জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ মোকাবিলায় চলমান ‘লকডাউন’ আগামী ১০ আগস্টের পর আর বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। মানুষের জীবন যাত্রা ও দেশের অর্থনীতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার জনসাধারণের প্রত্যেকের স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য মানুষকে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় আনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ বছর মার্চের শেষ দিকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন দফায় বিধি-নিষেধ ঘোষণা করা হয়। প্রথমে এপ্রিলে বিধি-নিষেধ দেওয়ার পর সংক্রমণ কিছু কমে এলে তা শিথিল করে তুলে দেওয়া হয়। ফের পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। জুনের শেষ দিকে এসে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সরকার ১ জুলাই থেকে ‘কঠোর বিধি-নিষেধ’ ঘোষণা করে।
টানা ১৪ দিন চলার পর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আট দিন তা তুলে নেওয়া হয়। এরপর ২৩ জুলাই থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত বিধি-নিষেধ জারি করা হয়। চলমান এই বিধি-নিষেধ ১০ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘদিন এই মানুষের চলাফেরায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা থাকলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে রেকর্ড ২৬৪ জন মারা গেছেন।
এর আগে গত ২৮ জুলাই আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলো। এর আগের দিন ২৭ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় ২৫৮ জন মারা যান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শনাক্তের হার শতকরা ৫ ভাগের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ধরা যায়। সেখানে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশে শনাক্তের হার ৩০ এর ওপরে বা কাছাকাছি অবস্থান করছে।
সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন বিধি-নিষেধ চলতে থাকায় দেশের অর্থনীতির ওপর বড় চাপ তৈরি হতে যাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে সরকার ইতোমধ্যে গার্মেন্টসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে মানুষের জীবিকার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে দিন মজুর, প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল যারা, পরিবহন শ্রমিকসহ বিরাট সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। আয়ের পথ বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই।
আগামী ১০ আগস্টের পর বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া হলে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে বিষয়টি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। ঝুঁকি থাকলেও সরকার এই চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে সে ক্ষেত্রে পুরোপুরি ছেড়ে না দিয়ে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হবে। এর মধ্যে কর্মস্থলে স্বাস্থ্যবিধির মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া, মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা, গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখাসহ বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হতে পারে।
এর পাশাপাশি স্থায়ী সমাধানের জন্য ভ্যাকসিনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই বছরের মধ্যে ৮০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যায় কিন সে বিষয়টির ওপর সরকারের নীতিনির্ধারকরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, জীবন বাঁচাতে হবে, আবার জীবিকাও চালাতে হবে। সারা পৃথিবীই এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। আমাদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে। আশা করছি ১০ জুলাইয়ের মধ্যে সংক্রমণ কমে আসবে। আর আমরা টিকার ওপর জোর দিচ্ছি।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহুমদ চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ইউনিযন পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। যতো বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে ততো সংক্রমণ কমবে। তাছাড়া লকডাউনের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে একটা বার্তা গেছে যে, এটা একটা কঠিন বিষয়, অবহেলা করার বিষয় না।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে মানুষের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে লকডাউন শিথিল করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন