জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে নিরপরাধ বলে দাবি করেছেন আদালতে। শুক্রবার (৩০ জুলাই) ৭টা ৫০ মিনিটে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়া হলে বিচারকে কাছে তিনি এ দাবি করেন। এ ছাড়া নিজেকে সরকার ও আওয়ামী লীগের লোক বলেও পরিচয় দেন হেলেনা।
ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী তার কাছে জানতে চান, ‘আপনার কিছু বলার আছে?’ জবাবে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি সরকারের লোক। আমি আওয়ামী লীগের লোক। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৫টি দেশ ভ্রমণ করেছি। আমি কোনো অপরাধ করিনি। তার প্রমাণ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বহিষ্কার হইনি। আমি এখনও দলের সঙ্গে আছি।’
রাজধানীর গুলশান থানার মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
গত কয়েক বছর ধরে আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা হেলেনা জাহাঙ্গীর। সম্প্রতি ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের পোস্টারকে ঘিরে বিতর্কিত হন।এর জের ধরে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদও খোয়ান তিনি।রোববার তাকে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ফেসবুকে বেশ সক্রিয় হেলেনা জাহাঙ্গীর মূলত একজন নারী উদ্যোক্তা হলেও কিছুদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ আসনের উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েও আলোচনায় আসে।
হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক। এ ছাড়া তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সক্রিয় সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর।
এদিকে বিতর্কিত সেফুদার সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠতা ও আর্থিক লেনদেন ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব।শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অস্ট্রিয়া প্রবাসী আলোচিত সেফুদার নাতনি হিসেবে সম্বোধন করতেন। সেফুদার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। করতেন লেনদেনও।
র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১-এর অভিযানে ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার ৩৬ নং রোডের ৫ নং বাড়ি ‘জেনেটিক রিচমন্ড’-এ অভিযান পরিচালনার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়। অভিযানে জব্দ করা হয় ১৯ বোতল বিদেশি মদ, ১টি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ১টি হরিণের চামড়া, ২টি মোবাইল ফোন, ১৯টি চেকবই ও বিদেশি মুদ্রা, ২টি ওয়াকিটকি সেট এবং জুয়া (ক্যাসিনো) খেলার সরঞ্জাম ৪৫৬টি চিপস। পরবর্তী সমযে মধ্যরাতে তার জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশনেও অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী হয়ে সিআইপির (কমার্শিয়ালি ইমপর্টেন্ট পারসন) স্বীকৃতি পাওয়া এই ব্যবসায়ী সম্প্রতি তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠেন ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের প্রচার চালাতে গিয়ে। আওয়ামী লীগের এই নামে কোনো সংগঠন নেই। সে জন্য তিনি এই সংগঠনকে সামনে নিয়ে আসার পর ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পদ হারান হেলেনা। ক্ষমতাসীন দলের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যপদ ছাড়াও কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে। ওই ঘটনায় পিছুটান দেন হেলেনা। বলেন, তিনি ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে এই সংগঠনের কেউ না। তাকে সম্প্রতি সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন