গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করতেন হেলেনা: র‌্যাব

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//

আওয়ামী লীগের উপকমিটির পদ হারানোর পর গ্রেপ্তার ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। বাহিনীটি জানায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রথমে সখ্য গড়ে পরবর্তী সময়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন হেলেনা। এরপর আদায় করতেন টাকা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

শনিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে উত্তরা র‌্যাব সদরদপ্তরে হেলেনা জাহাঙ্গীর সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক।

 

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হেলেনা সুনির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির জন্য থেমে থাকেননি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে তার। উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যাকেই প্রয়োজন হয়েছে তাকে তিনি ঘায়েল করেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন এবং সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছেন শুধু উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। আমাদের মামলার কারণ এটাই। তিনি রাষ্ট্রের ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যা তাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, জনগণের মধ্যেও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন এই মামলাটি র‌্যাব তদন্ত করবে তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে আমরা আবেদন করব। তবে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

হেলেনা জাহাঙ্গীর গত দুই বছরে বিভিন্ন মাধ্যম এবং টেলিভিশনে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আদায় করেছেন দাবি করে মঈন বলেন, ‘টেলিভিশনে চাকরি দেওয়ার নামে, এজেন্সি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করতেন। কারও কাছ থেকে দশ হাজার কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা, আবার কারও কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। কী কারণে টাকা নিয়েছেন এবং কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে- এ বিষয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এসবের দায় অফিস স্টাফদের ওপর চাপিয়েছেন তিনি। বাসায় এবং অফিস থেকে যে পরিমাণ ভাউচার পাওয়া গেছে তা এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জয়যাত্রা টেলিভিশনের আইডি কার্ড ব্যবহার করে অনেক প্রতিনিধিও এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

মঈন বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর আমাদেরকে জানিয়েছেন, তার ১৫ থেকে ১৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তিনি জড়িত। বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি কিংবা ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করা টাকাগুলো তিনি ফাউন্ডেশনে কাজে লাগাতেন। সুনামগঞ্জে তিনি ত্রাণ বিতরণ করায় স্থানীয়রা তাকে পল্লীমাতা উপাধি দিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে অনেক টাকা এনেছেন। এগুলো কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।’

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘ফ্ল্যাট কিংবা গাড়ির সংখ্যা কতগুলো সে বিষয়ে প্রকৃত কোনো তথ্য আমাদের দিতে পারেননি হেলেনা। কখনও ছয়টি গাড়ি, কখনও আটটি গাড়ির কথা উল্লেখ করেন। এসব বিষয়ে যারা তদন্ত করবেন তারা খতিয়ে দেখবেন। তার আয়ের উৎস সম্পর্কে সিআইডি কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

খন্দকার মঈন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীর র‌্যাবকে আরও জানান, সম্প্রতি তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে সমাজসেবক হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় ছিলেন। বেশ কয়েকবার তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তিনি শুধু নিজের অবস্থান উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এধরনের অপপ্রয়াস অপতৎপরতা চালিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন দেশের মানুষ তাকে চিনবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি বক্তব্য উল্লেখ করে খন্দকার আল আমিন বলেন, ‘বক্তব্য খুবই উদ্বেগজনক। কাউকে এভাবে হেয় প্রতিপন্নভাবে কথা বলা সমীচীন নয়।’

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় গুলশানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অভিযান শুরু হয়। চার ঘণ্টার অভিযান শেষে তাকে আটক করে র্যা ব সদরদপ্তরে নেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় বিদেশি মদ, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, চাকু, ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন অবৈধ সরঞ্জাম। এরপর রাত দেড়টা থেকে চারটা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বরের এ ব্লকের তিন নম্বর রোডে জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যা ব। অভিযানে বিভিন্ন অবৈধ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

ইতিমধ্যে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। একটি মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন