জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এক বিধায়ককে প্রকাশ্যে চড় মেরে খবরের শিরোনাম হন আইপিএস কর্মকর্তা সোনিয়া নারং। ২০০৬ সালের এ ঘটনায় সারা ভারতব্যাপী আলোচনায় আসেন তিনি। শুধু তাই নয়, কর্নাটকের এক মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে চ্যালেঞ্জও করেছিলেন এই কর্মকর্তা। এ জন্য তাকে ডাকা হয় ‘আয়রন লেডি’ নামে।
ঘটনাটি শুরু হয় কংগ্রেস বিরোধী একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ নিয়ে। সোনিয়া যে বিধায়ককে চড় মেরেছিলেন তার নাম রেণুকাচার্য। এখন তিনি কর্নাটকের মন্ত্রী। ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে চেকপোস্ট ছিল পুলিশের। রেণুকাচার্য রাস্তায় নেমে পড়লে পুলিশ তাকে রাস্তা ছাড়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু রেনুকাচার্য কোনো কথা কানে তুলছিলেন না। কথা না শোনায় তাকে চড় মারেন আইপিএস কর্মকর্তা সোনিয়া নারং। গালিগালাজ করার অভিযোগে রেনুকাচার্যকে গ্রেপ্তারও করেন তিনি।
২০০৬ সালের চড়ের ঘটনাটি যখন ঘটে সোনিয়া তখন কর্নাটকের দেবাঙ্গেরের পুলিশ সুপার। বিধায়ককে চড় মারার ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের একাংশ তার বিরুদ্ধে লেগেছিল। রেণুকাচার্য নিজেও তার পেছনে লেগেছিলেন, যাতে করে সোনিয়াকে বদলি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বরাবর স্পষ্টভাষী সোনিয়া তার নিজের অবস্থান শক্ত রেখেছিলেন। একই বছর পুলিশ সুপারের দায়িত্ব দিয়ে সোনিয়াকে পাঠানো হয় সাম্প্রদায়িক সমস্যাসঙ্কুল বেলগামে। তিনি ছিলেন সেখানকার প্রথম নারী পুলিশ। তার বিভিন্ন অভিযানের কারণে এলাকা ছেড়েছিল বহু অপরাধী।
২০১৩ সালে কর্নাটকের কংগ্রেসের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ১৬ হাজার কোটি টাকার খনি কেলেঙ্কারিতে সোনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। এ ঘটনায় সোনিয়া তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বসেন।
এক বিবৃতিতে তিনি লেখেন- ‘খবরের কাগজ মারফৎ জানতে পেরেছি মুখ্যমন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। যে খনি কেলেঙ্কারির দায় তিনি আমার ওপর চাপিয়েছেন তা সত্য নয়। যে সমস্ত এলাকায় ওই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো দিন আমি দায়িত্বে ছিলামই না। তাহলে আমার নাম আসছে কোথা থেকে। এমনকি আমি খনি দপ্তরের দায়িত্বেও ছিলাম না কখনো। তবে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের বিরুদ্ধে আমি আইনি পথেই লড়তে চাই। কারণ আমি জানি আমি সৎ।’
সোনিয়ার এই উত্তরে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন সিদ্দারামাইয়া। আইপিএস হিসেবে সোনিয়ার কর্মজীবনের আরেকটি পালক লোকায়ুক্ত অফিসের দুর্নীতি ফাঁস করে দেওয়া। দুর্নীতি দমনের জন্য তৈরি লোকায়ুক্তের অন্দরেই চলছিল দুর্নীতি। সোনিয়ার বদৌলতে তা প্রকাশ্যে আসে। দায়িত্বে থাকা সাবেক বিচারপতি ওয়াই ভাস্কর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। গ্রেপ্তার হন তার ছেলে ওয়াই অশ্বিনও।
এ ঘটনার সময় সোনিয়া বেঙ্গালুরুর দক্ষিণ শাখার ডেপুটি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বেঙ্গালুরুর ইতিহাসে তিনিই দ্বিতীয় নারী পুলিশ কমকর্তা, যাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
চড়ের ঘটনার আগে পুলিশের এই কর্মকর্তা আলোচনায় আসেন ২০০৪ সালে। সে সময় বয়স পঁচিশের এই আইপিএস কর্মকর্তাকে পাঠানো হয় অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য কুখ্যাত কর্নাটকের গুলবর্গা জেলায়। সেখানে তাকে ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সাবলীলভাবে ভোট পরিচালনা করেন সোনিয়া। কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। শক্ত মানসিকতা নিয়ে সেটি উৎরে গেছেন এই নারী পুলিশ। গুলবার্গে সোনিয়ার সুষ্ঠু ভোট পরিচালনা পুলিশ মহলের প্রশংসা পায়।
চণ্ডীগড়ের মেয়ে সোনিয়াকে নিয়ে পুলিশ মহলে বা তার বাইরে নানা খবর রয়েছে। যদিও সবগুলোই তার সাহসিকতা নিয়ে। সোনিয়ার আদর্শ তার বাবা পুলিশের সাবেক ডেপুটি সুপার এ এন নারং। তাকে দেখেই সোনিয়ার পুলিশ হওয়া। পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে শীর্ষ স্থান পেয়েছিলেন। পরে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে পড়ে স্বর্ণ পদক পেয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন