বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল স্মরণে লন্ডন হাই কমিশনে ‘ উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অগ্রদূত’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন

জিবি নিউজ || লন্ডন, ৬ আগস্ট ২০২১  ||

বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন আয়োজিত এক স্মারক অনুষ্ঠানে ‘উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অগ্রদূত’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ  জাহিদ আহসান রাসেল, এম.পি ।


যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে “ঝযধযববফ ঈধঢ়ঃধরহ ঝযবরশয কধসধষ: জবসবসনবৎরহম ধ ঠধষরধহঃ ঋৎববফড়স ঋরমযঃবৎ” শীর্ষক এই স্মারক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, শেখ কামালের সহপাঠি ও ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সহযোদ্ধারা বাঙ্গালি জাতির অদম্য তারুণ্যের শ্বাশত প্রতীক শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি যুব  ও  ক্রীড়া  প্রতিমন্ত্রী  মোঃ  জাহিদ  আহসান  রাসেল স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া উন্নয়নে শহীদ শেখ কামালের অনন্য অবদান স্মরণ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যার মধ্যে রয়েছে শেখ কামালের নামে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মানের ষ্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং তাঁর ওপর তথ্যচিত্র ও বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশ।” তিনি বলেন, “আজ বিশেষ করে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশ যে মর্যাদা অর্জন করে অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলেছে তার মূল ভিত্তি শেখ কামালই তৈরি করেছেন।” 
স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল বাঙালি জাতির জীবনে এক মৃত্যুঞ্জয়ী তারুণ্যের দূত। ক্ষণজন্মা এ চির তরুণের জীবনাদর্শ বর্তমান প্রজন্মের যুব ও তরুণ সমাজের জন্য সার্বজনীন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।”
হাইকমিশনার বলেন, “স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষতঃ ফুটবল, ক্রিকেট এবং বাস্কেটবলে তিনি অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি সুদক্ষ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে চির ভাস্বর হয়ে থাকবেন। পাশাপাশি তিনি সদ্য স্বাধীন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য গ্রæপ থিয়েটার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দেশের প্রথম ব্যান্ড-সঙ্গীত দল ‘স্পন্দন’ প্রতিষ্ঠা করে বাংলা সঙ্গীতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দ্বার উন্মোচন করেছেন।”
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, “তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন এবং সুবিস্তৃত কর্ম ও অপরিসীম অবদান সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে বিশেষতঃ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণদের অবহিত ও আরো সচেতন করার জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন এক বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে, যা ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।”
হাইকমিশনার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে এই বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখার সাদর আমণন্ত্রণ জানান। প্রদর্শনী সোমবার থেকে শুক্রবার প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা খাকবে।


স্মারক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রথিতযশা সাংবাদিক ও মহান একুশের অমর সংগীতের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী শেখ কামালকে ‘ম্যান অব দ্য হাউজ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র শেখ কামাল ছিলেন বঙ্গমাতার প্রধান অবলম্বন। তিনি পরিবারের অন্যতম অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে সবার দেখা-শোনা করতেন। জাতির  পিতার সন্তান হয়েও তাঁর মধ্যে কোনো অহংকার ছিলো না, বরং তাঁর চলাফেরা ছিলো একজন সাধারণ মানুষের মতো।       
অনুষ্ঠানে ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ  বিজ্ঞান  বিভাগে শেখ কামালের কয়েকজন সহপাঠী ও ঘনিষ্ট বন্ধু এবং আবাহনী ক্রীড়াচক্র ও মুক্তিযুদ্ধের সতীর্থরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শেখ কামালের অসাধারণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তারা একজন মননশীল ও জনদরদি মানুষ হিসেবে শেখ কামাল কীভাবে সবসময় বস্তিবাসী, রিক্সাচালক, গরীব ছাত্রছাত্রীসহ অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই আবেগঘন স্মৃতি রোমত্থন করেন। এদের মধ্যে ছিলেন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সাংসদ হারুনুর রশিদ এবং শেখ কামালের সহপাঠী ও ঘনিষ্ট বন্ধু ড. হাবিবুল হক খন্দকার, তৌরিদ হোসেন বাদল ও ড. মেহরাজ জাহান।
হারুনুর রশিদ শেখ কামালকে বাংলাদেশের  আধুনিক  ক্রীড়াঙ্গনের  রূপকার হিসেবে অভিহিত করে বলেন, সদ্য  স্বাধীন বাংলাদেশে তরুণ সমাজকে সংগঠিত করে তিনি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক-সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় উদ্যোগী হন এবং ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আবাহনী ক্রীড়াচক্র, যা আজকের আবাহনী লিমিটেড।
যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সিনিয়র ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী শেখ কামালের সতীর্থ মো: আবদুর রাকীব বক্তব্য রাখেন। তাঁরা বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, খেলাধূলা ও সামাজিক কর্মকান্ডে শহীদ শেখ কামালের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করেন। 
অনুষ্ঠানের  শুরুতে  শহীদ  ক্যাপ্টেন  শেখ  কামাল  ও  জাতির  পিতা  বঙ্গবন্ধুসহ  ১৫  আগস্ট  ১৯৭৫-এর শহীদদের প্রতি গভীর  শ্রদ্ধা  জানিয়ে  ও  তাঁদের  আত্মার  মাগফেরাত  কামনা  করে  বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। এরপর শেখ কামালের জীবনের ওপর যুব ও  ক্রীড়া  মন্ত্রণালয় নির্মিত একটি  প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শণ করা  হয়।  
স্মারক অনুষ্ঠানে  যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশ থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ তরুণ প্রজন্মের অনেক বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করে শেখ কামালের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। এ অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন। 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন