নজরুল ইসলাম ll
গত কয়েকদিন ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ইস্যুতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। দেশের জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজ এই বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন। আমিও আমার ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করার পাঁয়তারা করছিলাম। দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে ছিলাম যদি আবার একান্ত ব্যাক্তিগত মতামত পরামর্শ পরীমনির পক্ষে যায় আপনারা কি আবার অন্য কিছু মনে করেন! যতটুকু শুনেছি পরীমনি এযাবত লন্ডনে আসেন নাই। শ্রদ্ধা সাংবাদিক আব্দুল গাফফার সহ সমাজের বিশিষ্টজনেরা অত্যন্ত ভাল পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে এক হাতে তালি হয়না। প্রত্যেকটি ঘটনা রটনা যখন সম্পাদিত হয় আমাদের খুঁজতে হবে পিছনের ঘটনা।
অভিনেত্রী পরীমনির বাসায় মদ বা মাদক দ্রব্য ছাড়া বাকি প্রত্যেকটি অভিযোগ আমাকে ইঙ্গিত করে আমাদের সামাজিক অধঃপতন ও ইসলামিক রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক জীবন বিধান। এই অভিনেত্রীর দ্বারা সম্পাদিত নির্দিষ্ট অপরাধ প্রবণতা সম্পৃক্ততা দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হোক সেটা আমি চাই। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে এই বিষয়টাকে নিয়ে দেশে ভয়াবহ করোনা মহামারীকালীন সময়ে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হচ্ছে !! কোট-কাচারি হাটে, ঘাটে, মাঠে, ময়দানে কেহ করোনা বিধি নিষেধ মেনে চলছেন না। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ যা অনভিপ্রেত।
যাই হোক, বাসায় মদ রাখা কিংবা মদের বার সাজিয়ে রাখা মদ্যপান করা- এসব হচ্ছে আমাদের সামাজিক অবক্ষয় অধঃপতন ও অতি আধুনিকতার বহিঃপ্রকাশ।
পরীমনি সমাচারে আমাদের আমাদের সমাজ ব্যবস্থাপনার যে চিত্র ভেসে উঠেছে সেখানে আমাদের অধঃপতন আর অবক্ষয়ের স্কেল উন্মোচিত হয়েছে। এটা নতুন কিছু না তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পরীমনির মাধ্যমে তা আবারো ভেসে উঠেছে। বিষয়টি Covid মহামারীর চাইতেও আরো বেশি গুরুত্বারোপ করেছে- যা হাস্যকর।
সরকারি অফিসার/ কর্মকর্তা কর্মচারী কেহ কারো সাথে প্রেম ভালোবাসা রোমান্সে জড়াতে পারবে না - এ রকম বিধান আছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারী বা যে কোনো সচেতন নাগরিক বিবাহ বন্ধনে চুক্তিবদ্ধ আছেন এমনসব হাবা-বোবা, কাণ্ডজ্ঞানহীন, নির্লজ্জ প্রেমিকদের দ্বারা সম্পাদিত লাইলি-মজনু সমাচার আমাদের পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক সম্প্রীতিকে ভেঙে চুরমার করেছে। বিষয়টি উদ্বেগের !!
পরকীয়া হচ্ছে অনেকটা কানা মাছি ভনভন। এইসব অপরাধ আইন প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। সম্ভব তখনই, যখন আমরা আমাদের নৈতিক এবং পারিবারিক শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করব। সত্য-মিথ্যা পাওয়া কঠিন, তবে সামাজিক মাধ্যম ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এমন খবর সয়লাব, যে টাকার বিনিময়ে অনেকেই পরীমনিকে নিয়ে দেশের বাহিরে বুর্জ খলিফা ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়ে আমোদ-ফুর্তি করেছেন। এখানে পরীমনিকে যে বা যারা নিয়ে গেলেন তাদের মধ্যকার দুই পক্ষের মধ্যে যদি অন্তত এক পক্ষের নৈতিক এবং পারিবারিক শিক্ষা থাকতো তাহলে এই ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পাদিত হতো না। তাই বলছিলাম আমাদের নৈতিক পারিবারিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এইসব ক্রিয়াকর্ম পুলিশ রিমান্ডের বিষয় হতে পারে না।
ডিবি কর্মকর্তা সাকলাইনের মত একজন মেধাবী বিবাহিত অফিসার ভুলেই গিয়েছেন বিবাহ বা বিয়ের যে একটা বাইন্ডিং নীতি আছে। অন্যদের কাছ থেকে আপনি কি আশা করবেন। বিবাহ বা বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতিভেদে বিবাহের সংজ্ঞার তারতম্য থাকলেও বিয়ে দুজন ব্যক্তির মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক মিলন এবং সামাজিক ও আইনি চুক্তি যা তাদের জীবনকে আইনগত, অর্থনৈতিক এবং আবেগগতভাবে একত্রিত করে। যা সাকলাইনের মত একজন মেধাবী অফিসার উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হয়েছেন।
পরিমনির বাসায় কারা যাতায়াত করতো তাদের তালিকা করার জন্য অনেকেই পরামর্শ দিয়েছেন।
আচ্ছা, তালিকা করে কি হবে? কারো বাসায় যাওয়া কি ফৌজদারি অপরাধ? কে কার বাসায় গেল কি খেলো এইসব দেখভাল করার দায়িত্ব কি সরকারের? যদি বাসা বা বাড়ি মালিক কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করেন তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষের।
আমাদের নীতি-নৈতিকতা চরিত্রের এমন অধঃপতন হয়েছে যে, ইহাকে আবারো যথাযথ স্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসা অনেকটা কুকুরের লেজ ঘি দিয়ে সোজা করার একটি অপপ্রয়াস মাত্র। পরীমনির কাছ থেকে সমাজ যা আশা করছেন তা অবান্তর না। সমাজের জনপ্রিয় মানুষের কাছ থেকে আমাদের আশা প্রত্যাশা অনেক বেশি। পরীমনির সিনেমার লোক তিনি ইচ্ছে করলেই নিজ পেশায় নিজেকে মহান সৃষ্টিশীল সৃজনশীল প্রকাশও প্রমাণ করতে পারতেন। তিনি রাস্তা বদলিয়ে কল গার্ল/এসকট গার্ল বা টাকার বিনিময়ে তার শরীরকে বিক্রি করেন ইতিমধ্যে নামের সাথে এমন বিশেষণ যুক্ত করেছেন। তাই তার খ্যাতি যশ হবে কর্ম অনুসারে। আমি মনে করি এই নায়িকাকে নিয়ে আর ধস্তাধস্তি না করে তার অপরাধ প্রবণতাকে আইডেন্টিফাই করে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।
পরিমনির সমাচারের যা হয়েছে বা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে সমাজের কিছু নষ্টলোক সংঘবদ্ধভাবে অসামাজিক ক্রিয়াকর্ম শুরু করেছিলেন। কোথায় স্বার্থসংশ্লিষ্টতায় আঘাত লেগেছে তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে, থলের বিড়াল বের হয়ে আসছে। আমাদের সমাজের মুখোশধারী লোকদের যে সামাজিক অধঃপতন হয়েছে এর নৈতিক মানোন্নয়নে আমাদের কাজ করতে হবে। সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে হলে আইনের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন।
লেখক: জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন। মেম্বার, দ্য ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন