আমেরিকা কি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র হবে ?--মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে  ||

নাটকীয় কিছু না ঘটলে আগামী ৩ নভেম্বর হতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ লড়াইয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হচ্ছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জো বাইডেন। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যস্ততাও বাড়ছে। কার সমর্থন বেশি, কার কম তা নিয়ে মেতে উঠছে সবাই। জরিপের ফলাফলে শুরু থেকেই এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেন। এখনো সেই ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই জরিপের ফল কি বাস্তবে রূপ নেবে? নাকি গত নির্বাচনের মতো চূড়ান্ত ফলাফলে জরিপকে ডাহা মিথ্যা প্রমাণ করে ট্রাম্পই হবেন বিজয়ী? 

২০১৬ নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। দুজনের মধ্যে পার্থক্যটা এতই বেশি ছিল যে, ট্রাম্প কত বড় ব্যবধানে হারবেন সেই হিসেব কষছিল সবাই। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলে এর উল্টোটাই ঘটেছে। এবারও কি তেমন কিছুই হবে? যদি ট্রাম্প জিতেই যান তাহলে কি তিনি আমেরিকাকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করবেন?
জরিপ মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা কতটা : ২০১৬ সালের জরিপে পিছিয়ে থেকেও ট্রাম্প নির্বাচনে জিতেছিলেন। এজন্য জরিপের উপরে অনেকেরই অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তবে একটা বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, বেশিরভাগ জরিপ হিলারি ক্লিনটনকে এগিয়ে রেখেছিল মানেই তারা ভুল করেছে এমনটা নয়। তিনি কিন্তু ঠিকই ট্রাম্পের চেয়ে ২ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশে যেমন আসন ভিত্তিক ফলাফল, যে যত বেশি আসনে জিতবেন চূড়ান্ত জয় তার। 
ঠিক তেমনি যুক্তরাষ্ট্রেও আছে ইলেক্টোরাল কলেজ। ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ২৭৯টি, আর হিলারির পক্ষে গিয়েছিল ২২৮টি।
আরেকটি বিষয় হলো, একজন উদার প্রার্থীকে মানুষ যেভাবে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। কট্টর বা বিতর্কিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। দেখা যায় যে, অনেকেই প্রকাশ্যে বলছেন তারা, উদার প্রার্থীকে ভোট দেবেন। কিন্তু গোপনে তারা কট্টরপন্থি। ভোটের ক্ষেত্রেও তারা কট্টরপন্থি বিতর্কিত প্রার্থীকেই বেছে নেন। এজন্য দেখা যায় যে, অনেক সময়ই জরিপের ফল মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
এসব কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জিতবেন তা জরিপ দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
ট্রাম্প জিতলে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র হবে আমেরিকা : ট্রাম্প যে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী এবং ভীষনভাবে মুসলিমবিদ্বেষী এটা গোপন কিছু নয়। তিনি রাখঢাক ছাড়াই বর্ণবাদী মন্তব্য করেন। সৌজন্যতার তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। কানাডা ও চীনের সঙ্গে তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। ইরানকেও একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণেই প্রশ্ন উঠছে যে, ট্রাম্প যদি আবার ফিরে আসেন, তবে কি তিনি ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠবেন?
এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনেক ক্ষমতাধর এটা সত্য, কিন্তু দেশটির পার্লামেন্ট তথা কংগ্রেস এবং বিচারপতিদের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর দিকে তাকালে মনে হবে প্রেসিডেন্ট আসলে অসহায়। কেননা তার প্রতিটা কাজ পর্যালোচনা করছে কংগ্রেস। সিনেটের অনুমোদন ব্যতীত প্রেসিডেন্ট কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে নিয়োগ পর্যন্ত দিতে পারেন না। আবার অন্য দিকে প্রেসিডেন্ট আইন অনুযায়ী সব কাজ করছেন কিনা তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিচারকরা। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কাজকে অবৈধ ঘোষণা করবেন তারা। যেমন ট্রাম্প পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কয়েকটা মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের উপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। কিন্তু বিচারকরা বলে উঠলেন- ট্রাম্প এমন আদেশ জারি করতে পারেন না, এমন আদেশ জারি করার ক্ষমতা তার নেই। বিচারকরা অবৈধ ঘোষণা করলেন ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে। এসব কারণে ট্রাম্প বিচারকদের ওপর নাখোশ হয়েছিলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ দেশের সংবিধান তাকে সেই ক্ষমতা দেয়নি। এটাই হলো চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বা ক্ষমতার ভারসাম্য। একেই বলা হয় মার্কিন সংবিধানের সৌন্দর্য। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের মতো পাগলাটে সরকার প্রধানের স্বৈরাচারী বা ফ্যাঁসিবাদী হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন