জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
অবশেষে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক চেং লিকে আটকের কথা স্বীকার করেছে চীন। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের উপস্থাপক অস্ট্রেলীয় নাগরিকককে চীনের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্নকারী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১৪ আগস্ট থেকে তিনি আটক রয়েছেন। এর আগে বেইজিং-ক্যানবেরার প্রায় পাঁচদিনের কূটনৈতিক টানাপোড়েন শেষে চীনে থাকা অস্ট্রেলিয়ার শেষ দুই সাংবাদিক সিডনির উদ্দেশে চীন ছাড়েন।
এই দুই সাংবাদিক হলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) বিল বার্টলস ও অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউয়ের (এএফআর) মাইক স্মিথ। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে চীন ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
গত কয়েক বছরে চীন-অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক ক্রমেই অবনতি ঘটছে। অতীতে চীনে বসবাসরত অস্ট্রেলীয়দের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছিল ক্যানবেরা। কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি তদন্তে ক্যানবেরা সমর্থন জানানোর পর অস্ট্রেলিয়া-চীনের সম্পর্ক চরম খারাপ আকার ধারণ করে।
বেইজিংয়ে বসবাসকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক চেং লি ব্যাপক প্রভাবশালী একজন সাংবাদিক। চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিজিটিএনের ব্যবসা-বাণিজ্য বিটে কাজ করেন তিনি।
গত আগস্টে হঠাৎ টেলিভিশন থেকে উধাও হয়ে যান তিনি। তারপর থেকে বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, অজ্ঞাত একটি স্থানে আবাসিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে তাকে।
সেই সময় তার বিরুদ্ধে কোনও ধরনের অভিযোগ আনা হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝ্যাও লিজিয়ান বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় চেং লিকে আটকে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ অপরিহার্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে একটি তদন্ত চলমান রয়েছে।
তবে সিজিটিএনের এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে সেবিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য দেননি ঝ্যাও লিজিয়ান। এছাড়া চেং লি কী ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত সেবিষয়টিও পরিষ্কার নয়। কিন্তু গত আগস্টে যখন তাকে আটক করা হয়, সেই সময় অনেকে ধারণা করেছিলেন- অস্ট্রেলীয় নাগরিক হওয়ার কারণেই চীনা কর্তৃপক্ষের রোষাণলে পড়েছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ বলছে, চীনা কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার চীন ছেড়েছেন মাইক স্মিথ ও বিল বার্টলস। তাদের দু'জনকেই চেং লি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এবিসি বলছে, গত সপ্তাহে অস্ট্রেলীয় কূটনীতিকরা বার্টলসকে চীন ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরে গত বৃহস্পতিবার তিনি বেইজিং ছাড়তে একটি বিমানের ফ্লাইটে টিকেট নিশ্চিত করেন।
কিন্তু বুধবার মধ্যরাতে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে; সেইদিন নিজের বাসায় বন্ধুদের নিয়ে একটি বিদায়ী পার্টির আয়োজন করেছিলেন বার্টলস। সেই পার্টিতে চীনের অন্তত সাতজন পুলিশ সদস্য হঠাৎ হাজির হন। পুলিশ কর্মকর্তারা বার্টলসকে জানান, তিনি দেশ ছাড়তে পারবেন না। তাকে পরবর্তীতে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সেই রাতে জানানো হয়।
পরে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অস্ট্রেলীয় কনস্যুলার অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে সেখান থেকে তাকে অস্ট্রেলীয় দূতাবাসে নিয়ে যান কর্মকর্তারা। দূতাবাসে চারদিন কাটানোর পর মঙ্গলবার সিডনিতে পৌঁছান তিনি।
চীনে কর্মরত বিদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন ফরেইন করেসপনডেন্টস ক্লাব অব চায়না বলছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীন অন্তত ১৭ জন বিদেশি সাংবাদিককে দেশটি থেকে বহিষ্কার করেছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/ এনএন
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন