে দেয়া হয়।
২০১৫ সালের আগে সৌদি আরবের বাইরে খুব কম লোকই প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম শুনেছিল। ওই বছর তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি বাদশাহর সিংহাসনে আরোহণ করেন। সেই থেকে নানা তৎপরতার মধ্য দিয়ে ৩১ বছর বয়সী প্রিন্স বিন সালমান বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তেলনির্ভর দেশটিতে ব্যাপক আর্থসামাজিক পরিবর্তনের পরিকল্পনা (ভিশন ২০৩০) বাস্তবায়নে তৎপরতা শুরু করেছেন তিনি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন